ইরানের নৈতিকতা পুলিশ হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভ-দাঙ্গাতে যুক্ত থাকার দায়ে প্রথম মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে একটি ইরানি আদালত। রোববার দেশটির বিচার বিভাগের ওয়েবসাইট এই তথ্য জাননো হয়েছে।
ইরানের মিজান নিউজ জানিয়েছে, অজ্ঞাতপরিচয় অভিযুক্তকে একটি সরকারী ভবনে আগুন লাগানো, জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করা, জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, সেইসাথে ঈশ্বরের শত্রু হওয়ার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেয় তেহরানের এক আদালত।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তেহরানের আরেকটি আদালত জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার জন্য আরও পাঁচজনকে পাঁচ থেকে দশ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। তবে তারা সবাই তাদের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন।
রোববার মিজান এবং অন্যান্য স্থানীয় মিডিয়া আরও বলেছে, এই মাসের শুরুতে ইরানের ২৯০ জন আইন প্রণেতাদের মধ্যে ২৭২ জন বিচার বিভাগকে ‘চোখের জন্য চোখ’ প্রতিশোধমূলক বিচার প্রয়োগ করার দাবি করেছিলেন যারা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মানুষের জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি করেছে।
বিচার বিভাগের পরিসংখ্যান অনুসারে, বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে ইতিমধ্যেই ২ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের প্রায় অর্ধেক রাজধানী তেহরানে। যাদের মধ্যে ৭৫০ জনকে সাম্প্রতিক দাঙ্গায় জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলির দাবি, আমিনির মৃত্যুর পরে অস্থিরতায় প্রায় ১৫ হাজার লোককে আটক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে মারা যান মাসা আমিনি। ঠিকমতো হিজাব না পরায় ১৩ সেপ্টেম্বর রাজধানী তেহরানে তাকে ইরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করেছিল।
পুলিশের হেফাজতে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর তাকে হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনদিন কোমায় থাকার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এ কুর্দি তরুণী। মৃত্যুর পর তার জন্মস্থান কুর্দিস্থানে বিক্ষোভ শুরু হয়। যা এখন ইরানের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রথমে বিক্ষোভ ইরানের কুর্দি অধ্যুষিত উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে শুরু হলেও ক্রমে তা দেশটির ৮০টি শহর ও নগরে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৯ এ পেট্রলের দাম নিয়ে হওয়া বিক্ষোভের পর দেশটির দেখা সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ এটি।