দ্রুত এগিয়ে চলেছে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী এলাকায় মাতারবাড়ী ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিকাল কোল-ফায়ার্ড পাওয়ার প্লান্ট) নির্মাণ কাজ।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আজ বাসসকে বলেন, নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলায় সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে মাতারবাড়ী কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তায়নের ফলে বিদ্যুতের চাহিদা ও যোগানের ব্যবধান কমাবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং আধুনিক প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলবে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
নসরুল হামিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও সাহসী নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছে কারণ এটি শিল্পায়নের পাশাপাশিদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
তিনি বলেন, মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রথম ইউনিট ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৪ সালের জুলাই মাসে চালু হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্পের বিবরণ অনুসারে, রাষ্ট্রায়ত্ত কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (সিপিজিসিবিএল) ১২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লাভিত্তিক প্লান্ট নির্মাণের জন্য জাপানের সুমিতোমো কর্পোরেশন, তোশিবা কর্পোরেশন ও আইএইচআই কর্পোরেশনের কনসোর্টিয়ামের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
কোম্পানির প্রধান উদ্যোগ হল কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নে ২টি ৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা।
প্রকল্পটিতে কয়লা আমদানি, কয়লা সংরক্ষণ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, জনপদ উন্নয়ন, গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন, সঞ্চালন সুবিধা নির্মাণ এবং সড়ক যোগাযোগের জন্য জেটি ও কয়লা হ্যান্ডলিং সুবিধা নির্মাণ অন্তভুর্ক্ত রয়েছে।
প্রকল্পের পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন (ইএসআইএ) এবং সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ২০১৩-২০১৪ সালে পরিচালিত হয় এবং বাংলাদেশ সরকার ও জাইকা (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি)-র মধ্যে ২০১৪ সালের ১৬ জুন একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুযায়ী প্রকল্পের আনুমানিক খরচ ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার থেকে এবং সিপিজিসিবিএলএর তহবিল থেকে ৭০৪৫ কোটি টাকা এবং বাকি ২৮,৯৩৯ কোটি টাকা জাইকার প্রকল্প সাহায়তা হিসেবে দেওয়া হবে।
প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রকল্পটি গ্রাহকদের সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহে বৈচিত্র আনতে অবদান রাখা।’
হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দু’টি ইউনিট ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে এবং পরে আরও দুটি ইউনিট মাতারবাড়ী থেকে আরও ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।
তিনি বলেন, ‘নির্মাণ কাজ দ্রুত চলছে, যার প্রথম ইউনিটটি নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ৬০০ মেগাওয়াট কিদ্যুৎ উৎপাদন করবে এবং ৬০০ মেগাওয়াটের অন্য ইউনিটের নির্মাণ কাজ একই বছরের জুলাই মাসে সম্পন্ন হবে।’
বিদ্যুৎ সেলের মহাপরিচালক প্রকোশলী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, মাতারবাড়ীকে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করতে সরকারের উদ্যোগ শুধু এলাকায় নয়, সারা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তরান্বিত করবে।
তিনি বলেন, আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি (ইউএসসিটি)-ভিত্তিক মাতারবাড়ী কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ জ্বালানি সক্ষমতা রয়েছে। সাধারণ কয়লার ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গড় জ্বালানি সক্ষমতা ৩৪ শতাংশ।