শেষ চার মিনিটের দুই গোলে মঙ্গলবার দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে প্যারাগুয়েকে সহজেই ৪-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করেছে ব্রাজিল। রিয়াল মাাদ্রিদের স্ট্রাইকার রডরিগো ম্যাচের শেষ গোলটি করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গোলের খাতা খুলেছেন।
এই পরাজয়ের মাধ্যমে ১৬ ম্যাচে মাত্র ১৩ পয়েন্ট অর্জণ করে ১০ দলের বাছাইপর্বের টেবিলে নবম স্থানে থাকা প্যারাগুয়ের বিাদয় নিশ্চিত হয়েছে। একই সাথে কাতার বিশ্বকাপে আগেই জায়গা নিশ্চিত করা ব্রাজিলের বৈশ্বিক এই সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন আরো মজবুত হয়েছে।
১৫ ম্যাচে অপরাজিত থেকে বাছাইপর্বের টেবিলের শীর্ষস্থান এখনো ধরে রেখেছে সেলেসাওরা। একইসাথে এই জয়ের মাধ্যমে ঘরের মাঠে বাছাইপর্বে অপরাজিত থাকার রেকর্ড ৬১ ম্যাচে উন্নীত হয়েছে।
অন্য দিকে কোচ গুইলারমো বারোস শেলোট্টোর অধীনে প্রথম পাঁচ ম্যাচের একটিতেও এখনো জয়ী হতে পারেনি প্যারাগুয়ে। ১৬ ম্যাচে মাত্র দুটি জয়সহ ১৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানির থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দলটি।
ম্যাচে দল বড় ব্যবধানে জিতলেও প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লিডস ইউনাইটেডের উইঙ্গার রাফিনহার জন্য ম্যাচটি ছিল হতাশার। যদিও তার গোলেই ২৮ মিনিটে এগিয়ে গিয়েছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু তার আগেই ম্যাচ শুরুর ৯৩ সেকেন্ডের মধ্যে রাফিনহা ব্রাজিলকে লিড এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু ভিএআর দীর্ঘ আলোচনার পর সেই গোল বাতিল করে। ২৮ মিনিটে অবশ্য মারকুইনহোসের লম্বা বল দারুনভাবে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে দুই ডিফেন্ডারের মধ্যে দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দলকে এগিয়ে দেন ২৫ বছর বয়সী এই উইঙ্গার।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে তার আরো একটি ভলি পোস্টে লেগে ফেরত আসলে আবারো হতাশ হতে হয়। ৬২ মিনিটে ৩০ মিটার দুর থেকে কোনাকুনি শটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন ফিলিপ কুটিনহো। ম্যাচ শেষের চার মিনিট আগে বাম পায়ের কার্লিং শটে দলের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন এন্টনি। ৮৮ মিনিটে রডরিগোর গোলে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের বড় জয় নিশ্চিত হয়।
ব্রাজিলের হয়ে কাল ভিনিসিয়াস জুনিয়র, মাথেয়াস কুনহা ও লুকাস পাকুয়েটাও গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন। অনেকটাই পরিবর্তিত পারফরমেন্সে কাল ব্রাজিলকে দারুন আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে। ইনজুরির কারনে কালও দলে ছিলেন না সুপারস্টার নেইমার। মূল একাদশে কাল সুযোগ পেয়েছিলেন গোলরক্ষক এডারসন, মিডফিল্ডার ফ্যাবিনহো, লেফট-ব্যাক এ্যালেক্স টেলেস ও ম্যাচের অধিনায়ক দানি আলভেস। দ্বিতীয়ার্ধে বদলী হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন নিউক্যাসলের নতুন চুক্তিভূক্ত ব্রুনো গুইমারায়েস।
দিনের আরেক ম্যাচে তরুণ উইঙ্গার ফাকুন্ডো পেলেস্ট্রির দুর্দান্ত পারফরমেন্সে দুইবারের বিশ্বকাপ জয়ী উরুগুয়ে ৪-১ গোলে ভেনেজুয়েলাকে বিধ্বস্ত করেছে। যদিও ম্যাচে পেলিস্ট্রি কোন গোল পাননি। রডরিগো বেনটানকার, গিওর্গিয়ান ডি আরাসকায়েটা, এডিনসন কাভানি ও লুইস সুয়ারেজের গোলে উরুগুয়ে নতুন কোচ দিয়েগো আলোনসোর অধীনে দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তরুণ তুর্কি পেলিস্ট্রি ৬৭ মিনিটে বদলী বেঞ্চে যাবার আগে দারুন পারফর্ম করে গেছেন। তার সহযোগিতায় ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটি আসে এবং সুয়ারেজের পেনাল্টির মূল কারিগর ছিলেন তিনিই। এই জয়ে ১৬ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট অর্জন করা উরুগুয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে থেকে সরাসরি কাতার বিশ্বকাপের টিকিট প্রাপ্তির পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। যদিও এক পয়েন্ট পিছিয়ে পঞ্চম স্থানে থাকা পেরু ঘাড়ের উপর নি:শ্বাস ছাড়ছে উরুগুয়ের । বাছাইপর্বের শেষ দুই ম্যাচে উরুগুয়ের প্রতিপক্ষ চিলি ও পেরু।
ইকুয়েডরের সাথে দিনের শেষ ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করে পয়েন্ট হারিয়েছে পেরু। নাহলে উরুগুয়েকে টপকে তারা চতুর্থ স্থানে উঠে আসতে পারতো।
বলিভিয়ার লা পাজে স্টেডিয়ামে এ্যালেক্সিস সানচেজের জোড়া গোলে স্বাগতিকদের ৩-২ ব্যবধানে পরাজিত করে বিশ্বকাপের স্বপ্ন এখনো টিকিয়ে রেখেছে চিলি। বৃহস্পতিবার আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২-১ গোলের পরাজয় থেকে দারুনভাবে দলকে ফিরিয়ে এনেছেন ৩৩ বছর বয়সী অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার সানচেজ। ১৪ মিনিটে দুর্দান্ত ফ্রি-কিকে দলকে এগিয়ে দেন সানচেজ। এরপর ম্যাচ শেষের পাঁচ মিনিট আগে দুই খেলোয়াড়কে কাটিয়ে লো শটে দলের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন। প্রথমার্ধে মার্ক এনুম্বার গোলে বলিভিয়া সমতা ফিরিয়েছিল। মার্সেলো মোরেনোর গোলে ৭৭ মিনিটে আবারো এগিয়ে যায় চিলি।