ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি তিন দিনের সফরে আজ সকালে ঢাকা এসে পেঁৗঁছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও তাঁর পত্নী রাশিদা খানমকে সঙ্গে নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানান।
এর আগে কোবিন্দ ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট সকাল ১১টা ১০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করে।
ঢাকায় কোবিন্দের প্রথম সফরে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন ফার্স্টলেডি শ্রীমতি সবিতা কোবিন্দ, তাদের মেয়ে স্বাতী কোবিন্দ, ভারতের শিক্ষামন্ত্রী এবং দু’জন সংসদ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
রাষ্ট্রপতি হামিদ বিমান বন্দরে ফুলের তোড়া দিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান এবং রাশিদা হামিদও বিমান বন্দরে ভারতীয় ফার্স্ট লেডিকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান।
মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল ২১ বার তোপধ্বনিসহ গার্ড অব অনার প্রদান করে।
সফররত প্রতিনিধি দলের সদস্যরাও এ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন।
আবদুল হামিদ ও ভারতের রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ অস্থায়ী মঞ্চে অবস্থান করে রাষ্ট্রীয় সম্মান উপভোগ করেন। এ সময় উভয় দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং এ সময় উভয় দেশের রাষ্ট্রপতি নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন।
ভারতের ১৪ তম রাষ্ট্রপতি সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে
অংশ নিতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে আসা একমাত্র বিদেশী সম্মানিত অতিথি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা সারিতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, কৃষি মন্ত্রী ড. মোহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
এছাড়া, সেখানে উপস্থিত ছিলেন কূটনীতিক কোরের ডিন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিনি বাহিনীর প্রধানগণ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) মুখ্য সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), রাষ্ট্রপতির দপ্তরের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ এবং উর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা।
বিমানবন্দরে অভ্যর্ত্থনা অনুষ্ঠানের পর কোবিন্দকে মটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে নেয়া হয়। সেখান থেকে তিনি হেলিকপ্টার যোগে রাজধানীর উপকণ্ঠে সাভারে জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধে যান।
ভারতের রাষ্ট্রপতি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের নয় মাস ব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সেখানে তিনি একটি চারা গাছ রোপণ এবং দর্শনার্থীদের বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
পরে, তিনি বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। এদিকে বাংলাদেশ একযোগে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে।
আজ বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ভারতীয় রাষ্ট্রপতির সাথে তার স্যুটে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভারতের রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণে বঙ্গভবনে ভারতীয় রাষ্ট্রপতির সম্মানে একটি নৈশভোজের আয়োজন করবেন।
বঙ্গবভনের এক মুখপাত্র জানান, ভারতীয় রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ব্যবহৃত রাশিয়ার তৈরি টি-৫৫ ট্যাঙ্ক এবং মিগ-২১ বিমানের দু’টি রেপ্লিকা উপহার হিসেবে প্রদান করবেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন।
সফরের দ্বিতীয় দিনে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ১৬ ডিসেম্বর ন্যাশনাল প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘সম্মানিত অতিথি’ হিসেবে যোগ দেবেন।
বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বাংলাদেশের জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা জানাতে এবং বিজয়ের আনন্দ উদযাপনের জন্য ‘মহান বিজয়ের বীর’ শিরোনামে রমনাথ কোবিন্দ একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকারসহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন।
১৭ ডিসেম্বর তৃতীয় দিনে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি কালীমন্দিরের নতুন সংস্কার করা অংশের উদ্বোধন ও পরিদর্শন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ওই দিন বিকেলে তিনি ঢাকা থেকে নয়াদিল্লীর উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।