নারী নেত্রী আয়শা খানমকে মহিলা পরিষদের সুবর্ণ জয়ন্তী সম্মাননা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাপনী উপলক্ষে রোববার এক অনলাইন অনুষ্ঠানে সংগঠনের প্রয়াত সভাপতি আয়শা খানমকে এ সম্মাননা দেয়া হয়।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে “মহিলা পরিষদের ৫০ বছরের পথ চলা ও বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ” বিষয়ক একক বক্তৃতা করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি, লেখক, গবেষক ও প্রকাশক মফিদুল হক।
মফিদুল হক তার বক্তৃতায় বলেন, মহিলা পরিষদের পথচলা আর বাংলাদেশের পথচলা মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। নানা চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে মহিলা পরিষদের যাত্রা শুরু হয়। যুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নারীর অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই মহিলা পরিষদ উজ্জীবিত তরুণীদের নিয়ে সমাজকে এগিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করে।
বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব কবি সুফিয়া কামাল, মনোরমা বসু ও হেনা দাসের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সংগঠন বিস্তার, জনজীবনের কল্যাণ এবং নতুন রাষ্ট্রের সংবিধান ও আইনে নারীর অধিকার সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি বৈশ্বিক নারী আন্দোলনের সাথেও যুক্ত হতে থাকে।
যৌতুক বিরোধী আইন প্রণয়ন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, ১৯৭৫ সালকে নারী দশক ঘোষণা, সিডও সনদ বাস্তবায়নসহ নারীর অধিকার আদায়ে মহিলা পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
অনুষ্ঠানে সম্মাননাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। তিনি বলেন, তৃণমূলের নারীদের মাধ্যমে সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটিয়ে বৃহত্তর স্বেচ্ছাসেবী গণনারী সংগঠন হিসেবে মহিলা পরিষদকে গড়ে তুলতে আয়শা খানমের মেধা, প্রজ্ঞা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার ভূমিকা অপরিসীম। পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজে স্রোতের বিপরীতে থেকে নারী আন্দোলনকে একটি দৃঢ় ও টেকসই অবস্থানে নিয়ে আসতে মুক্তিযোদ্ধা আয়শা খানম যে অবদান রেখেছেন তা সংগঠন সবসময় শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু । আয়শা খানমের পরিবারের পক্ষ থেকে স্মৃতিচারণ করেন তার একমাত্র কন্যা উর্মি খান এবং ননদ সৈয়দা মনিরা আক্তার খাতুন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রতিথযশা রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা , বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী আজিজুর রহমান তুহিন, সুরাইয়া বেগম এবং রোকেয়া সদনের শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। আবৃত্তি শিল্পী, শিক্ষাবিদ ও অভিনেতা ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় কবি সুফিয়া কামালের লেখা ‘অমৃত কন্যা’ কবিতা আবৃত্তি করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগমের সঞ্চালনায় সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, ইউএন উইমেনের প্রতিনিধি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ এতে অংশ নেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ২০২০ সালের ৪ এপ্রিল থেকে সংগঠনটি বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। আজ এ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে তা সমাপ্ত হলো।