![](https://bangla.thenewstimesbd.com/wordpress/wp-content/uploads/2023/03/gulistan-2.jpg)
রাজধানীর গুলিস্তানের নর্থ সাউথ রোডে সিদ্দিক বাজারে ভবনে বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত দুই নারীসহ ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনায় প্রায় ৪৩ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
আজ দুপুর ২টায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদরদপ্তরের ডিউটি অফিসার রাকিবুল হাসান বাসস’কে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাশেদ বিন খালিদ জানান, গুলিস্তানের নর্থ সাউথ রোডের সিদ্দিক বাজারে অবস্থিত দু’টি ভবন বিস্ফোরণের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ‘ দি লাইফ সেভিং ফোর্স বাহিনী। তদন্ত কমিটির বাকি ৩ সদস্যের নাম পরে জানানো হবে বলে তিনি জানান। ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে আগামি ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করে তাদেরকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার খবর পেয়ে গতরাতে হতাহতের দেখতে ঢামেক হাসপাতালে গিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি।
এদিকে, গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধারকাজ শুরু করেছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। তবে, ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এখনো ভেতরে প্রবেশ করতে পারছেন না উদ্ধারকারী দল। এই মুহূর্তে ধসে যাওয়া ভবনের নিচের মালামাল সরাচ্ছেন তারা। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ উদ্ধার কাজ শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাশাপাশি উদ্ধারকাজে সহায়তা করছে র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, রেড ক্রিসেন্ট, আরবান কমিউনিটি সেচ্ছাসেবী টিম ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনাস্থল এবং আশপাশের কয়েক মিটার এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক বাবুল চক্রবর্তী সকালে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সকাল ৯টা থেকে আবার উদ্ধার কাজ শুরু করেছি।
বিস্ফোরণের ঘটনায় ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সকাল থেকেই ওই এলাকা নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রয়েছে র্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। তবে, পাশের এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
অপরদিকে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের (মিডিয়া সেলের) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার বাসস’কে জানান, রাজধানীর গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া বাস স্ট্যান্ডের বিপরীত দিকের সিদ্দিক বাজার এলাকায় দু’টি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায় এবং তারা সেখানে উদ্বার অভিযান চালায়।
এদিকে, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জন দগ্ধ হয়ে ভর্তি হয়েছেন।
তিনি জানান, অগ্নিদগ্ধ হয়ে যারা ভর্তি হয়েছেন তারা হলেন- মো. হাসান (৩২), ইয়াছিন (২৬), মুসা (৪৫) খলিল (৩৬) আজম (৩৬) উলি শিকদার (৫৫) আল আমিন (২৫) বাচ্চু মিয়া (৫৫) ও মোস্তফা (৫০)।
ডা. সামন্তলাল সাংবাদিকদের জানান,দগ্ধদের মধ্যে মুসার ৯৪ শতাংশ, আজমের ৮০ শতাংশ, ইয়াসিনের ৫০ শতাংশ, বাচ্চু মিয়ার ৪০ শতাংশ, উলি শিকদারের ২০ শতাংশ, আল আমিনের ১৫ শতাংশ, হাসানের ১২ শতাংশ ও খলিলের ৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। মোস্তফার কিছুটা দগ্ধসহ অন্য ইনজুরি আছে। এদের চার জনের অবস্থা গুরুতর। ইয়াসিন ও হাসানকে আইসিইউতে নেয়া হয়েছে।
পুলিশ ও ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিস্ফোরণে নিহতরা হলেন মো. সুমন (২১), ইসহাক মৃধা (৩৫), মুনসুর হোসেন (৪০), মো. ইসমাইল (৪২), আল আমিন (২৩), রাহাত (১৮), মমিনুল ইসলাম (৩৮), নদী বেগম (৩৬), মাঈন উদ্দিন (৫০), নাজমুল হোসেন (২৫), ওবায়দুল হাসান বাবুল (৫৫), আবু জাফর সিদ্দিক (৩৪), আকুতি বেগম (৭০), মো. ইদ্রিস (৬০), নুরুল ইসলাম ভূইয়া (৫৫), হৃদয় (২০), সম্রাট ও সিয়াম (১৮)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পথচারীরা জানান, বিস্ফোরণে ভবনের সবগুলো তলায় জানালার কাঁচ ভেংগে গেছে। পাশে থাকা আরও দু’টি ভবনও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
আজ দুপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জানান, বিস্ফোরণের ঘটনায় চিকিৎসাধীন ১০ জনের কেউই শঙ্কামুক্ত নয়।
সামন্ত লাল সেন বলেন, গতকালের দুর্ঘটনায় আমাদের এখানে ১১ জন রোগী ছিল, তার মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেলে ট্রান্সফার করা হয়েছে; কারণ তার বার্ন নাই।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যে ১০ জন আছে তার মধ্যে তিনজন আইসিইউতে, দুইজন লাইফ সাপোর্টে রয়েছে। আর বাকিরা আছেন এসডিইউতে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারো শরীরের ৮০ পার্সেন্ট, কারো ৯০ পার্সেন্ট; কারো ৫০ পার্সেন্ট দগ্ধ হয়েছে। সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। আমরা কাউকেই শঙ্কামুক্ত বলতে পারব না।
ডিএমপির লালবাগ জোনের জাফর হোসেন আজ সাংবাদিকদের জানান, বিস্ফোরণের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে গঠন করা হয়েছে। ভবনের বিমগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গতকাল রাতে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছিল। তিনি জানান, এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ কমিটির একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের মতামত ও সুপারিশের ভিত্তিতে উদ্ধার কার্যক্রম চলবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে