করোনা ও বর্ষা ক্ষতিগ্রস্ত শহাজাহানপুরের শাহ নগরের সবজি নার্সারি পল্লীর মালিকরা আবার শীতকালীন সবজির চারা তৈরিতে ঘুরে দাঁড়াতে লড়াই করে যাচ্ছে। বগুড়ার শাজাহানপুরে শাহনগর এলাকায় গড়ে ওঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ নার্সারি পল্লী।এখানে রীতিমতো সবজির চারা উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে।
১৯৮৫ সালের দিকে প্রথমে শাহনগর বড়পাথার এলাকায় নার্সারি ব্যবসা শুরু হয়।বর্তমানে শাহনগর, বড়পাথার, চুপিনগর, দুরুলিয়া, বৃ-কুষ্টিয়া, খোট্রাপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামজুড়ে গড়ে উঠেছে ৪০০ শতাধিক ছোট বড় নার্সারি।এখানে ফুলকপি, বাধাকপি, টমেটো, বেগুন, পেঁপেসহ হাইব্রিড জাতের মরিচ। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষসহ কয়েক হাজার মানুষের।অভাব ঘুচিয়ে অনেকে হয়েছেন স্বাবলম্বী। শাহনগরের নার্সারী পল্লী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা খেকে চারা নিতে ভিড় করে। এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চারা কিনতে আশা মানুষের জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। রাতে বিশ্রাম নিয়ে সকালে চারা নিয়ে রওনা হয় চারার পাইকারি ক্রেতারা।
তবে এ বছর করোনার প্রভাবে আর বৃষ্টিতে নার্সারি পল্লী কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। বিগত বছর গুলোতে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আগাম শীতকালীন সবজি চারা নিতে দেশের বিভিন্ন জেলার ক্রেতায় মুখরিত হত এ অঞ্চল। বৃষ্টিতে চারা রোপণের জমি তৈরি না হওয়ায় ক্রেতা কম।ফলে নার্সারিতেই নষ্ট হচ্ছে উৎপাদিত বিপুলসংখ্যক সবজি চারা।
উপজেলার নার্সারি পল্লীর কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, নার্সারি শ্রমিকরা সবজি বীজতলায় চারা তৈরি,বিক্রি ও পরিচর্যা করতে দারুন ব্যস্ত সময় পার করছে।অনেকেই অতি বৃষ্টির কারণে বীজতলা অবিক্রিত নষ্ট চার তুলে ফেলে নতুন করে বীজতলা তৈরি করছে।
শীতকালীন আগাম সবজি বীজতলা বৃষ্টি থেকে রক্ষায় বাঁশের তৈরি ‘বেতি’গুলো রিংয়ের মতো বসিয়ে উপরে সাদা,কালো পলিথিন দিয়ে পুরো বীজতলা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।বীজতলা বীজ ফেলার পর ঝুরঝুরে মাটি ছড়িয়ে দিতে হয়।বীজতলা প্রস্তুতে জমির মাঝ বরাবর নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ছোট ছোট আইল ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের নালা তৈরি করে বীজ বপন করা হয়েছে।
শাহ-নগরে আঁখি বীজ ভান্ডার নার্সারি,ভাই ভাই নার্সারি ও ফাহিন নার্সারি ক্ষুদ্র পরিসরে বাণিজ্যিক ভাবে গ্রিনহাউজ চারা উৎপাদন শুরু করেছে।গ্রিনহাউজ ঘরে মাটির বদলে কোকোপিট নারকেল ছোপড়া প্লাস্টিকের ট্রেতে বসিয়ে চারা তৈরি করছে। এ পদ্ধতিতে রোগবালাইমুক্ত ও উচ্চ ফলনশীল চারা সারাবছর তৈরি করা সম্ভব বলে জানান ভাই ভাই নার্সারি স্বত্তাধিকারি ফেরদাউস জামান উজ্জল।
শাহ নগর নার্সারি মালিক সমিতর সভাপতি আমজাদ হোসেন জানান এবার শাহনগরে প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে সবজির বীজ বপন করে চারা তৈরি করা হয়েছে। এবার বর্ষায় চারা ব্যাপক ক্ষতি হলেও এখন আবহাওয়া অনকূল থাকায় নার্সারী মালিকরা আবার নতুন উদ্যেমে চারা তৈরি শুরু করেছে। এ মৌসুম তারা প্রায় ১০ কেটি টাকার চারা বিক্রি হয়ে থাকে।শীতকালীন সবজি মধ্যে টমেটো,মরিচ,কপি বীজ বপন করা হয়। এ বছর প্রকার ভেদে সবজি চারা ৩শ থেকে ৬শ টাকা হাজার চারা বিক্রি করেছে।
দুই বোন এক ভাই নার্সারি মালিক আবুজার রহমান জানান,এ বছর তিনি সাড়ে চার বিঘা জমিতে ২০ কেজি মরিচ বীজ বপন করেন।প্রতি কেজি মরিচ বীজ ৩৫-৪০ হাজার টাকায় কিনতে হয়।প্রায় ৮ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত চারা বিক্রি হয়েছে মাত্র ২ লাখ টাকা চারা। শীতকালীন সবজি চারা রোপণের এখনও সময় আছে। তিনি আশা করনে খরচ বাদ দিয়ে এবার ৩ লাখ টাকা লাভ হবে। যদি বৃষ্টি না হতো হতে এ লাভ আরো বেশি হতো। এবার করোনার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চারা কিনতে আসতে না পারায় অনেকে টেলিফেনে অর্ডার দিচ্ছে। তাদের চাহিদ মত চারা ট্রাক বোঝাই করে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
শাহনগর ও বড়পাথার গ্রামের দুলাল, লালমিয়া, আব্দুল মোমিন, জাহিদুল ইসলামসহ অনেক চারা চাষিরা নতুন করে বীজতলায় বীজ বপন করেছেন। বৃষ্টি দমাতে পারেনি শাহনগর সবজি নার্সারি মালিকদের সবজি নার্সারী সমিতির সভাপতি আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, করোনা মহামারির কারণে অন্যান্য পেশাজীবীদের মতো সবজি চারা নার্সারি মালিকেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।কিন্তু তাই বলে নার্সারী মালিকরা থেমে থাকেনি। নার্সারির বীজতলা থেকে চারা তুলে ফেলে দিয়ে নতুনকরে চাারা তৈরি করছে।
শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূরে আলম জানিয়েছেন,শাহ নগরসহ আশেপাশে গড়ে ওঠা নাসার্রি গুলো দেশের সবজি চাহিদার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।জুলাই-আগস্ট মাসে বৈরী আবহাওয়ায় বৃষ্টিতে জমি প্রস্তুত করতে না পারায় নার্সারি গুলোতে বিক্রি কিছুটা কম ছিল। এখন আবাওয়া ভালো হওয়ায় তারা আবার আশার আলো দেখছেন। কয়েক দিন হলে আবহাওয়া অনুক’লে থাকায় নার্সারিগুলোতে নতুন উদ্যোমে সবজি বীজতলায় চারা তৈরি, বিক্রি ও পরিচর্যা ব্যস্ততা বেড়েছে।