আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, একটি চিহ্নিত মহল হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কুমিল্লার নানুয়া দিঘীর ঘটনা ঘটিয়েছে।
আজ সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন।
ড. হাছান বলেন, ‘অতীতে যারা পদ্মাসেতু নিয়ে নানা ধরণের গুজব রটিয়েছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দেশ ও মানুষের কল্যাণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, সেই একই মহল এবারের ঘটনা ঘটিয়েছে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে এবং একে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানাভাবে গুজব রটনা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বলবো, আপনারা নির্ভয়ে নির্বিঘেœ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে পূজা উদযাপন করুন, জনগণ ও সরকার আপনাদের পাশে আছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাংলাদেশে স্থাপিত হয়েছে এটি অনেক দেশের জন্য উদাহরণ। এদেশ রচিত হয়েছে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার মিলিত রক্ত¯্রােতের বিনিময়ে। একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ রচনা করার জন্যেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ রচিত হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, কিন্তু একটি মহল আমাদের এই দেশ রচনার বিরুদ্ধাচারণ করেছিল। আমাদের পূর্বসুরি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার মিলিত রক্তস্্েরাতের বিনিময়ে যেভাবে দেশ রচিত হয়েছে, একইভাবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ঠিকানায় দেশকে পৌঁছানোর জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। এই প্রয়াসের বিরুদ্ধে যারা প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তারা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি থাকুক সেটি চায় না, বলেন হাছান মাহমুদ।
‘সেজন্য নানা সময়ে দেখা গেছে নানা ধরণের দুর্যোগ রচনা করা হয়েছে, নানা ধরণের ছোটখাটো ঘটনা ঘটিয়ে সেটি আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে’, বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘গত কয়েক বছরের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এগুলোর পেছনে হীন উদ্দেশ্য ছিল যেগুলো সরকার কঠোর হস্তে দমন করেছে। কুমিল্লায় নানুয়া দিঘীর পাড়ে যে মন্দিরে কোরআন শরীফ পাওয়া গেছে বলে বলা হচ্ছে আমি সেখানকার অনেকের বক্তব্য দেখেছি। সেখানে অত্যন্ত শান্ত একটি পরিবেশে হিন্দু, মুসলিম ভাইরা মিলে শান্তিপূর্ণভাবে যুগ যুগ ধরে বসবাস করছেন। সেখানে রাতের বেলায় মন্দির বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, কোনো মানুষ ছিল না, বাতিও বন্ধ ছিল। সেই পরিস্থিতিতে কে বা কারা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে সেটি পুলিশ তদন্ত করছে। আমি নিশ্চিত যে, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি খুব সহসা বের হবে এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।’
এই ঘটনার উদ্দেশ্য পরিস্কার যে, সবসময় দুষ্কর্মের সাথে যুক্ত মহলই এই ধরণের ঘটনাটি ঘটিয়েছে, যা পুলিশসহ অনেকগুলো সংস্থা তদন্ত করছে। শিগগির সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, এটির পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে একটি মহল সবসময় গুজব রটনার কাজে লিপ্ত এবং তারা গুজব রটিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে দেশের সম্প্রীতি শান্তি বিনষ্ট করার অপকর্মে সবসময় লিপ্ত।
অতীতের দিকে দৃষ্টিপাত করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘যখন পদ্মাসেতুর পিলারের কাজ শুরু হলো তখন গুজব রটিয়ে দেয়া হলো যে, পদ্মাসেতুতে নরবলি দিতে হবে। আবার সেটির প্রেক্ষিতে ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে দেয়া হলো। অনেকগুলো নিরীহ মানুষ হত্যাকান্ডের শিকার হলো। যারা এই সরকারের আমলে পদ্মাসেতু হবে না বলেছিল ও পদ্মাসেতুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সাথে বিশ্বব্যাংককেও যুক্ত করেছিল এবং পরে বিশ্বব্যাংক লজ্জাকরভাবে আদালতে হেরে যাওয়ায় সমস্ত অভিযোগ অসত্য প্রমাণিত হয়েছিল, সেই একই মহল এই গুজব ছড়িয়েছে। সেই একই মহল আজকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য এই অপকর্ম করেছে।’
ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকারের তৎপরতার কথা উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘সারাদেশে এটির প্রেক্ষিতে গতকাল যে উত্তেজনা ছড়ানো হয়েছিল, পুলিশ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেটি কঠোর হস্তে দমন করেছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। আমি জনগণকে অনুরোধ জানাবো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরণের গুজব ছড়ানো হয়, গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না। আর যারা গুজব ছড়ানোর চিন্তা করছেন বা করেছেন সবাইকে চিহ্নিত করা হবে এবং সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে আমরা বদ্ধপরিকর।
মন্ত্রী বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাইকে অনুরোধ জানাবো আপনারা নির্বিঘেœ নির্ভয়ে পূজা উৎসব পালন করুন, সরকার, জনগণ আপনাদের পাশে আছে। দুষ্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে আমরা বদ্ধপরিকর।’