চাঞ্চল্যকর আবরার হত্যা মামলায় অভিযুক্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্রলীগের ২৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া এ বছরেই শেষ হবে আশা প্রকাশ করেছেন রাস্ট্র পক্ষের আইনজীবী।
ছাত্রলীগের ২৫ নেতা-কর্মী ২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের(বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্র শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করে ঘটনাটি বেশ আলোচিত ছিল।
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ঘটনাটি ঘটলেও বিচারকার্য এখনও শেষ হয়নি।করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ না আসলে এতদিনে হয়তো মামরাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী বিষেশ পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা বলছেন, এতদিনে নিস্পতি হয়ে যেত। তবে তিনি আশাবাদী যে, পরিবেশ স্বাভাবিক হওয়ার পরপরই মামলাটির বিচারকার্য শেষ হবে,গতকাল রোববার আদালতের স্বাভাবিক কাযত্রুম শুরু হয়েছে তাই তিনি আশা করেন এ বছরে মামলাটি নিস্পত্তি হবে।
বর্তমানে মামলাটির ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে সাফাই সাক্ষী গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল সাফাই সাক্ষীর জন্য তারিখ ধার্য থাকলেও করোনাভাইরাসের প্রভাবে কারনে আদালত সাধারন ছুটি থাকায় মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরো বলেন,বিচারকার্যে রাষ্ট্রপক্ষের কোনো গাফিলতি নেই, শুরু থেকেই রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে পরিচালনা করে আসছে । ।
এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী মন্জুর আলম এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরাও চাই যে দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ হোক। প্রকৃতিপক্ষে যারা দোষী তাদের সাজা হোক, আর যারা নির্দোষ তারা খালাস হউক। করোনা ভাইরাসের কারণে বিচারকার্য বন্ধ ছিল। এতে করে নির্দোষীরাও র্দীঘদিন জেল কাটছেন এবং আসামিরা সকলেই মেধাবী তাদের জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মামলা কারনে।
আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ এ প্রতিবেদকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও এখনও আদালতে বারান্দায় দৌড়-ঝাঁপ করতে হয়। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তারা চেষ্টা করছে মামলাটির বিচার যেন দ্রুত শেষ হয়। কিন্তু করোনা এসে সব থামিয়ে দিয়েছে। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ না এলে হয়তো এতদিনে ছেলে হত্যার বিচার পেয়ে যেতাম। আশা করি করোনা পরিস্থিতি ঠিক হলে দ্রুত মামলার কার্যক্রম শেষ করবেন আদালত।’
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ভোরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তী সময়ে জানা যায়, শিবির সন্দেহে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে মেরেছে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান। অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারনামীয় ১৯ জন এবং তদন্তেপ্রাপ্ত এজাহারবহির্ভূত ছয়জন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জন ও এজাহার বহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ আর গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আটজন আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু। চার্জশিট ভুক্ত পলাতক তিন আসামিরা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তফা রাফিদ।
গতবছর ১৩ জানুয়ারি আবরার হত্যা মামলার নথিটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত। এরপর মহানগর দায়রা জজ আদালত দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ পাঠানোর আদেশ দেন।
২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে দিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষের ৪৬ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে বর্তমানে আসামি পক্ষের সাফাই সাক্ষী চলছে। গ্রেফতারকৃত আসামিরা কারাগারে আটক আছে, তবে উচ্চ আদালতে একাধিকবার জামিনের আবেদন করেছিল আসামিরা। উচ্চ আদালতে বারবার তাদের জামিনের আবেদন নাকচ করেছে।