ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পদ্মা-যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এবং বিআইডব্লিউটিএ’র গাফলতির কারণে আরিচা ও কাজিরহাট ফেরি ঘাটের পন্টুনের র্যাম পানির নীচে। কর্তৃপক্ষের ঘাট পুনঃস্থাপন কাজে ধীরগতি ব্যহত হচ্ছে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল। ফলে, পারের অপেক্ষায় আটকে আছে শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকদেরকে।
জানা গেছে, ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে গত মঙ্গলবার থেকে আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ রয়েছে। সীমিত আকারে ফেরি সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে। কিন্তু গত তিন দিন ধরে নদীতে অস্বাভাবিক মাত্রায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে আরিচা ও কাজিরহাট ফেরি ঘাটের পন্টুনের র্যাম পানিতে ডুবে যাওয়ায় দফায় দফায় ফেরি লোড-আনলোড বন্ধ থাকছে। এতে, ফেরি সার্ভিস ব্যাহত হচ্ছে ।
গত বুধবার সকালে আরিচা ঘাটের ফেরি পন্টুনের র্যাম ডুবে গেলে দুপুরের দিকে বিআইডব্লিউটিসি’র র্যাকার দিয়ে র্যাম তুলে লো-ওয়াটার লেবেল থেকে হাই ওয়াটার লেবেলে স্থাপন করা হয়। এতে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে প্রায় ৯ ঘন্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আজ বৃহস্পতিবার ( ২৭ মে) সকাল থেকে আরিচা ও কাজিরহাট ফেরি ঘাট পন্টুনের র্যাম পুণঃরায় পানিতে ডুবে গেছে। এতে ফেরি থেকে যানবাহন লোড-আনলোড করতে গিয়ে এ্যাপ্রোচ রোডে গাড়ি আটকে যাচ্ছে। এতে, লোড-আনলোডে দীর্ঘ সময় ব্যায় হচ্ছে ও বিঘ্ন হচ্ছে স্বাভাবিক ফেরি চলাচল। ফেরির ট্রিপ সংখ্যাও কমে গেছে। বুধবার রাতে আসা গাড়িগুলো বৃহস্পতিবার সকালেও ফেরি পার হতে পারেনি বলে শ্রমিকরা জানান। ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে ঘাটে আসা যাত্রী এবং যানবাহন শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবার আরিচা ঘাট এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সকালে আরিচা একটি মাত্র ফেরি ঘাটের পন্টুনের র্যাম পানির নীচে ডুবে আছে। এর মধ্য দিয়েই ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় যানবাহন লোড-আনলোড করা হচ্ছে এবং যাত্রীরা ফেরিতে উঠছে। এ পরিস্থিতিতে যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশংকা করছেন যানবাহন শ্রমিকরা। ফেরি চলাচল ব্যহত হওয়ায় আরিচা ফেরি ঘাট এলাকা থেকে সড়কে পণ্যবাহী ট্রাকে দীর্ঘ সাড়ি রয়েছে। লঞ্চ – স্পিডবোট বন্ধ থাকায় নদী পারের জন্য সকল যাত্রীদেরকে ফেরি ঘাট এলাকায় বসে থাকতে দেখা গেছে।
ট্রাক চালক আব্দুল করিম জানান, ফেরি পার হওয়ার জন্য ঢাকা থেকে গত বুধবার দিবাগত রাতে আরিচা ঘাটে আসি। কিন্তুু ঘাটে সমস্যার কারণে রাতে ফেরি পার হতে পারিনি। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টাতেও ফেরির নাগাল পায়নি। তাড়াতাড়ির জন্য এ ঘাট দিয়ে এসে আরেক ভুগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
অপর ট্রাক চালক মোবারক আলী জানান, ঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় ফেরি থেকে গাড়ি নামানো অনেক কষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় নরম মাটিতে চাকা আটকে যাচ্ছে। পানিতে রাস্তা পিচ্ছিল হওয়ায় জ্যাম দেওয়া ছাড়া গাড়ি উপরে উঠানো সম্ভম হচ্ছে না। এতে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘনা ঘটতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআইডব্লিউটিসি’র এক কর্মকর্তা জানান, ঘাট বানানো এবং রক্ষানোবেক্ষানোর দায়ীত্ব বিআইডব্লিউটিএ’র। তাদেরকে একাধিকবার বিকল্প আরেকটি ঘাট বানানোর কথা বলা হয়েছে। আরেকটি ঘাট না বানানোর কারণে আজকে এ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা ঘাটের ম্যানেজার আব্দূল্লাহ বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আরিচা-কাজিরহাট ফেরি পন্টুনের র্যাম পানির নীচে তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশী সমস্যা হচ্ছে কাজিরহাট ঘাট নিয়ে। যে কারণে সকাল থেকে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছে। কাজিরহাট ঘাটের কাজ চলছে। ঘাটের পুণঃস্থাপনের কাজ শেষ হলে আবার ফেরি চলাচল শুরু হবে।
এদিকে, বিআইডব্লিউটিসি পাটুরিয়া ঘাট ম্যানেজার মহিউদ্দিন রাসেল জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ১৭টি ফেরির মধ্যে ছোট-বড় ১৫টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।