চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চালু হয়েছে ইলেকট্রনিক গেট। আর এ ই-গেট দিয়ে সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ডে সম্পন্ন করা যায় একজন যাত্রীর ইমিগ্রেশন। মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইলেকট্রনিক গেটের (ই-গেট) উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বের ইমিগ্রেশন সেক্টরে সর্বাধুনিক সংযোজন হচ্ছে ই-পাসপোর্ট। এই পাসপোর্টধারীকে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হতে খুবই সামান্য সময় ব্যয় করতে হয়। ই-পাসপোর্টে ই-ভিসা থাকলে ওই যাত্রীকে ইমিগ্রেশন অফিসারেরই মুখোমুখী হতে হয় না। ই-গেট ব্যবহার করে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সহায়তায় যাত্রীর সব তথ্য যাছাই করে তাৎক্ষণিকভাবে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়। এ জন্য পাসপোর্টে কোন সিল দেয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। ব্যবস্থাও থাকে না। তবে সাধারণ এমআরপি পাসপোর্টধারীরা এই সুবিধা পাবে না। শুধুমাত্র ই-পাসপোর্টধারী যাত্রীরাই ই-গেট ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।
এক্ষেত্রে প্রথমে ই-গেটের প্রবেশপথে ই-পাসপোর্টে প্রথম পৃষ্ঠায় যেখানে ছবি ও অন্যান্য তথ্য এবং বারকোড রয়েছে সেই পৃষ্ঠাটি স্ক্যান করতে হবে। স্ক্যানের সাথে সাথে তথ্যগুলো স্বয়ংক্রীয়ভাবে যাছাই করা হবে। সব ঠিক থাকলে ই-গেটের প্রথম ধাপ খুলে যাবে। এরপর দ্বিতীয় ধাপের সামনে নির্দিষ্ট স্থানটিতে দাঁড়িয়ে মাথার উপর বরাবর থাকা ক্যামেরার দিকে তাকাতে হবে। ক্যামেরাযুক্ত ফেসিয়াল রিকগনিশনের মাধ্যমে পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে যাত্রীর তাৎক্ষণিক পাওয়া মুখমণ্ডল মিলে গেলে দ্বিতীয় গেটও খুলে যাবে। সার্ভার এবং সিস্টেম ঠিক থাকলে সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে এই দুইটি ধাপ সম্পন্ন হবে। একই সাথে সম্পন্ন হবে যাত্রীর ইমিগ্রেশন। তবে কোনও কারণে ই-পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে বর্তমান মুখমণ্ডল না মিললে ই-গেট খুলবে না। সেক্ষেত্রে যাত্রীকে ইমিগ্রেশন অফিসারের মুখোমুখী হয়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে হবে। তবে যেসব দেশে ই-ভিসা নেই, সেখানের ভিসা যাছাই করতে ইমিগ্রেশন অফিসারের কাছে গিয়ে ম্যানুয়েলি কাজ সারতে হবে।
জানা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম এ ধরনের গেট স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিমানবন্দর এ সুবিধার আওতায় আসবে। ই-গেট চালুর মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশ করল চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। প্রথম ধাপে বিদেশ ফেরতদের জন্য তিনটি এবং বিদেশগামীদের জন্য তিনটিসহ মোট ৬টি গেট স্থাপন করা হয়েছে এখানে। বিদ্যমান লোকবল দিয়েই ই-গেট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়েছে। ২০২০ সালে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ, যা দক্ষিণ এশিয়াতেই প্রথম। এ পাসপোর্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী। এখন থেকে আন্তর্জাতিক যাতায়াতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভোগান্তিহীন যাতায়াত নিশ্চিত হবে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার তাসলিম আহমেদ জানান, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে সব তথ্য যাচাই হলে খুলবে প্রথম ধাপ। এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যামেরাযুক্ত ফেসিয়াল রিকগনিশনের মাধ্যমে পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে যাত্রীর তাৎক্ষণিক পাওয়া মুখমণ্ডল মিলানো হবে। মুখমণ্ডল মিলে গেলে খুলে যাবে দ্বিতীয় গেটও। সার্ভার এবং সিস্টেম ঠিক থাকলে ২০-২২ সেকেন্ডের মধ্যেই একজন যাত্রীর ইমিগ্রেশন শেষ হবে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
তিনি জানান, কোনও কারণে ই-পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে বর্তমান মুখমণ্ডল না মিললে ই-গেট ব্যবহার করা যাবে না। এরপরও যাত্রীকে চূড়ান্ত অনুমতির জন্য ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার কাছে যেতে হবে। কারণ, পাসপোর্টের তথ্য ই-গেটে ইলেকট্রনিক্যালি যাচাই করা হলেও ই-ভিসা সব দেশে নেই। তাই সেই ভিসা যাচাই করতে হয় ম্যানুয়ালি। যাচাই করে এর বিপরীতে সিল, স্বাক্ষর দিতে হয় ইমিগ্রেশন দপ্তরকে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক আবু সাঈদ বলেন, বিভিন্ন দেশের ভিসা পদ্ধতি ভিন্ন হওয়ায় যারা দেশের বাইরে যাবেন সেসব যাত্রীকে প্রথমে ম্যানুয়ালি কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তবে ই-পাসপোর্টধারী যেসব প্রবাসী দেশে ফিরবেন তারা খুব সহজেই ইমিগ্রেশন পার হতে পারবেন।
উল্লেখ্য, বিশ্বের সর্বাধুনিক ই-পাসপোর্ট রয়েছে পৃথিবীর ১১৯টি দেশে। ২০২০ সালের ৮ জুলাই চট্টগ্রামে ই-পাসপোর্ট প্রদান শুরু হয়। বর্তমানে এমআরপি’র (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) পাশাপাশি ই-পাসপোর্ট প্রদান করা হচ্ছে। ই-পাসপোর্ট প্রবর্তনের ধারাবাহিকতায় গত ৭ জুন সর্বাধুনিক স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থা বা ই-গেট ব্যবস্থা চালু করা হয়। শুরুতে ঢাকা আন্তর্র্জাতিক বিমানবন্দরে ই-গেট স্থাপন করা হলেও এখন থেকে চট্টগ্রামেও বিশ্বের সর্বাধুনিক ইমিগ্রেশন পদ্ধতি শুরু হয়েছে।