প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণে শিগগিরই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করা হবে।
তিনি বলেন, ‘সামনে ছোটখাটো কয়েকটি নির্বাচন রয়েছে, ঈদ রয়েছে। তারপরই আমরা সংলাপ শুরু করবো। যখন মতবিনিমিয় করবো আমরা সাজেশন চাইবো। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভালো আরও পদ্ধতিগত কী পরিবর্তন করা যেতে পারে, সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তা চাইবো। ব্যক্তি নয়, সিস্টেম যদি উন্নত করতে পারি, নির্বাচন অনেক বেশি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে।’
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা, ঐকমত্য না থাকলে কমিশনের পক্ষে নির্বাচন করা কষ্টকর হবে।’
সাবেক কমিশনারদের সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অতিথিরা বলেছেন, বর্তমান যে সিস্টেম আছে, এখানে খুব বেশি ভালো করা সম্ভব নয়। এটা একটু কমবেশি কিছু হতে পারে। আমরা যদি দৃঢ় থাকি, আইন দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করি, তাহলে অনেকটা উন্নয়ন সম্ভব।’
সিইসি বলেন, ‘আমরা শপথ গ্রহণ করেছি, বর্তমান যে আইনি কাঠামো রয়েছে, সাংবিধানিক কাঠামো রয়েছে এর মধ্যেই নির্বাচন করতে হবে। কেউ কেউ বলেছেন, একাধিক দিনে নির্বাচন করলে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা সহজ হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। কেউ কেউ বলেছেন, এতে সমস্যাও হবে। এ নিয়ে কোনও ঐকমত্য হয়নি। কাজেই একাধিক দিনে নির্বাচন করলে আমাদের জন্য অসুবিধাও হতে পারে। ওই ধরনের প্রস্তুতি আমাদের নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনও দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করিনি। সবাই বলেছেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। নির্বাচন যদি ইনক্লুসিভ না হয়, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাস্তব অর্থে থাকবে না। রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। এই কালচারের মধ্যে কিছু ইতিবাচক গুণ আনতে হবে। তাদের মধ্যে পরম সহিষ্ণুতা, ঐকমত্য যদি না থাকে, নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে খুব ভালো নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা, ঐকমত্য না থাকলে আমাদের পক্ষে নির্বাচন করা কষ্টকর হবে। এটা আমরা যেমন আগে বলেছি, উনারাও বলেছেন।’
সংলাপে অংশ নিয়ে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে পুলিশ প্রশাসনকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। প্রয়োজনে প্রতি ৫শ’ ভোটারের জন্য একটি পুলিশ স্টেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচনের দিন বিকেলের মধ্যে ভোট গণনা সম্পন্ন করতে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, জেলা প্রশাসকদের নয় নিজস্ব জনবলকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেছেন, পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত করতে পারলে দেশের নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব হবে। ব্যালট পেপারেও তো সিল মারা যায়। এজন্য ইভিএমের দোষারোপ করে লাভ নেই।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের আচরণ দেখতে হবে। খুবই কঠোর হতে হবে। সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ইনভলভ হওয়া যাবে না। আইনের প্রয়োগ সঠিকভাবে করতে হবে। তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব। আমরা সঠিকভাবে নির্বাচন করলেও মানুষ মনে করেছে সুষ্ঠু হয়নি। এটা আমাদের ব্যর্থতা।
বর্তমান ইসি গত মার্চ মাস থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে সংলাপ করছে। গত ১৩ ও ২২ মার্চ এবং ৬ ও ১৮ এপ্রিল যথাক্রমে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজ এবং বার্তা সংস্থা, প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী, প্রধান বার্তা সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপ করে ইসি।