গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ, পাকিস্তান তুলনায় অনেক এগিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাংক আইএফএফআরএএস।
মহামারী চলাকালীন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর রাইটস অ্যান্ড সিকিউরিটি (আইএফএফআরএএস) মন্তব্য করেছে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্ব অর্থনীতি তার গভীরতম মন্দায় জর্জরিত এবং বহুপক্ষীয়তা এবং আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ছে, যা অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে যথেষ্ট বাধা সৃষ্টি করেছে।
৩০ জুলাই প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তান- আগের এক দেশ, এখন দুস্তর ফারাক’ শিরোনামের এক নিবন্ধে কিভাবে বাংলাদেশ একটি ‘অলৌকিক কাহিনি’ এবং পাকিস্তান একটি বিপর্যয়ের কাহিনি’ হলো তার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
নিবন্ধে বলা হয়, মহামারীর আগেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি ছিল; ২০১৮-১৯ সালে পাকিস্তানের ৫.৮% এর তুলনায় এটি ছিল ৭.৮ । এতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার ব্যাপক ব্যবধানের কারণ তারা তাদের জাতীয় স্বার্থকে ভিন্নভাবে উপলব্ধি করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ তার ভবিষ্যত দেখে মানব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে। এজন্য রপ্তানি বৃদ্ধি, বেকারত্ব হ্রাস, স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি, ঋণ ও বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস এবং ক্ষুদ্র ঋণের আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
আইএফএফআরএএস-এর মতে, পাকিস্তানের কাছে মানব উন্নয়ন অনেক দূরের বিষয়। তারা ‘জাতীয় শক্তির সিংহভাগ ভারতকে কাবু করতে এবং অতিরিক্ত রাষ্ট্র-কুশিলবদের লালন-পালনের জন্য নিয়োজিত করে …।’
২০২১ সালের মে মাসে কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড ৪৫.১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২১ সালের জুন মাসে পাকিস্তানের ১৭.১ বিলিয়ন ডলারের দ্বিগুণেরও বহু বেশি।
সংস্থা উল্লেখ করে আসল বিস্ময় হলো, ২০২০ অর্থবছরেও যখন মহামারীর কারণে লকডাউনের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে পড়ে, তখনও বাংলাদেশ ৫.২৪% প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ৯% বৃদ্ধি পেয়ে ২,২২৭ ডলারে উন্নীত হয়। এদিকে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় হলো ১,৫৪৩ ডলার। ১৯৭১ সালে, পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে ৭০% বেশি সমৃদ্ধ ছিল; আজ, বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে ৪৫ বেশি সমৃদ্ধ বলে এই বৈশ্বিক থিংক ট্যাংক উল্লেখ করে।
সংস্থা বলেছে, সামষ্টিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৫০ বছরে ২৭১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের সফল যাত্রা একটি ভালো উদাহরণ এবং মাত্র দুই দশকে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে।
নিবন্ধে বলা হয়, গত ২০ বছরে, বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পাকিস্তানের তুলনায় আড়াই গুণ।
বাংলাদেশে হাজার হাজার পোশাক কারখানা রয়েছে, অথচ এটি এমন একটি দেশ যেখানে তুলা জন্মে না। কিন্তু কয়েকশ মিলিয়ন ডলার মূল্যের তুলা আমদানি করে বাংলাদেশী কারখানাগুলো ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যেও তৈরি পোশাক আকারে রপ্তানি করছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তান-তুলা উৎপাদনকারী দেশ হওয়া সত্ত্বেও পোশাক ও বস্ত্র পণ্যের রপ্তানি ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি আরও মন্দদিক হলো পাকিস্তান এখন তুলা আমদানি করছে।
নিবন্ধে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে, সামন্ত ও উপজাতীয় কাঠামোর কারণে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে উদ্ভাবন ও অঙ্গীকারে অভাবে দেশটি তার কৃষি সম্পদ, বিশেষ করে বস্ত্র ও টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি বাড়াতে তুলার সদ্ব্যবহার করতে অক্ষম।