প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে কোনো তুলনা হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি জনগণের কল্যাণ চায় না। তারা মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। আর আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল, জনগণের কল্যাণে কাজ করে। তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কোনো তুলনা হতে পারে না।’
শেখ হাসিনা আজ অপরাহ্নে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। এর আগে সমাবেশস্থলে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং অপর পাঁচটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা নিজের দলের গঠনতন্ত্র মানে না, নিয়ম মানে না, আইন মানে না, তো সেই দলের সাথে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে কীভাবে। যারা ঐ দুই দল বড় দল বলেন তারা ভুল করেন।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন। এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে এ দল গড়ে উঠেছে। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নতি হয়। আর বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা যে দলগুলো আছে, জামাত এরা কারা?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারি জিয়া, সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছে। উচ্চ আদালতের রায় আছে। ক্ষমতায় বসে থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল তৈরি করেছিল সেই দল হচ্ছে বিএনপি। এরা মানুষের কল্যাণও চায় না মঙ্গল ও চায় না। এরা মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ায়, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। কাজেই এদের সাথে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে না।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং স্বাধীনতার সুফল আজ বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাবে ইনশাল্লাহ।
সরকার প্রধান বলেন, এখানে একটি কথা বলতে চাই ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ৩শ’ সিটের মধ্যে মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল। আর আওয়ামী লীগ মহাজোট করেছিল। তারা পেয়েছিল বাকী সবগুলো আসন। তাহলে এই দুই দল এক পর্যায়ের হয় কীভাবে।
বিএনপি সরকারের আমলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলা, ৬৩ জেলার ৫শ’ জায়গায় একযোগে বোমা হামলা, দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন, ওরা মানুষকে কিছু দেয়নি বরং মানুষের অর্থকরী সব লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে গেছে। তারা এমন একটি রাজনৈতিক দল যারা নিজেরা নিজেদের গঠনতন্ত্রও মানে না।
‘বিএনপি’র গঠনতন্ত্রেই আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামী দলের নেতা হতে পারে না। আর বিএনপি একজন নেতাও কি পায় না যে অন্তত সাজাপ্রাপ্ত আসামী নন, খালেদা জিয়া এবং তাঁর ছেলে (তারেক রহমান) দু’জনেই সাজাপ্রাপ্ত আসামী। খালেদা জিয়ার ছেলে যাকে নেতা বানিয়েছে সে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত,’ বলেন তিনি।
কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
জনসমুদ্রে পরিণত হওয়া এ সমাবেশে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ আয়নাল হোসেনের সঞ্চালনায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এর আগে, দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে সমাবেশস্থলে প্রধানমন্ত্রী এসে পৌঁছালে গগণ বিদারী শ্লোগান ও করতালির মাধ্যমে সমাবেশে আগত জনতা তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। প্রধানমন্ত্রী ও হাত নেড়ে এর উত্তর দেন।
এদিকে কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে সমগ্র জেলাজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
শেখ হাসিনা, যিনি গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য, তিনি ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮-এ একটি নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার চার বছর পর আজ এখানে জনসমাবেশে ভাষণ দেন।
কোটালীপাড়া উপজেলার শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠে আগের নির্বাচনী জনসভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
৪৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে: পাইপলাইনে পানি সরবরাহের দু’টি গ্রামীণ প্রকল্প। এর একটি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নে এবং অপরটি কোটালীপাড়া উপজেলার রামশিল ইউনিয়নে। গোপালপুর ইউপি অফিস-কাজুলিয়া ইউপি ভায়া বোরাইহাটি পোলশাইর বাজার সড়কে ২৪ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ ও কুশলি জিসি-ধারাবাশাইল জিসি ভায়া মিত্রাডাঙ্গা সড়কে ৯৯ মিটার গার্ডার ব্রিজ, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সোনাখালি সড়ক, কোটালীপাড়ায় চারতলা বিশিষ্ট শুয়াগ্রাম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনা আদর্শ ডিগ্রী কলেজের তিনতলা বিশিষ্ট গার্ল হোস্টেল (১শ’ শয্যা), কোটালীপাড়া এসএন ইনস্টিটিউটের চারতলা বিশিষ্ট শিক্ষা ভবন, কোটালীপাড়া পৌর কিচেন মার্কেট ও কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ ভবন নির্মাণ, কোটালীপাড়া উপজেলার ভাঙ্গারহাট তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল লাইব্রেরি, কোটালীপাড়ায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পৈতৃক বাড়িতে ‘মুক্তমঞ্চ’, কোটালীপাড়ার উত্তর কোটালীপাড়া রামমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বড় বাজারে একতলা বাণিজ্যিক ভবনকে ১০তলায় উন্নীতকরন ভবনের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী গণপূর্ত বিভাগের আওতায় গোপালগঞ্জ জেলা তথ্য কমপ্লেক্স ভবন ও কোটালীপাড়া মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের আওতায় রাধাগঞ্জ ইউনিয়ন ভাঙ্গারহাট বাজার উন্নয়ন ও কোটালীপাড়া উপজেলায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ম্যুরাল নির্মাণ এবং কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের আওতায় ১১টি ইউনিয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ।