উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফর্মেটে শেষ পর্যন্ত পরিবর্তন এনেছে ইউরোপীয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফা। আগামী ২০২৪/২৫ মৌসুমে দলের সংখ্যা আরো চারটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৬টি। বর্তমান গ্রুপ পর্বের পরিবর্তে ম্যাচগুলো সিঙ্গেল লিগ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে।
ইউরোপীয়ান ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ এই আসরে নতুন পদ্ধতিতে প্রতিটি দল লিগে আটটি করে ম্যাচ খেলবে, চারটি হোম ও চারটি এ্যাওয়ে। বর্তমান গ্রুপ পর্বের ফর্মেটে প্রতিটি দল ছয়টি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেত। লিগের শীর্ষ আটি দল নক আউট পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। নবম স্থান থেকে ২৪তম স্থানে থাকা দলগুলো দুই লেগের প্লেÑঅফ ম্যাচ খেলে শেষ ১৬’র জন্য জায়গা করে নিবে।
এ প্রসঙ্গে উয়েফা সভাপাতি আলেক্সান্দার সেফেরিন বলেছেন, ‘সঠিক একটি ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য দীর্ঘদিনের পর্যালোচনার পর পরিবর্তিত একটি ফর্মেটে আমরা সন্তুষ্ট। এর মাধ্যমে প্রতিযোগিতার মান আরো বাড়বে ও ক্লাবগুলোর আরো বেশী করে রাজস্ব আয় করতে পারবে। এর মাধ্যমে কার্যত ঐ দেশগুলোর লিগ ও তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবলের উন্নতিতে সহযোগিতা হবে।’
সেফেরিন ও উয়েফা আশা করছে পরিবর্তিত ফর্মেটের এই চ্যাম্পিয়নস লিগ ক্লাবগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। এর ফলে বিশ্বের যেকোন ক্লাব সুপার লিগের মত বিতর্কিত কোন পদক্ষেপ গ্রহনে আর উৎসাহিত হবে না। উয়েফার কার্যনির্বাহী বোর্ডে সর্বসম্মতি ক্রমেই এই ফর্মেটের পক্ষে সবাই রায় দিয়েছে।
গত বছর এপ্রিলে ইউরোপের শীর্ষ ১২টি ক্লাব হঠাৎ করেই সুপার লিগের মত বিতর্কিত এক প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বিশ্ব ফুটবলে হইচই ফেলে দিয়েছিল। যদিও ক্লাবের সমর্থকরা কেউই তাদের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রন সংস্থা ফিফা ও ইউরোপীয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফাও তাদের এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির হুমকি দেয়। পরবর্তীতে নিজেদের ভুল স্বীকার করে এই প্রকল্প থেকে ৯টি ক্লাব সড়ে আসলেও এখনো রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। এজন্য ক্লাবগুলোকে আর্থিক জরিমানাও গুনতে হয়েছে।
নতুন এই ফর্মেটের ব্যপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে উয়েফা বিভিন্ন মহলে আলোচনা করেছে যার মধ্যে ক্লাবগুলোর সমর্থকরাও ছিলেন। নতুন চারটি ক্লাব কোথা থেকে আসবে এনিয়েও ব্যপক আলোচনা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে উয়েফার ন্যাশনাল এসোসিয়েশনের র্যাঙ্কিং অনুযায়ী পঞ্চম স্থানে থাকা এসোসিয়েশনের চ্যাম্পিয়নশীপের তৃতীয় স্থানে থাকা দলটি থাকবে এই তালিকায়।
‘চ্যাম্পিয়ন্স পাথ’-এর মাধ্যমে যোগ্যতা অর্জনকারী ক্লাবের সংখ্যা চার থেকে পাঁচ পর্যন্ত বাড়িয়ে অন্য একজন ঘরোয়া আসরের চ্যাম্পিয়নকে এখানে জায়গা দেয়া হবে। শেষ দুটি দল হিসেবে আগের মৌসুমের সমন্বিত পারফরমেন্সের মাধ্যমে সেরা দলগুলোকে বেছে নেয়া হবে। তবে এখানে লিগে অংশ নেয়া ক্লাবগুলোর সংখ্যাও বিবেচনায় আনা হবে। সেই হিসেবে ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের লিগকে বেছে নেবার সম্ভাবনাই বেশী।
একই ফর্মেট উয়েফা ইউরোপা লিগ ও উয়েফা ইউরোপা কনফারেন্স লিগের জন্যও প্রযোজ্য হবে। উভয় লিগে ৩৬টি দল খেলার যোগ্যতা অর্জণ করবে। সেফেরিন জানিয়েছে প্রতিটি ইউরোপীয়ান ক্লাব এসোসিয়েশন, ইউরোপীয়ান লিগ ও ন্যাশনাল এসোসিয়েশনে নতুন এই প্রস্তাবের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমানিত হলো ইউরোপীয়ান ফুটবল কতটা একতাবদ্ধ।