বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ২৫ আসামির বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।
আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন তারিখ দিয়েছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।
আজ বুধবার আদালতে মামলাটির যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ কিছু ভুল সংশোধনের জন্য নতুন করে অভিযোগ গঠন করার আবেদন করে।
আগে অভিযোগ গঠনের সময় ঘটনাস্থলের বিবরণের এক জায়গায় ‘একই গেস্ট হাউস’ লেখা ছিল। তার বদলে ‘একই হলের গেস্টরুম’ লেখার আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ ভূঞা।
ফৌজদারি কার্যবিধি ২২৭ ধারা অনুযায়ী অভিযোগ গঠনের সংশোধন আবেদনে তিনি বলেন, এ মামলার অভিযোগ গঠনের ফরমের চতুর্থ লাইনে মুদ্রণজনিত ত্রুটির কারণে ওই ভুল হয়। তা সংশোধন করা হলে রাষ্ট্র বা আসামি কোনো পক্ষের কোনো ক্ষতির কারণ ঘটবে না।
বিচারক ওই আবেদন মঞ্জুর করলে আসামিদের সবাইকে সংশোধিত অভিযোগটি পড়ে শোনানো হয় এবং নিয়মমাফিক জানতে চাওয়া হয় তারা দোষী না নির্দোষ। আসামিরা তাদের নির্দোষ দাবি করেন। পরে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা নতুন করে রাষ্ট্রপক্ষের কোনো সাক্ষীকে জেরা করবেন না বলে বিচারককে জানান। এরপর বিচারক রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তির্কের শুনানি পিছিয়ে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ফের আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের তারিখ ঠিক করে দেন।
গত ১৪ মার্চ মামলার ২৫ আসামির মধ্যে কারাগারে থাকা আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন। মহামারির কারণে দুই মাস আটকে থাকার পর সম্প্রতি আসামিদের সাফাই সাক্ষ্য শুরু হয়।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীর হাতে নির্দয় পিটুনির শিকার হয়ে মারা যান বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ। ঘটনার পরদিন নিহতের বাবা বরকতউল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন।
গত বছর ১৩ নভেম্বর মামলায় ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
মামলার তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী।
তারা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু। পরে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।
মামলার আট আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।
মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামে পলাতক এক আসামি পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।
তাই এখন পলাতক রয়েছেন আর তিন আসামি। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রাফিদের নাম এজাহারে ছিল না।
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। এরপর ৫ অক্টোবর আবরারের বাবা বরকতউল্লাহর জবানবন্দি গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।
অভিযোগপত্রের ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৪৭ জন এ মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।