ইউক্রেনে চলমান রুশ আগ্রাসনের পরিণতি পূর্ব ইউরোপের বাইরেও ছড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান গ্যাস সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি অনেক বিশ্লেষক এবং সরকার এখন ক্রমবর্ধমান গমের সংকটকে অপকটে স্বীকার করে। কারণ, ইউক্রেন বর্তমানে নিকট প্রাচ্যে গম রপ্তানি করতে অক্ষম। ইউক্রেন একটি গন্তব্য যা সারা বিশে^ শস্য রপ্তানির একটি বিশাল ভূমিকা পালন করে আসছিল। এখন যা স্পষ্ট হয়ে উঠছে তা হল রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ইউক্রেনের উপর পোড়া মাটির নীতি প্রয়োগ করার জন্য গম আটকে রাখছে। নিষেধাজ্ঞা উপশমের জন্য রাশিয়া একটি দুর্ভিক্ষ তৈরি করে ইউক্রেনের সারা বিশ্বে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় প্রধান শস্যে গমের সরবরাহে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও এক সময় ইউক্রেনীয় গমের ফসলের উপর নির্ভর করত এবং শস্যে ও খনিজ সম্পদের জন্য কিয়েভ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। রুশ সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের পূর্ব দিকে হামলা চালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ক্রমবর্ধমান গমের চাহিদাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। দ্য ইকনোমিস্টের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জ্যানি মিন্টন বাাড্ডেস মনে করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন একটা লোভী মানুষ। সে খনিজ সম্পদে ভরপুর ইউক্রেন দখলে নেয়ার জন্য মরিয়া।
ইউক্রেন এবং রাশিয়া উভয়ই ইতোমধ্যে বিশ্বের শস্যের এক চতুর্থাংশ চাহিদা পূরন করে আসছে। যুদ্ধ কেবলমাত্র খাদ্য সংকটকে বাড়িয়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, তিউনিসিয়া ইতোমধ্যেই সংকটের ধাক্কা অনুভব করছে । আজ অবধি রুটির দাম ১৪ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে; এবং খাদ্য ঘাটতির সাথে সরকারি ব্যয় এবং ভর্তুকিতে চাপ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা এমন একটি দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং ইতোমধ্যে দেশটি চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য পড়েছে।
ইয়েমেন মধ্য প্রাচ্যের সবচেয়ে অপুষ্টিতে ভুগছে। দেশটি যেখানে সৌদি নেতৃত্বাধীন অত্যন্ত নৃশংস বিমান হামলা এবং মার্কিন সমর্থিত অবরোধ, ইতোমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। দুর্ভিক্ষ মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এবং দেশটি কিয়েভ এবং মস্কো উভয়ের শস্যের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর। অবরোধের কারণে এবং দেশের বৃহৎ এলাকায় জরুরী সাহায্যের অভাবে ১৭ মিলিয়নেরও বেশি ইয়েমেনি ইতোমধ্যে খাদ্য বঞ্চিত হচ্ছে।
লেবানন, যা বর্তমানে আধুনিক মানব ইতিহাসের বৃহত্তম সরকারি এবং আর্থিক পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শস্যের চালানের ক্ষেত্রে লেবাননে গম আমদানির ৮০% ইউক্রেন থেকে আসে।
যদিও আসাদ সাধারণত রাশিয়ান সমর্থন দ্বারা আর্শীবাদপুষ্ট কিন্তু ইউক্রেনের উপর হামলা চালানোর জন্য সিরিয়ার ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করছে রাাশিয়া। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের আক্রমণাত্মক অভিযান ধীর পুনর্গঠন এবং জনসংখ্যাগত পরিবর্তন এখনও আসাদকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। তার সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার যতই চেষ্টা করুক না কেন, সিরিয়ার উদ্বাস্তরা ফিরে আসতে অস্বীকার করে। কারন, অর্থনীতি এখনও পুনরুদ্ধার হয়নি। তার ওপর হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে একটি যুদ্ধে নিজেকে জড়িত করার জন্য সরকারের ইচ্ছাকে একটি প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ চলতে থাকায়, এই সবই নীল নকশার মাধ্যমে রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে গম এবং শস্য সংকটকে স্ফীত করতে পারে। সম্ভবত বিশ্বকে জিম্মি করে নিষেধাজ্ঞার ত্রাণ সুরক্ষিত করতে পারে এমন সন্দেহ বাড়ছে। চেরনিহিভ শহরে রাশিয়ান বাহিনী একটি গবাদি পশুর খামার দখল করে নিয়েছিল এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে পশুদের হত্যা করেছিল। বাসিন্দাদের মতে তারা ভয়াবহতার ছবিগুলো সংরক্ষণ করে রাখে। এটি করার মাধ্যমে রাশিয়া কেবল জেলেনস্কি নয় সমগ্র বিশ্বের উপর কর্তৃত্ব সুরক্ষিত করার চেষ্টা করছে।
তিনশো’র বেশি বেসামরিক বাণিজ্য জাহাজ ইতোমধ্যেই কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ান নৌবাহিনী দ্বারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ব বাণিজ্য রুট রুশ বাহিনী দখল করে আছ্।ে আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ান বাহিনী বেসামরিক জাহাজে গুলি চালানোর অনুমতি পেয়েছে। ২৫শে ফেব্রুয়ারি রাশিয়ান নৌবাহিনী একটি মলডোভান জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু ও গুলি করে এবং ২ মার্চ রাশিয়ান নৌবাহিনী বাংলাদেশী জাহাজে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এতে বাংলাদেশি একজন ক্রু সদস্য নিহত হয়। একইভাবে এপ্রিলের শুরুতে ওডেসা বন্দর থেকে শস্য ভর্তি একটি মিশরীয় জাহাজ বারবার রুশ বাহিনীর বাঁধার মুখে পড়ে।। যদিও মস্কো অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ থেকে মনে হচ্ছে রাশিয়া বিশ্বজুড়ে অনাহারের জন্য গমের সংকট আরও গভীর করতে চায়।