উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি গাড়ির নিচে চাপা পড়ে সোহেল আহমেদ ওরফে জীবন (৩৬) নামের এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। সোমবার সকালে নাটোরের সিংড়া উপজেলার নিংগইন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত সোহেল বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দুরন্ত সংবাদের সিংড়া উপজেলা প্রতিনিধি ও সিংড়ার শেরকোল আগপাড়া বন্দর উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
হাইওয়ে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টায় নলডাঙ্গার ইউএনও স্ত্রী ও সিংড়া গোল-ই-আটরোজ সরকারি কলেজের প্রভাষক মানসী দত্ত ওরফে মৌমিতাকে বহনকারী জিপ গাড়িটি (নাটোর-ঘ-১১-০০৩২) নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক হয়ে সিংড়ার দিকে আসছিল। উপজেলার নিংগইন এলাকায় গাড়িটি বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। মোটরসাইকেলটি গাড়ির নিচে ঢুকে যায়। এতে মোটরসাইকেলের চালক সোহেল আহমেদ গুরুতর আহত হন। এ সময় গাড়ি থেকে নেমে মানসী দত্ত অন্য একটি গাড়িতে চলে যান।
খবর পেয়ে সিংড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং আহত সোহেলকে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তবে আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে তাৎক্ষণিক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রামেক হাসপাতালে পৌঁছানোর পর দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁর মরদেহ রাজশাহী থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা পর্যন্ত মরদেহ সিংড়ায় পৌঁছেনি। স্বজনেরা তাঁর লাশের অপেক্ষায় আছেন।
এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই নলডাঙ্গার ইউএনও সুখময় সরকার ও সিংড়ার ইউএনও এম এম সামিরুল ইসলাম দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
নিহত সোহেল সিংড়া পৌর শহরের বালুয়া বাসুয়া মহল্লার মৃত আবদুল জলিলের ছেলে। শহরের ফ্রেন্ডস কম্পিউটার অ্যান্ড স্টেশনারি নামে তাঁর একটি দোকান রয়েছে।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী সোলায়মান হোসেন জানান, সরকারি ওই গাড়িতে একজন নারী, গাড়ির চালকসহ তিনজন ছিলেন। দুর্ঘটনার পর ওই নারী গাড়ি থেকে নেমে অন্য গাড়িতে চলে যান। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে মোটরসাইকেলের চালককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ির ছবি সিংড়া গোল-ই-আফরোজ কলেজের অন্তত পাঁচজন শিক্ষার্থীকে দেখালে তাঁরা জানান, গাড়িটিতে করে তাঁদের একজন শিক্ষক প্রতিদিন কলেজে আসেন। ওই শিক্ষক নলডাঙ্গার ইউএনওর স্ত্রী বলেও জানান তাঁরা। তবে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন বলেন, কলেজে বিভিন্ন লোক গাড়ি নিয়ে আসেন। কোনটি সরকারি গাড়ি, তা তাঁর জানা নেই।
নলডাঙ্গার ইউএনও সুখময় সরকার দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী সিংড়া সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন সত্য। তবে দুর্ঘটনার সময় তাঁর স্ত্রী ওই গাড়িতে ছিলেন না। নলডাঙ্গা এলাকায় জ্বালানি তেলের সংকট ছিল বলে তিনি সিংড়ার একটি পেট্রলপাম্প থেকে তেল আনতে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর নিজের এলাকার বাইরে গাড়ি পাঠানোর সুযোগ আছে কি না জানালে তিনি বলেন, তেলের সংকট মেটানোর জন্যই গাড়িটি পাশের উপজেলায় গিয়েছিল।
ঝলমলিয়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গাড়িটি উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গাড়িটি নলডাঙ্গার ইউএনওর বলে তাঁরা নিশ্চিত হলেও তাতে কারা আরোহী ছিলেন, তা তাঁদের জানা নেই।