চট্টগ্রামে পুলিশ পরিচয়ে চুরির চেষ্টার মামলার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাসানের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করেছেন মফিজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। সেই মামলায় ‘আল নাহিয়ান’ নামের এক শিশুকেও আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে।
বুধবার চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালে পাপ্পি ও ববির প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার পরিচয়ে মফিজুল ইসলাম নামের ব্যক্তি বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলাটি করেন। তবে শুক্রবার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।
১৬ নভেম্বর পাপ্পীর ভাই মো. আলম ববির পক্ষে তাদের প্রতিষ্ঠান মাওয়া এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মোহাম্মদ মফিজুল ইসলামের করা ওই মামলায় আটটি ফেসবুক আইডির ব্যবহারকারীকে বিবাদী করা হয়েছে।
মামলায় বিবাদীর তালিকায় প্রথমে রাখা হয়েছে আল নাহিয়ান বিন হাসান নামক একটি ফেসবুক আইডিকে। ওই আইডিটি ২ বছর ১০ মাস বয়সী একটি শিশুর নাম দিয়ে খোলা হয়েছে। এছাড়া আসামির তালিকায় বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এক সাংবাদিকের নামও দেয়া হয়েছে। মামলায় বোয়ালখালী কধুরখাীল এলাকার বাসিন্দা মামুন চৌধুরী ও ওয়াহিদুর রহমান বাদশা নামের আরও দুইজনকেও আসামি করা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির মামলায় শিশুকে জড়ানোর বিষয়টি অনেকেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন।
শিশুটির বাবা মোহাম্মদ হাসানের সঙ্গে বিরোধ চলছে মনছুর আলম পাপ্পী ও তার ভাই মো. আলম ববির।
জানা গেছে, পুলিশ পরিচয়ে চুরির চেষ্টা মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নেবার পরে মনসুর আলম পাপ্পী (ববির ভাই) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি দেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাসানকে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ফেসবুকে প্রচারের কারণে এমন মামলা করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আল নাহিয়ান বিন হাসান বলে যে আসামীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে সেই আল নাহিয়ান বিন হাসান ২ বছর ১০ মাস বয়সী শিশু। শিশুটির পাসপোর্টে তার জন্ম তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২০ উল্লেখ আছে।
শিশুটির বাবা মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘চুরির মামলার এজাহারভুক্ত আসামি পাপ্পি ও ববির বিরুদ্ধে আমরা গত ১৪ নভেম্বর সুস্পষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করি৷ এর আগে আমার মালামাল চুরির সময় চান্দগাঁও থানা পুলিশের হাতে আটকের ঘটনায় ৫ নভেম্বর আমার অফিস ম্যানেজার বাদি হয়ে যে মামলাটি দায়ের করেছে সেটির এজাহারভুক্ত আসামি পাপ্পি ও ববি শুধুমাত্র আমাকে হয়রানি করতে ঢালাও অভিযোগ তুলে কথিত ম্যানেজার মফিজকে দিয়ে পাল্টা মামলাটি দায়ের করেছে৷’
তিনি আরও বলেন, ‘পাল্টা মামলা হিসেবে তড়িঘড়ি করে মামলাটি করা হয়েছে। তাই আসামির নামের তালিকায় আমার ২ বছর ১০ মাস বয়সী শিশুর নামটি ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া একই মামলায় ৬ নং বিবাদী করা হয়েছে বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ নামের একটি ফেসবুক আইডিকে। সচরাচর ফেসবুক ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলেও এক্ষেত্রে সরাসরি একটি উপজেলা আওয়ামী লীগের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া পেশাগত পরিচয় গোপন রেখে একজন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে।’
মামলাটির বাদী মফিজুল ইসলাম জানান, বিবাদীরা গত ৫ নভেম্বর থেকে তাদের ফেসবুক আইডি থেকে তার প্রতিষ্ঠানের মালিক পাপ্পী ও ববির বিরুদ্ধে অসত্য, মানহানিকর বক্তব্য প্রচার করে আসছিল। এ কারণে তিনি ববির পক্ষে মামলাটি করেছেন। মামলাটি পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে তদন্ত করতে আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর সেই মনছুর আলম পাপ্পী ও তার ভাই মো. আলম ববিসহ চারজনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলা দায়ের করেন নগরের কোতোয়ালী থানাধীন জামালখানের আম্বিয়া মেরিন ভবনের নিচতলায় থাকা ‘হাসান বিল্ডার্স’-এর মালিক মোহাম্মদ হাছান।
এর আগে ৫ নভেম্বর কালুরঘাট এলাকায় এম হাসান বিল্ডার্সের ড্রেজারের মালামাল চুরির ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করেন ‘এম হাসান বিল্ডার্স’-এর ব্যবস্থাপক মো. ফখরুল ইসলাম। এতে ৫ জনকে আসামি করা হয়।
আসামিরা হলেন- মনছুর আলম পাপ্পী (৫৫) ও তার ভাই মো. আলম ববি (৪৮) চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলীর আব্দুল আলী নগর এলাকার হাজী শফিউল আলমের ছেলে। বাকি তিন আসামি হলেন- সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের নতুনপাড়া এলাকার মো. আবুল মনছুরের ছেলে মো. রমজান আলী (৩৭), একই উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের মাদামবিবিরহাট জাহানাবাদ এলাকার শামছুল আলমের ছেলে মো. কাশেম (৩৬), একই এলাকার জসিম উদ্দিনের ছেলে আবছার হোসেন (১৯)। তখন ওই তিনজন মামলাটিতে গ্রেপ্তার হন।
পরে একই মামলায় গত ১০ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন মনছুর আলম পাপ্পী ও তার ভাই মো. আলম ববি।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানায় পাপ্পীর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগে মামলা হয়েছিল। চুরির ঘটনায় ২০১১ সালের ১৬ অক্টোবর রাজধানীর নিউমার্কেট থানায়ও তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।