জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস এর উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘কারাগারের রোজনামচা-এর ফরাসি সংস্করণ জার্নাল ডি প্রিজন (Journal de Prison) এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন, এম.পি । তিনি নিউইয়র্ক থেকে অনলাইনে সংযুক্ত হন। এ আয়োজনে গেস্ট অফ অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ফরাসি লেখক, দার্শনিক ও চলচ্চিত্রকার বারনার্ড-হেনরি লেভি (Bernard-Henri Lévy)। বিশেষ বক্তা হিসেবে ঢাকা থেকে অংশগ্রহণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক ড.কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ঢাকা-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জনাব মফিদুল হক। অনুষ্ঠানে দূতাবাসে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন এ গ্রন্থের অনুবাদক অধ্যাপক ফিলিপ বেনয়ট (Phillipe Benoit), বইটির প্রকাশনা সংস্থা স্লাটকিন এন্ড সি (Slatkin & Cie) -এর প্রতিনিধি বারনার্ড ফেভ্রিউল (Bertrand Favreul).
কোভিড অতিমারীর কারণে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এ আয়োজনটিতে অনুষ্ঠানের গেস্ট অফ অনার, অনুবাদক, প্রকাশক সংস্থার প্রতিনিধি এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ সশরীরে অংশগ্রহণ করেন এবং ফ্রান্সে অবস্থিত অন্যান্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত, বিশিষ্ট গুণীজনসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এ আয়োজনটি একইসাথে অনলাইনে আয়োজন করা হয়।
রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কারাগারের রোজনামচা-বইটি বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি জীবনের দিনলিপি। কারা বন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু নিজের পরিবার পরিজনের চেয়েও দেশ, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করেছেন। কীভাবে পাকিস্তানি শাসক বাহিনীর অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন, দেশের মানুষকে মুক্তির আন্দোলনে দিক নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন তা বিধৃত হয়েছে এ গ্রন্থে। রাষ্ট্রদূত আশা ব্যক্ত করেন যে, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ, তাঁর জীবন দর্শন সারা বিশ্বের ফরাসি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠির কাছে পৌঁছে দিতে এ বইটির অনুবাদ বিশেষ অবদান রাখবে। তিনি বলেন, এ ঐতিহাসিক গ্রন্থের অনুবাদ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে উল্লেখ করেন।
ড.কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মুখ্য সমন্বয়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি তাঁর বক্তব্যে বলেন মুজিববর্ষে কারাগারের রোজনামচা ফরাসি অনুবাদকৃত গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন, এম.পি বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের ১৩টি বছর পাকিস্তানের কারাগারে কাটিয়েছেন, পরিবার পরিজনকে ছেড়ে কারাগারে অন্তরীণ জীবন যাপন করেছেন । বঙ্গবন্ধু বিশ্ব সচেতনতা তৈরিতে এক সোচ্চার কণ্ঠস্বর। টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় বাংলায় প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানব জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠা অনিবার্য। শান্তির যে বার্তা তিনি প্রচার করে গেছেন সেটাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূল মন্ত্র- ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়’। বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তাঁর জীবনাদর্শন আমাদের অনুপ্রেরণার প্রধান উৎস। তিনি মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে দূতাবাস কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ সমূহের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ জাতিসংঘের সকল ভাষায় অনুবাদ, বঙ্গবন্ধুর নামে ইউনেস্কোতে সৃজনশীল অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক পুরষ্কার প্রবর্তন নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে বিশেষ অবদান রাখবে।
বিশিষ্ট ফরাসী, লেখক, দার্শনিক ও চলচ্চিত্রকার বারনার্ড-হেনরি লেভি তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, এ বইয়ে আমি বঙ্গবন্ধুর কন্ঠস্বর শুনতে পাই। তিনি আরো বলেন, এ উদ্যোগ তাঁকে ভীষণভাবে আবেগআপ্লুত করেছে, তিনি তাঁর বক্তব্যে তিনটি বিশেষ দিক তুলে ধরেন। প্রথমত তিনি ফ্রান্সে বসবাসরত শেষ প্রজন্মের মানুষ যিনি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন। তিনি আরো বলে, ‘এ গ্রন্থের মাধ্যমে একদিকে যেমন মিষ্টতার প্রকাশ অনুভব করতে পেরেছি, তেমনি দৃঢ়তাও ফুটে উঠেছে। তার ওপর যন্ত্রণার অনুভূতি যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি ভবিষ্যতের আশাবাদও ব্যক্ত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ গ্রন্থের মাধ্যমে জনমানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর মমত্ববোধ আস্বাদন করতে পেরেছি। এটি স্থায়ীভাবে এ গ্রন্থে গ্রথিত হল’। বঙ্গবন্ধু তাঁর বইতে যে ভাবে ফরাসি বিপ্লবের কথা বলেছেন, ফরাসি জনগোষ্ঠীর সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছেন, সে একইভাবে ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে বিশিষ্ট ফরাসি দার্শনিক অঁন্দ্রে মার্লোও বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে তাঁর সমর্থন প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক প্রেক্ষিত বিবেচনায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তার বীজ এ গ্রন্থে আমি দেখতে পাই।
এ বইয়ের অনুবাদক ফিলিপ বেনয়ট বইটি হতে উল্লেখযোগ্য উদ্ধৃতি বাংলা, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় পড়ে শোনান এবং তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতির ক্ষেত্রে সহিংসতা বিরোধী ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর লেখনীর ও ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর অনুবাদে বঙ্গবন্ধুর আবেগকে প্রকাশ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।
বারনার্ড ফেভ্রিউল বলেন, তিনি এ উদ্যোগের সাথে সংশ্লিষ্ট হতে পেরে গর্বিত এবং বিশ্বময় ফরাসি ভাষাভাষিদের কাছে এ গ্রন্থ পৌঁছে দিতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাবে।