করোনার মধ্যে আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশি চিংড়ির কদর বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে এ দেশের চিংড়ির দামও। আর তাতেই ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ ও আমেরিকায় চিংড়ি রপ্তানিকারক বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় বেড়েছে কয়েক গুণ। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, মূলত বাগদা চিংড়ির ভৌগোলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) বা জিআই সনদ এ চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা, কানাডা ও ইইউতে চিংড়ি রপ্তানিকারক ও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানির আয় থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিদেশি হিমায়িত মৎস্য রপ্তানিকারক কোম্পানি রয়েছে দুটি। কোম্পানি দুটি হলো জেমিনি সি ফুড ও অ্যাপেক্স ফুডস। এ দুটি কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চিংড়ি রপ্তানি করে জেমিনি সি ফুডের আয় গত ৬ মাসে ৭০০ শতাংশ বা ৪২ কোটি টাকা বেড়েছে। রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে কোম্পানিটির রপ্তানি বাবদ নগদ সহায়তাপ্রাপ্তিও বেড়েছে কোম্পানিটির। ফলে সার্বিকভাবে আয় বেড়েছে কোম্পানিটির।
জেমিনি সি ফুড গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে ৪৮ কোটি টাকার চিংড়ি রপ্তানি করেছে। আগের বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ছয় কোটি টাকার চিংড়ি।
জানা গেছে, জেমিনি সি ফুড গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে ৪৮ কোটি টাকার চিংড়ি রপ্তানি করেছে। আগের বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ছয় কোটি টাকার চিংড়ি। রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কোম্পানিটি ২০২১ সালের শেষ ছয় মাসে নগদ সহায়তা বাবদ সরকারের কাছ থেকে তিন কোটি টাকা প্রণোদনা পেয়েছে। আগের বছর একই সময়ে এ বাবদ কোম্পানিটির আয় ছিল মাত্র ৪৩ লাখ টাকা।
অ্যাপেক্স ফুডস গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে (তিন মাস) চিংড়ি রপ্তানি করেছে প্রায় ১১১ কোটি টাকার। আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৬৫ কোটি টাকা।
চিংড়ি রপ্তানিকারক শেয়ারবাজারের অপর কোম্পানি অ্যাপেক্স ফুডসের সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনটি গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর (তিন মাস) সময়কালের। ওই তিন মাসে কোম্পানিটি চিংড়ি রপ্তানি করেছে প্রায় ১১১ কোটি টাকার। আগের বছর একই সময়ে তার পরিমাণ ছিল ৬৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে চিংড়ি রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৭২ শতাংশ বা ৪৬ কোটি টাকার বেশি।
করোনার মধ্যে গত বছর ইইউ ও আমেরিকায় হঠাৎ বাংলাদেশের চিংড়ির ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। পাশাপাশি দামও বেড়েছে, যার সুফল পেয়েছে কোম্পানিগুলো।
কোম্পানিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার মধ্যে গত বছর ইইউ ও আমেরিকায় হঠাৎ বাংলাদেশের চিংড়ির ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। পাশাপাশি দামও বেড়েছে, যার সুফল পেয়েছে কোম্পানিগুলো। এতে কোম্পানি দুটি আয় ও মুনাফা বেড়েছে। কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, গত বছর বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) বা জিআই পণ্যের সনদ লাভ করে। এরপর এ দেশের বাগদা চিংড়ির চাহিদা বেড়ে যায় আমেরিকা ও ইইউতে। আর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানান রপ্তানিকারক কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেমিনি সি ফুডের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিআই সনদের স্বীকৃতির পর আমেরিকা, কানাডা ও ইইউতে আমাদের বাগদা চিংড়ির চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এতে দাম বেড়েছে। তাতে আমাদের আয় ও মুনাফায় বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’ তিনি জানান, এ দেশ থেকে চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তাদের পণ্যের মানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বা মান সনদ বেশি। এ কারণে তাদের রপ্তানি অন্য প্রতিযোগী অনেকের চেয়ে বেশি বেড়েছে।