You are here
Home > সারা দেশ > সুনামগঞ্জে কমছে না পেঁয়াজের দাম

সুনামগঞ্জে কমছে না পেঁয়াজের দাম

ভারত থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বন্ধের ঘোষণায় ঘন্টায় ঘন্টায় বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গত বৃহস্পতিবার যে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই একই পেঁয়াজ পরদিন শুক্রবার থেকেই বিক্রি হচ্ছে ১৮০- ২০০ টাকা। এই সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হলে পরে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে নেমেছে। ভারত থেকে আগের এলসি করা পেঁয়াজ দেশে আনা হয়েছে। এরপরও বাজারে কমছে না পেঁয়াজের ঝাঁজ।

ভোক্তারা বলছেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ মজুদ আছে। ১৫/২০ দিন বিক্রি করলেও শেষ হবেনা। অথচ, কম দামে কেনা পেঁয়াজ অতি মুনাফার আশায় চড়া দামে বিক্রি করছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। জরিমানা করেই দায় সারছে। চিহ্নিত সিন্ডিকেটের কাছে ক্রেতারা যেমন অসহায়, তেমনই কর্তৃপক্ষও জিম্মি আছেন বলে ভোক্তারা মনে করছেন।

তবে পাইকারি বিক্রেতাদের দু’ একজন নতুন জাতের দেশি পেঁয়াজ ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন এবং খুচরা বিক্রেতারা ১২০ টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ শহরের খুচরা বাজার ও পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি নতুন জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ১১০ টাকা এবং খুচরা ১২০ টাকা, যা গতকাল পর্যন্ত ছিল ১৮০-২০০ টাকা। পাশাপাশি প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ সকালে বিক্রি হচ্ছিল পাইকারি প্রতি কেজি ১৬০-১৭০ টাকা এবং খুচরা প্রতি কেজি ১৮০ টাকা। একই পেঁয়াজ দুপুরে প্রতি কেজি পাইকারি বিক্রি হচ্ছিল ১৩০-১৩৫ টাকা এবং খুচরা বিক্রি হচ্ছিল, ১৪০-১৫০ -১৬০-১৮০ টাকায়।

অর্থাৎ, বাজারে সাংবাদিকদের আনাগোনা, সরকারি সংস্থা থেকে তদারকির ভয়েই পাইকারি বিক্রেতারা ধাপে ধাপে দাম কমিয়েছেন। এতে করে খুচরা বিক্রেতা সহ ক্রেতারা পড়েছেন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।

শহরের আড়ৎ পট্টি এলাকার জীবন আলী স্টোর থেকে ২০ কেজি এলসি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৭০ টাকা দরে কিনেছেন অটিস্টিক স্কুল মার্কেটের খুচরা বিক্রেতা শরিফ স্টোর এর মো. শরিফ। তিনি ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। অথচ, শহরে প্রায় দোকানে এলসি প্রতি কেজি ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এমন অবস্থায় ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন কেন? জানতে চাইলে মো. শরিফ বললেন, তিনি সকালে ২০ কেজি পেঁয়াজ ১৭০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করেছেন, যেকারণে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। কার নিকট থেকে কিনেছেন জানতে চাইলে তিনি বললেন, আড়ৎ পট্টি এলাকার জীবন আলী স্টোর থেকে।

জীবন আলী স্টোর এর বিক্রেতাদের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে বললেন, সকাল সাড়ে নয়টায় ১৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন, তারপর ১৫০ টাকা এবং বিকেলের দিকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি করেছেন।

একই দিনে ধাপে ধাপে দাম কমিয়ে বিক্রি করছেন কেন, জানতে চাইলে জীবন আলী স্টোর এর বিক্রেতারা বললেন, আগামীকাল থেকে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। থাকলে লোকসান গুনতে হবে, যেকারণে দ্রুত বিক্রি করছি।

মোল্লা ট্রেডার্স এর মখলিছুর রহমান বললেন, আমি গতকাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মিটিং এ বলে এসেছি যে,১১০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করব,সেই কথা মোতাবেক ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।

তিনি বলেন, আগামী কাল থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারব।

শহরে বাজার করতে আসা মাহদি হাসান বলেন, শহরে জেল রোড এলাকা,জগন্নাথ বাড়ী রোড, ট্রাফিক পয়েন্টের ১৫/২০ টি খুচরা দোকানে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম ১৬০-১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তারপর আড়ৎ পট্টি এলাকার মোল্লা ট্রেডার্স এর মখলিছুর রহমান বলেন, দেশি পেঁয়াজ ১১০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করছেন এবং খুচরা ১২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আমি দাম জানার পর দেশি পেঁয়াজ এক কেজি ১২০ টাকায় কিনেছি।

শহরে বাজার করতে আসা আরেক রিকশা চালক করম আলী বলেন, তিনদিন ধরে ঘরে পেঁয়াজ নাই। পেঁয়াজের পাতা ১০ টাকার কিনেছি।দামের কারণে পেঁয়াজ কিনছি না। এইভাবে কয়দিন চলা যায়।আলুর দামও বেশি। সকাল – সন্ধ্যা জিনিসপত্রের দাম বাড়ে,কমেনা। আমরার কাম শেষ।

এদিকে শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট, জেল রোড সহ ওয়েজখালী এলাকায় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৫০-১৬০-১৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।

ভোক্তারা পড়ছেন বিপাকে। বাজার মনিটরিং জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে জেলা মার্কেটিং অফিসার অনুপা চক্রবর্তী বলেন, আমরা কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পন্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে তৎপর আছে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় যখনই আপডেট তথ্য পাব সেই মোতাবেক কাজ করব।

তিনি বলেন, আজকেও সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বাজার মনিটরিং করা হয়েছে, ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করা হয়েছে।

আমরা প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করছি এবং করে যাব।

এদিকে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আল আমিন বলেন, ব্যবসায়ীদের কিছু অনৈতিক চর্চা আছে। কিছু ব্যবসায়ী স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তারা অতিরিক্ত মুনাফা করেছেন এবং করছেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে, পন্যের সরবরাহ ঠিক রেখে ন্যায্য মূল্যে ক্রেতাদের নিকট পৌঁছে দেওয়া। এইজন্য কিছু ব্যবসায়ী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তারা ১১০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করবেন এবং বিক্রি করছেন।
আগামী চার/ পাঁচ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারবে আশা করছি। তবে ক্রেতারা যেন,দেশি পেঁয়াজটা কিনেন,কারণ বাজারে দেশি পেঁয়াজ কমে বিক্রি হচ্ছে।

Similar Articles

Leave a Reply

Top