টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের লাল মাটিতে তুলা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। আনারস, কলা, আদা, কচু, পেঁপে হলুদ কফিসহ নানা কৃষি ফসল চাষ হয়ে থাকে। এক সময় মধুপুর বন এলাকায় কার্পাস তুলা হতো। আবার শিমুল তুলা হতো। এলাকার মানুষের মৌলিক চাহিদা আর লেপ তোষক বালিশে ব্যবহার করত এসব তুলা। কালের পরিবর্তনে আধুনিক চাষাবাদে স্বাধীনতার পর থেকে শুরু হয়েছে তুলা চাষ। লাল মাটির মধুপুরে অন্যান্য ফসলের সাথে সাথে হচ্ছে তুলা চাষও। লাল মাটির উর্বরতা শক্তি ভালো থাকায় ফলনও ভালো পাচ্ছে চাষীরা।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের মধুপুর ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, মধুপুর – ঘাটাইল উপজেলায় এ অর্থ বছরে ১৫০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হয়েছে। এতে দুই উপজেলায় ২১৮ জন প্রদর্শনী ও সাধারণ ভাবে তুলা চাষ করেছেন। এ চাষের জন্য তুলা উন্নয়ন বোর্ড প্রদর্শনীতে সার বীজ কীটনাশকসহ অন্যান্য সহযোগিতা করছে। আবার সাধারণ ভাবে চাষ করা কৃষকদের লোন দিচ্ছে সার বীজ কীটনাশকসহ পরিচর্যার জন্য। প্রতি বিঘা জমিতে ১৫/১৬ মন তুলা উৎপাদন হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে মিল রেখে নির্ধারিত হয় এ ফসলের দাম। গত বছর তিন হাজার আটশ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। তবে তুলা বিক্রি করতে কোন ঝামেলা নেই। নগদ দামে কিনে নেয় এসোসিয়েশন। এখানকার তুলা কুষ্টিয়ার পাইকারদের কাছে বিক্রি হয়ে থাকে। কুষ্টিয়া নিয়ে বীজ একদিকে আর তুলা আরেক দিকে বাছাই করা হয়। তুলা বিভিন্ন কোম্পানিরা কিনে নিয়ে গার্মেন্টসের জন্য সুতা তৈরি করে।
তুলা চাষের ইতিহাস থেকে জানা গেছে, স্বাধীনতা আগে বাংলাদেশে তুলা উৎপাদন হতো না। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেন। পাটচাষের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে নেয়া ৩২৫ জন চাষীকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশৈংকেলে ৭৯৬ একর জমি তাদের মধ্যে বরাদ্দ করেন তুলা চাষের জন্য। এর মধ্যদিয়ে দেশে তুলা চাষের সূচনা ঘটে। বর্তমানে তুলাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক তন্তুর গবেষণা, সংরক্ষণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও তুলাচাষ সম্প্রসারণের জন্য কাজ শুরু করেছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।
সরজমিনে শরীফের তুলার জমিতে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে ফুল ও তুলার গুটি ধরেছে। সামাজিক বনায়নের গাছের বাগানে মিশ্র ফসল হিসেবে তুলা চাষ করেছে। জমির ফাঁকে ফাঁকে হলুদ আঁঠালো ফাঁদ ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে জৈবিক উপায়ে পরিবেশ সম্মত ভাবে তুলার চাষ করা হচ্ছে ।
স্থানীয়রা জানান, বনের প্লটে তুলা সাথী ফসল। বাড়তি আয়ের জন্য এটি চাষ করা হয়। পরাগায়নের ফলে তুলার গুটির পরিমানও ভালো। এখানে ৮ বিঘা জমির তুলা চাষ শরীফ ও তার ভাই রেজাউল করিম করেছেন।
পঁচিশ মাইল এলাকার তুলা প্রদর্শনীর চাষী শরিফুল ইসলাম শরীফ জানান, তিনি প্রদর্শনী নিয়েছেন আবার নিজের উদ্যোগেও তুলা চাষ করেছেন। ৮ বিঘা জমিতে মধুপুর বনের সামাজিক বনায়নের প্লটে তার এ তুলা চাষ। এ বছর তিনি প্রথম চাষ করেছেন। গত জুলাই মাসে বীজ বপন করেন। এখন গাছে গাছে ফুল ফুটেছে। গাছে ঝোকা ঝোঁকা ধরেছে তুলার গুটি। তার এ পর্যন্ত ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।
তিনি জানান, বাগানে প্রয়োজন মতো কীটনাশক দিচ্ছে। প্রয়োজন মাফিক সারা বিষ দিচ্ছেন। পোকা মাকড় রোগ বালাই কম হওয়ার জন্য হলুদ আঠাঁলো ফাঁদ ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করছেন। তার আশা তিনি ভালো ফলন পাবেন।
একই গ্রামের রেজাউল করিম জানান, তিনিও তার লাল মাটির মধুপুর বনের সামাজিক বনায়নে তুলা চাষ করেছেন। তার জমির পরিমান প্রায় ৪ বিঘার মতো। সঠিক নিয়ম মত পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। দুই মাস ফলন আসবে বলে তিনি জানান।
ময়মনসিংহ তুলা উন্নয়ন বোর্ডের মধুপুর ইউনিটের ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান জানান, লাল মাটির মধুপুর ইউনিটের মধুপুর ও ঘাটাইল উপজেলায় ২১৮ জন কৃষক এ বছর তুলা চাষ করেছে। এ অঞ্চলে ১৫০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হয়েছে। কৃষকদের তুলা চাষের জন্য সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। যে সব কৃষক প্রদর্শনী নিয়ে থাকে তাদেরকে সারা বীজসহ অন্যান্য সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। সাধারণ কৃষকদেরকে সার বীজ ও অন্যান্য খরচ চালানোর জন্য লোন দেয়া হয়। তুলা বিক্রির পর এসব লোনের টাকা কর্তন করে রাখা হয়। তার মতে মধুপুর অঞ্চলের মাটি তুলা চাষের জন্য উপযোগী। এ এলাকার উৎপাদিত তুলা কুষ্টিয়ায় বিক্রি করা হয়।