সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার দ্বিতীয় দফায় দ্বিতীয় দিনে আদালতে চতুর্থ সাক্ষীর জবানবন্দি ও আসামিদের আইনজীবীর জেরা সম্পন্ন হয়েছে।
সোমবার (০৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ১০ মিনিটে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম।
আদালতের চতুর্থ সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি প্রদান করেন টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকার বাসিন্দা ও ঘটনার সময় সিনহার গাড়ির কিছুটা দূরে অবস্থান করা অটোরিকশা চালক কামাল হোসেন।
তিনি (কামাল হোসেন) ১২টা পর্যন্ত আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা শুরু করেন। দুপুর ২টা থেকে আদালতের বিচার কাজ এক ঘণ্টার বিরতি দেওয়া হয়। পরে বিকেল ৩টায় আবারও শুরু হয়ে জেরা শেষ হয় সাড়ে ৫টায়।
এর আগে গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত মামলার প্রথম দফার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষী ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে একই গাড়িতে থাকা সঙ্গী সাহেদুল সিফাত। রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দফায় প্রথম দিনে মামলার ৩ নম্বর সাক্ষী মোহাম্মদ আলীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
এতে মামলায় দ্বিতীয় দফায় দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত ৪ জনের জবানবন্দি গ্রহণ সম্পন্ন হওয়ায় আরও ৭৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ বাকি রয়েছে।
এর আগে, সোমবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে মামলার ১৫ আসামিকে প্রিজেন ভ্যান করে কড়া পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়।
পিপি ফরিদুল বলেন, সোমবার মামলায় আদালতের চতুর্থ সাক্ষী হিসেবে কামাল হোসেন জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে বিকেল অবধি আসামিদের আইনজীবীরা সাক্ষীকে জেরা সম্পন্ন করেছেন। এতে মামলায় এ পর্যন্ত প্রথম দফায় ২ জন এবং দ্বিতীয় দফায় দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত ২ জন সাক্ষী জবানবন্দি প্রদান করেছেন। এ নিয়ে আদালতের নোটিশ প্রাপ্ত আরও ১১ জন সাক্ষীর জবানবন্দি প্রদান বাকি রয়েছে।
এদিকে, আগামী মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) আদালতে পঞ্চম সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের প্রস্তুতি রয়েছে এবং আসামিদের আইনজীবীরা যদি অপ্রাসঙ্গিক কোনো বিষয় অবতারণা না করেন তাহলে মামলার বিচার কাজ দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে বলে জানান, রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী।
অন্যদিকে, আদালতে চতুর্থ সাক্ষীর জবানবন্দি প্রদানকারী কামাল হোসেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে নিজের পেশাগত পরিচয় যথার্থভাবে প্রমাণ করতে পারেননি বলে দাবি করেছেন মামলার অন্যতম আসামি ওসি প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশগ্রপ্ত।
রানা বলেন, কামাল হোসেন আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসেছিল সিএনজি (অটোরিক্সা) চালক পরিচয় দিয়ে। তিনি (কামাল) যে সিএনজি চালক এবং ঘটনাস্থলে সিএনজি গাড়ি অবস্থান করছিল এমন কোনো নির্দশনপত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দি দেওয়ার সময় প্রমাণ করতে পারেননি। তেমনি সেই বিষয়টি (পেশাগত পরিচয় ও ঘটনাস্থলে গাড়ি নিয়ে অবস্থান করা) আদালতে জবানবন্দি প্রদানের সময়ও প্রমাণ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।
তবে আদালতের নির্দেশনা থাকায় সাক্ষীর জবানবন্দি ও আসামিদের আইনজীবীর জেরার অপরাপর বিষয়বস্তু নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করে আসামি ওসি প্রদীপের এ আইনজীবী।
প্রসঙ্গত, গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় গত বছর ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
গত বছর ১৩ ডিসেম্বর র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ানের তৎকালীন দায়িত্বরত সহকারি পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। গত ২৭ জুন আদালত ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এতে সাক্ষী করা হয় ৮৩ জনকে।