জি৭, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অস্ট্রেলিয়ার বেঁধে দেয়া রাশিয়ার তেলের মূল্য সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে। এর পরই বিশ্ববাজরে জ্বালানি তেলের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সোমবার সকালের দিকে দেখা যায়, তেলের দাম বেড়েছে দুই শতাংশ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস তাদের উৎপাদন লক্ষমাত্রা একই রকম রাখছে। অন্যদিকে চীনে করোনার বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করায় তেলের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণেই জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে।
সোমবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেল প্রতি ৭২ সেন্ট বা শূন্য দশমিক আট শতাংশ বেড়ে ৮৬ দশমিক ২৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের মূল্য ব্যারেলপ্রতি ৭০ সেন্ট বা শূন্য দশমিক নয় শতাংশ বেড়ে ৮০ দশমিক ৬৮ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস। রাশিয়াসহ ২৩টি দেশ নিয়ে গঠিত হওয়ায় ওপেক প্লাস চলতি বছরের অক্টোবর থেকে আগমী বছর নভেম্বর পর্যন্ত দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল তেল কম উৎপাদনের ঘোষণা দেয়। তারা এখনো এই নীতিতে অটল রয়েছে।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছে, ওপেক প্লাস যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা প্রত্যাশিত ছিল। কারণ তারা রাশিয়ার তেলের ওপর পশ্চিমাদের পদক্ষেপের নজর রাখছিল।
ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংকের কমোডিটি রিসার্চের প্রধান ব্যাডেন মুর বলেছেন, ওপেক উৎপাদন একই রকম রাখলেও বাজারে তারা একটা ভারসাম্য রাখবে। অন্যদিকে, উড ম্যাকেঞ্জির ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান-লুইস হিটল বলেছেন, রুশ তেলের বিকল্প হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের তেলের সন্ধান করতে হবে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে সঙ্গতি রেখে শুক্রবার রাশিয়ান তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলারে বেঁধে দিয়েছে জি৭ এবং অস্ট্রেলিয়া। মূলত, ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যয় করার জন্য রাশিয়ার আর্থিক উৎস সীমিত করে দেয়ার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিন হুশিয়ারি দিয়ে বলেছে, রাশিয়া তার তেলের দামের সীমা মানবে না এবং কীভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানাবে তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, তেলের মূল্য নির্ধারণের জন্য জবাব দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে।
বার্তা সংস্থা আরআইএ তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, পশ্চিমাদের তেলের বেঁধে দেয়া দাম মানবে না রাশিয়া। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া এই চুক্তির দ্রুত বিশ্লেষণ করবে এবং এর পরে প্রতিক্রিয়া জানাবে।
এদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ক্রেমলিনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সর্তক করেছেন, তেলের মূল্য সীমা কার্যকর করা দেশগুলোতে তেল সরবরাহ করবে না রাশিয়া।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে ভিয়েনায় ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন্স মস্কোর রাষ্ট্রদূত মিখাইল উলিয়ানভ রাশিয়ার এই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের শুরু থেকেই ইউরোপকে রাশিয়ান তেল ছাড়েই বাঁচতে হবে।
উল্লেখ্য, নতুন দাম নিধারনের ফলে জোটগুলোর বাইরের দেশগুলোতে সমুদ্রপথে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানি অনুমোদন করবে জি৭ ও ইইউ। তবে বেঁধে দেয়া মূল্যের বেশিতে তেল কেনা হলে তা পরিবহনের অনুমতি পারবে না শিপিং কোম্পানিগুলো এবং যেসব জাহাজ রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল পরিবহন করবে, তাদের ক্ষেত্রে বিমা প্রযোজ্য হবে না।