You are here
Home > মতামত > করোনা সংকট সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি বিস্ময়কর গতিতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে

করোনা সংকট সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি বিস্ময়কর গতিতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে

ভয়াবহ করোনা সমকটকে পায়ে দলেই বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত গতিতে তার ছন্দে ফিরে আসছে। বিশ্ব মোড়লরা সহজে টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারে নি বলে অর্থনেতিক পুনরুদ্ধারের এই প্রক্রিয়া আরও গতি অর্জন করে উঠতে পারে নি। তা সত্বেও বাংলাদেশের মাথা পিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি গতো দু’বছরে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল। এর গতি এখন আরও বাড়ছে। মূলত: গতিময় আধুনিক কৃষি, প্রবাসী আয় এবং রপ্তানির ঘাড়ে ভর করেই বাংলাদেশের অর্থনীতি এই শক্তিমত্ততা দেখাচ্ছে।

আজ (৯ অক্টোবর) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইউএবিটি আয়োজিত ‘কভিড পরবর্তি কৃষি’র ভূমিকা বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন উদ্বোধন করার সময় প্রধান অতিথি হিসেবে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন যে গত পাঁচ বছর ধরেই মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির বিচারে এশিয়ার সবচেয়ে গতিময় দেশটির নাম বাংলাদেশ। তিনি বলেন করোনাকালেও বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৭.৮ শতাংশ হারে। চীনে তা বেড়েছে ৬.৯ শতাংশ। ভারতে ৩.১ শতাংশ। ভিয়েতনামে ৪ শতাংশ। কৃষির অসামান্য সমর্থন ছাড়াও রপ্তানি ও প্রবাসী আয় ধারাবাহিক ভাবে বাড়ার কারণে প্রচুর টাকা গ্রামে যাচ্ছে। তাই গ্রামের অর্থনীতিতে ভোগ বেড়েছে চলেছে দুর্বার গতিতে। গ্রামে কৃষি মজুরিও বাড়ন্ত। আর সেখানে মোট আয়ের ৬০ শতাংশ আসছে কৃষি সংশ্লিষ্ট অকৃষি খাত থেকে। গ্রামের অর্থনীতি আধুনিক ও বহুমুখি হবার পেছনে এই অকৃষি আয়ের ভূমিকা অসামান্য। তাই বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা রাখছে গ্রামের মানুষের এই বাড়ন্ত ভোগ প্রবনতা। তবে করোনার থাবা না পড়লে গ্রামে বিনিয়োগও আরও বাড়তো।

আর্থিক খাতের ডিজিটাল রূপান্তর, বিশেষ করে মোবাইল ভিত্তিক আর্থিক সেবা, বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতির এই গতিময়তাকে করোনাকালে দারুন সমর্থন জুগিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক বলছে এই অর্থবছরে আমাদের প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৪ শতাংশ। কয়েক মাস আগেও এর চেয়ে ঢের কম বলেছিল। এডিবি বলেছে আমাদের প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৮ শতাংশ। স্টান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক ক’দিন আগে বলেছে এই হার হবে ৭.২ শতাংশ। আমি মনে করি প্রবৃদ্ধির হার সাত শতাংশের বেশিই হবে।এই প্রবৃদ্ধি যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় সেজন্য কৃষি, এমএসএমই এবং সবুজ উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক হয় সেদিকে খেয়াল রাখা বেশ জরুরি।

বাংলাদেশের ম্যাক্রো অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, বিশেষ করে ন’মাসের সমান আমদানী সক্ষম ৪৬ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ, এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা টাকা, স্থিতিশীল খাদ্য মূল্যস্ফীতি, খুবই আশাপ্রদ ঋন-জিডিপি অনুপাত (চল্লিশ শতাংশের নীচে) গত তিন মাসে পোষাক সহ রপ্তানীর উলম্ফন (এগারো শতাংশের বেশি), বাড়তি রাজস্ব আয় (প্রায় পনেরো শতাংশ), দৃশ্যমান বৃহৎ ও অন্যান্য অবকাঠামো প্রকল্প, তরুণ আনুষ্ঠানিক শ্রমশক্তি (যার ৩৮ শতাংশই মোটামুটি লেখাপড়া জানা কম বয়েসী নারী) এবং সরকারের সুদূরপ্রসারি নীতির ধারাবাহিকতা ও সক্রিয়তা প্রবৃদ্ধির এই সাফল্য ধরে রেখেছে। চলতি অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশের বেশি হবে বলে ড. রহমান তাঁর প্রক্ষেপন জানিয়ে বলেন যে ব্যাক্তিখাতে বিনিয়োগ যাতে আরও বাড়ে সেদিকে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বাড়তি নীতি মনোযোগ দিতে হবে।

এক কোটি তিরিশ লক্ষ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের যে সমর্থন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন তার ইতিবাচক প্রভাব আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতিত পঁড়েছে। তবে সামাজিক পাটাতনের নীচের দিকের মানুষগুলোর কাছে সরকার সামাজিক সুরক্ষা দিলেও এদিকে আরও সমর্থনের প্রয়োজন রয়েছে। নতুন করে প্রণোদনার রোডম্যাপ গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

Similar Articles

Leave a Reply

Top