You are here
Home > সারা দেশ > সড়ক ও বসতঘর নদীতে বিলীন, ঝুঁকিতে বিদ্যুতের খুঁটি

সড়ক ও বসতঘর নদীতে বিলীন, ঝুঁকিতে বিদ্যুতের খুঁটি

মোঃ রায়হান, পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ

‘এই তো দ্যাহেন সব তো নদীতে যায়, কোম্মে থাকমু থাহইন্না তো আর জাগা নাই। নদীতে ভাঙলে আর কি হরতে পারে..? এই পর্যন্ত ৪/৫ বার ঘর পালডাইছি, এই দ্যাহেন এইহানে হোশ্যা আছেলে, সব নদীতে গেছে। এভাবেই হতাশার সুরে কথাগুলো বলছিলেন পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ষাটোর্দ্ধ বৃদ্ধা ময়না বেগম। কচাবুনিয়া নদীর ভাঙনে গত কয়েক বছরে হারিয়েছে বসতবাড়ি, কৃষি জমি সহ মূল্যবান গাছপালা। আর এখন যে কোন সময় বিলীন হতে পারে ময়না বেগমের বর্তমান ঘরটিও।

এই এলাকার নদী পাড়ের অধিকাংশ মানুষের জীবনচিত্র এমনই। কথা হয় একই এলাকার কৃষক খলিলুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, ‘জন্মের পর আমি এই নদী ২০/২৫ হাত এর মতো দেখছি, এপার থেকে ঢিল মারলে ওপার নিতে পারছি। কিন্তু এই নদী এখন আস্তে আস্তে অনেক বড় হইতে হইতে হাটা চলার পথই নষ্ট হইয়া গেছে। গাড়ী ঘোড়া চলাচলে সমস্যা হইতেছে । অনেকের বাড়ী ঘরও বিলীন হইয়া যাইতেছে।’

পটুয়াখালী সদর উপজেলার কচাবুনিয়া নদীর ভাঙনে দিন দিন নিঃস্ব হচ্ছেন বদরপুর ও মৌকরন ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। গত কয়েক দশক যাবত এই ভাঙন চললেও প্রতিকারে তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি, ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে ইউনিয়নের প্রধান সড়ক সহ জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের খুঁটিও।

সম্প্রতি সময়ে ভাঙ্গন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভাঙ্গনের কারনে পটুয়াখালী-বরিশাল ১৩২ কেভি জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ১৫৭ নং বিদ্যুৎতের খুটিটি রয়েছে হুমকির মুখে। বেহাল অবস্থায় রয়েছে মৌকরন ইউনিয়নের চলাচলের প্রধান সড়কটি। সড়কের অর্ধেক নদী গর্ভে ইতিমধ্যে বিলীন হয়েছে।

মৌ করন ইউনিয়নের নদীর পাড়ের সড়ক ব্যবহার করেন মৌকরন বিএলপি ডিগ্রি কলেজ, মৌকরন কারিগরি কলেজ, মৌকরন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মোকরন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও ইউনিয়নের প্রধান বাজারসহ বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা ও একাধিক ইউনিয়নে চলাচল করা যায়। ফলে সড়কটি ভেঙ্গে গেলে এই ইউনিয়নের মানুষকে দীর্ঘ মেয়াদী বিড়ম্বনার মধ্যে পরতে হবে।

পাশপাশি নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে ভাঙ্গন সৃষ্টি হওয়ায় কচাবুনিয়া নদীর উপর নির্মিত মৌকরন ব্রীজটিও হুমকির মুখে পরেছে।

জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন হুমকির বিষয়ে পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অফ বাংলাদেশ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান পলাশ বলেন, ‘ঝুঁকি বিবেচনা করে ওই খুটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নদী পাড়ে বালির বস্তা এবং পাইল করার জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। নদীর পানি কিছুটা কমলে কাজটি শুরু করা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন জানান, নদী ভাঙ্গন ও জনগুরুত্বের কথা বিবেচনা করে ইতিমধ্যে ভাঙ্গন এলাকায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জরিপ কাজ শুরু হয়েছে। জরিপ শেষে পরিকল্পনা ও ডিজাইন তৈরী করে অনুমোদনের জন্য জন্য প্রেরন করা হবে। অনুমোদন পেলে প্রয়োজনীয় টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ শুরু করা হবে।

গত কয়েক বছর আগে এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এই এলাকায় জরুরী রক্ষনাবেক্ষন এর নামে কিছু কাজ করলেও তা খুব বেশি কাজে আসেনি। ভাঙ্গন প্রতিরোধে তাইতো টেকশই ও পরিকল্পিত উন্নয়নের দাবী স্থানীয়দের।

Similar Articles

Leave a Reply

Top