সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে মৌসুমের দ্বিতীয় এল ক্লাসিকোতে কাল স্বাগতিক রিয়াল মাদ্রিদকে দাঁড়াতেই দেয়নি বার্সেলোনা। পিয়েরে-এমেরিক আবামেয়াংয়ের জোড়া গোলে কাতালান জায়ান্টরা ৪-০ গোলে চির প্রতিদ্বন্দ্বী মাদ্রিদকে পরাজিত করেছে। ম্যাচের অপর দুটি গোল করেছেন রোনাল্ড আরাওজো ও ফেরান তোরেস।
জাভি হার্নান্দেজের অধীনে বদলে যাওয়া বার্সেলোনার কাছে এটি ছিল অনেকটাই এসিড টেস্টের মত, যাতে জাভির শিষ্যরা শতভাগ উতরে গেছে। একইসাথে জাভির দূরদর্শিতার প্রমানও মিলেছে। লিওনেল মেসি বিহীন যুগের অবসান ঘটিয়ে আবারো ঘুড়ে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয়া বার্সেলোনা আগামী মৌসুমে যে লা লিগার শিরোপার জন্য শক্তিশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
দলের এতটা ভাল পারফরমেন্স হয়তোবা জাভি নিজেও প্রত্যাশা করেননি। ম্যাচ শেষে বার্সা বস তাই বলেছেন, ‘ক্লাবের বর্তমান ও ভবিষ্যত গতিপথ এর মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। মাদ্রিদের চেয়ে আজ আমরা সব জায়গায় ভাল খেলেছি, অনেক বেশী সুযোগ সৃষ্টি করে সেগুলো কাজে লাগাতে পেরেছি। আমাদের আরো বেশী গোল করা উচিৎ ছিল।’
এর মাধ্যমে বার্সেলোনা আবার স্বরূপে ফিরে এলো কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে জাভি বলেছেন, ‘হতে পারে। তবে একথা নি:সন্দেহে বলাই যায় এর মাধ্যমে সঠিক পথের সন্ধান আমরা পেয়ে গেছি।’
এই পরাজয় সত্তেও এবারের মৌসুমে টেবিলের শীর্ষে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের শিরোপা নিশ্চিতে হয়ত খুব একটা প্রভাব পড়বে না। কিন্তু ঘরের মাঠে বার্সেলোনার বিপক্ষে এই ধরনের হার মাদ্রিদ শিবিরে গুরুতর দু:শ্চিন্তার ছাপ ফেলবে। ২০০৯ সালে সান্তিয়াগোতে পেপ গার্দিওলার অধীনে ৬-২ গোলে জয়ের পর দুই বছর আগে ৫-০ গোলের জয়, আর এবার ঐ একই মাঠে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হবার ঘটনা আরো একটি ঐতিহাসিক এল ক্লাসিকোর জন্ম দিল কাতালান জায়ান্টরা।
স্বাভাবিক ভাবেই বড় এই পরাজয়ে মাদ্রিদ বস কার্লো আনচেলত্তির ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কার প্রশ্ন থেকেই যায়। জাভির অধীনে কাল কৌশলতগত দিক থেকে অনেক বেশী চতুরতার পরিচয় দিয়েছে বার্সা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আরো বেশী গোল করার সুযোগ বার্সা পেয়েছিল। সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে ব্যবধান যে কত বড় হতো তা সহজেই অনুমেয়। আনচেলত্তি অবশ্য সবকিছু স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, ‘আমরা সত্যিকার অর্থেই আজ বাজে খেলেছি। আমাদের গেম প্ল্যানও ভাল হয়নি। এই পরাজয়ের জন্য আমি দু:খ প্রকাশ করছি। আমি সত্যিই হতাশ। কিন্তু এই ম্যাচের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করতে চাই।’
ইনজুরি আক্রান্ত করিম বেনজেমা ও ফারলান্ড মেন্ডির অনুপস্থিতিতে মাদ্রিদ দল কিছুটা হলে ব্যাকফুটে থেকেই কাল ম্যাচ শুরু করেছিল। এছাড়া দলের মধ্যে আত্মতুষ্টিও লক্ষ্য করা গেছে। রিয়াল সোসিয়েদাদের সাথে গোলশুন্য ড্র করে আগের ম্যাচেই পয়েন্ট হারিয়েছে সেভিয়া। সে কারনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা সেভিয়ার থেকে নয় পয়েন্ট এগিয়ে কাল ম্যাচ শুরু করেছিল টেবিলের শীর্ষে থাকা মাদ্রিদ। কিন্তু কোন কিছুই আসলে এল ক্লাসিকোতে এই ধরনের বাজে পরাজয়ের পিছনে যুক্তি হিসেবে কাজ করেনা। একমাত্র স্বস্তি হলো পুনরীজ্জীবিত বার্সেলোনা এখনো তাদের থেকে ১২ পয়েন্ট পিছনে রয়েছে।
জোড়া গোল করে বার্সেলোনার হয়ে ১১ ম্যাচে আবামেয়াংয়ের গোলসংখ্যা দাঁড়ালো ৯। জানুয়ারিতে দলে আসা এই গ্যাবনিজ অভিজ্ঞ স্ট্রাইকারকে নিয়ে গর্ব করতেই পারে বার্সেলোনা। আরো একবার দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন পেড্রি। জানুয়ারিতে স্প্যানিশ সুপার কাপে বার্সা যখন রিয়াল মাদ্রিদের কাছে পরাজিত হয়েছিল তখনো কাতালান জায়ান্টদের নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। ম্যাচ শেষ হবার সাথে সাথে জেরার্ড পিকে টুইট করেছেন, ‘আমরা ফিরে এসেছি।’
ম্যাচ শুরু হবার প্রথম মিনিটেই এডার মিলিটাও পেড্রিকে না থামালে তখনই হয়ত এগিয়ে যেতে পারতো বার্সেলোনা। আর ঐ সুযোগটির পর থেকেই বার্সেলোনা একের পর এক আক্রমন চালানো শুরু করে। তোরেসের পাস থেকে আবামেয়াংয়ের শট সরাসরি থিবো কোর্তোয়ার হাতে ধরা পরে। ওসমানে ডেম্বেলের কার্লিং শট কোনমতে রুখে দেন কোর্তোয়া। শেষ পর্যন্ত ২৯ মিনিটে কাঙ্খিত গোলের দেখা পায় বার্র্সা। নাচো ফার্নান্দেজের ক্রস থেকে আবামেয়াংয়ের হেডে এগিয়ে যায় সফরকারীরা। ভিনিসিয়াস জুনিয়র বার্সা গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগানকে পরাস্ত করতে পারেননি। ৩৮ মিনিটে কর্ণার থেকে হেডের সাহায্যে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুন করেন আরাওজো।
ডেভিড আলাবা, মিলিটাও উভয়েই দুটি গোলের সুযোগ নষ্ট করেন। তবে বিরতির পরপরই আবামেয়াংয়ের দুর্দান্ত ফ্লিকে তোরেস কোন ভুল করেননি। ৫১ মিনিটে ম্যাচের সবচেয়ে অসাধারন গোলটি করেন আবামেয়াং। যদিও মাদ্রিদ অফসাইডের আবেদন করেছিল। কিন্তু ভিএআর গোলটি সঠিক হয়েছে বলে সিদ্ধান্ত দেয়। ম্যাচের শেষ ভাগে আবামেয়াং, তোরেস ও ডেম্বেলে মাদ্রিদকে পরাজয়ের ব্যবধান বাড়ানোর হাত থেকে রক্ষা করেছেন।