আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদপত্রের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার আহবান জানিয়ে বলেছেন, আমাদের মূল এজেন্ডা এদেশের মানুষের জান মালের নিরাপত্তা দেয়া। আমরা সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আপনারা আমাদের সহায়তা করুন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং গণতন্ত্র চর্চা করে।
বুধবার ঢাকা ক্লাবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় আয়োজিত বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, পচাত্তরের পর দেশে রাজনৈতিক দেয়াল তৈরি করা হয়েছিল। ইনডেমনিটি জারি করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলুন্ঠিত করা হয়েছিল। সাত মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয়। আমরা জাতীয় দিবসে যেতে পারিনি। বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে বাংলা ভাই সৃষ্টি করা হয়েছিল। সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হয়।
বিএনপিকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, যাদের ঘরে গণতন্ত্র নেই তারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে কিভাবে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি কেন তাদের গঠনতন্ত্রের সাত ধারা তুলে দিয়েছিল। সাত ধারা অনুযায়ী কোনো দুনীতিবাজ ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি দলের নেতৃত্বে থাকতে পারবে না। বিএনপি সেটি তুলে দিয়ে দুর্নীতিবাজ ও সাজাপ্রাপ্তদের দলে রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে কিভাবে মানুষ হত্যা করেছিল তা সবার মনে আছে। তারা ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। এখন তারা মানবতার কথা বলে।
কাদের বলেন, আমাদের ভুল আছে, তার পরও আমরা দেশের জন্য কাজ করছি। রাজনীতিতে বিরোধীতা থাকবে কিন্তু আমরা হত্যার রাজনীতি করি না। বিএনপির সাথে পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছি না। দলের সম্মেলনকে সামনে রেখে কাজ করছি।
সভার আমন্ত্রক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতূর্থ স্তম্ভ। গণমাধ্যমের সহায়তা ছাড়া বহুমাত্রিক সমাজব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, বিতর্ক এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার ভিত গভীরে প্রোথিত হয় না। সেই ধরনের সমাজ নির্মাণ করতে আপনাদের সহায়তা আমরা চাই।’
ড. হাছান বলেন, ‘আমরা অবশ্যই চাই আমাদের ভুলত্রুটি আপনারা তুলে ধরবেন। কিন্তু সেই সাথে আজকে যে দেশটা বদলে গেল, এই বৈশ্বিক মহামারি, পৃথিবীময় যুদ্ধাবস্থা, বিশ্বমন্দার মধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট যে দেশের প্রশংসা করে, সেটি অনেক সময় বড় আকারে পত্রিকায় আসে না। কিন্তু কেউ একজন একটি নেতিবাচক কথা বললে সেটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বড় আকারে পত্রিকায় আসে কিংবা টেলিভিশনে উপস্থাপিত হয়। আমরা এই ক্ষেত্রে আপনাদের সহায়তা চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিজে গণমাধ্যমবান্ধব, তার সরকার গণমাধ্যমবান্ধব, আর সেজন্যই এ সরকারের সময় দেশে গণমাধ্যমের যুগান্তকারী বিকাশ ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন ড. হাছান।
বিশ্ব সংকটময় পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের অর্জন তুলে ধরার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো সরকারই একশ ভাগ নির্ভুল কাজ করতে পারে না। সব সরকারেরই কিছু ভুলত্রুটি থাকবে। সেটিকে বড় করে না দেখে জাতির বড় বড় অর্জনগুলোকে তুলে ধরতে হবে। জাতীয় স্বার্থ ও দেশের স্বার্থ বিবেচনায় নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির ক্ষয়ে পুরো দেশের ক্ষতি হতে পারে।
এসময় আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, শাজাহান খান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল, উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’র (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, দৈনিক অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, কালবেলার সম্পাদক আবেদ খান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউ এইজ সম্পাদক নুরুল কবির, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, আমাদের নতুন সময় সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান, আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, বাংলাদেশ পোস্টের সম্পাদক শরীফ শাহাবুদ্দিন, একাত্তর টেলিভিশন সিইও মোজাম্মেল বাবু, চ্যানেল আই পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের মহাসচিব দীপ আজাদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী এবং সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ বাদল উপস্থিত ছিলেন।