পাঁচ মাস আগে যে নির্বাচন হচ্ছে সেটাও আল্লাহর হুমুকেই হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আজ রোববার (৩ ডিসেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল স্থগিত চেয়ে রিটের শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন আদালত।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিলের বৈধতা প্রশ্নে রিটের ওপর প্রথম দিনের শুনানি শেষ হয়েছে আজ। হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়। পরে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য আগামীকাল সোমবার (৪ ডিসেম্বর) দিন রাখেন আদালত।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী মো. ইউনুছ আলী আকন্দ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন।
এ বিষয়ে করা রিটের শুনানির জন্য গেলে আদালত রিটকারী আইনজীবী মো. ইউনুছ আলী আকন্দকে কিছু প্রশ্ন করেন। তবে আইনজীবী যথাযথ উত্তর দিতে না পারায় আদালত তাকে আরও প্রস্তুতি নিয়ে সোমবার আসতে বলেন। এ সময় আদালত বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে যে নির্বাচন হচ্ছে সেটাও আল্লাহর হুমুকেই হচ্ছে।’
শুনানিতে রিটকারী আইনজীবীকে আদালত প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কেন নির্বাচনে সংক্ষুব্ধ হলেন।’
তখন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘আমি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। আমরা শপথ নিয়েছি। জনস্বার্থে অনেক মামলা করে রায়ও পেয়েছি।’
তখন আদালত বলেন, ‘রিটে আপনি কি চেয়েছেন?’ আইনজীবী বলেন, ‘তফসিল স্থগিত চেয়েছি। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের আরও পাঁচ মাস সময় রয়েছে। অথচ তড়িঘড়ি করে নির্বাচন করতে চাচ্ছে কমিশন। অনেক দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি। এ অবস্থায় নির্বাচন প্রি-ম্যাচিউরড।’
ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নির্বাচন করতে হলে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। মন্ত্রিসভা ছোট করতে হবে। এসব কিছুই করা হয়নি।’
হাইকোর্ট বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সংবিধানের মধ্যে থেকে তাদের সুবিধামতো সময়ে নির্বাচন দেয়ার এখতিয়ার রয়েছে। আর এক সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে তো ২০১৮ সালে সেটেল হয়ে গেছে।’
শুনানির একপর্যায়ে সংবিধানের ১২৩(৪) অনুচ্ছেদে দুর্যোগ-দুর্বিপাকের কারণে সংসদের মেয়াদ শেষে নির্বাচন প্রসঙ্গ এলে আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘সবকিছু তো আল্লাহর হুকুমে হয়।’ তখন হাইকোর্ট বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে যে নির্বাচন সেটাও তো আল্লাহর হুকুমেই হচ্ছে।’
এরপর হাইকোর্ট বলেন, ‘সংবিধানে স্পষ্ট বলা হয়েছে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।’
আদালত রিটকারী আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এটা সাংবাবিধানিক বিষয়। সংবিধানের মধ্যে থেকে শুনানি করতে হবে। আপনি ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে আসুন। আগামীকাল (সোমবার) আবারও এ বিষয়ে শুনবো।
এর আগে গত ২৯ নভেম্বর বর্তমানে একটি সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় আরেকটি সংসদ নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। রিটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিবসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয়।
এর আগে গত ২৮ নভেম্বর লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন এ আইনজীবী। বর্তমানে রাজনৈতিক সংকট চলছে উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, দেশে হরতাল-অবরোধ চলছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু ভোট করা সম্ভব নয়।
এছাড়া মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীর ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর (সময় বাড়ানো হয়েছে), আবার নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। তাহলে ট্যাক্স রিটার্ন মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা কীভাবে সম্ভব হবে।
এতে আরও বলা হয়, হরতাল-অবরোধের ফলে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত নন। এ অবস্থায় নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানানো হয় নোটিশে।