এক সময় দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় মো. সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হতে কোনো আইনি বাধা নেই জানিয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির পদ নিয়ে যে বিতর্ক সামনে আনা হচ্ছে, সেটা কাঙ্ক্ষিত নয়।
আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বুধবার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নির্বাচনী কর্তা হাবিবুল আউয়ালের এ মন্তব্য আসে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির প্রশ্নে যদি এ ধরনের অবান্তর বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়, সেটা হবে অনাকাঙ্ক্ষিত।
এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. সাহাবুদ্দিন, যিনি দুদকের একজন সাবেক কমিশনার। ইতোমধ্যে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেটও প্রকাশ করা হয়েছে।
দুদক আইনে বলা আছে, কোনো কমিশনার অবসর নেওয়ার পর প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে নিয়োগের যোগ্য হবেন না।
এখন মো. সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দুদক আইনের ওই সূত্র ধরে নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়েছে রাষ্ট্রপতি পদটি ‘লাভজনক’ কি না।
এ নিয়ে মঙ্গলবার একটি দৈনিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে, যেখানে আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়েছে এবং তারা পক্ষে-বিপক্ষে দুই রকম কথাই বলেছেন।
রাষ্ট্রপতি পদ লাভজনক কি না, সে বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। তবে এর আগেও এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে এবং ১৯৯৬ সালে হাই কোর্ট এক রিট মামলার রায়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, রাষ্ট্রপতির পদ ‘লাভজনক নয়’।
ওই বছর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছিল। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে মামলায় বলা হয়েছিল, প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নিয়ে রাষ্ট্রের কোনো লাভজনক পদে বসা যায় না।
শুনানি শেষে আদালত রায় দিয়েছিল, রাষ্ট্রপতির পদ লাভজনক নয়। সুতরাং সাহাবুদ্দীন আহমদের রাষ্ট্রপতি হতে বাধা নেই।
সেই প্রসঙ্গ ধরে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সংবিধান, আইন, বিধি বিধান ও আদালতের রায় পর্যালোচনা করলে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হতে মো. সাহাবুদ্দিনের কোনো ধরনের ‘অযোগ্যতা নেই’।
এই নিয়ে সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ এবং ১৯৯৬ সালের সাহাবুদ্দীন আহমদ বনাম আবু বকর সিদ্দিক মামলার রায়টি পড়ে শোনান সিইসি।
তিনি বলেন, গত ১২ তারিখে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন জমা দেয়া হয়। দুইজন সংসদ সদস্য প্রস্তাবক এবং সমর্থন করেছেন। রাষ্ট্রপতি প্রার্থী তাতে সম্মত হয়ে তার বিবৃতি দিয়েছেন। ১৩ তারিখ বাছাইয়ের জন্য নির্ধারিত ছিল। বাছাইয়ের কাজটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার তথা নির্বাচনী কর্তার একক এবং অবিভাজ্য। এটা কমিশনের কোনো দায়িত্ব নয়। দায় দায়িত্ব, ভুলভ্রান্তি, সবকিছুর দায়ভার প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এককভাবে নিতে হবে।
সেজন্যই, যেহেতু বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উপর অর্পিত একটি একক ও অবিভাজ্য দায়িত্ব, তাই আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাম নির্বাচনী কর্তা হিসেবে কিছু কিছু উত্থাপিত বিষয়ে বিভ্রান্তি নিরসনের সুবিধার্থে কিছু বক্তব্য উপস্থাপন আবশ্যক মনে করছি।
সিইসি বলেন, একটি প্রশ্ন উঠেছে যে, প্রার্থীর সাংবিধানিক বা আইনগত অযোগ্যতা রয়েছে। এটা সত্য যে দুদক আইনে ৯ ধারায় বলা হয়েছে যে কর্মাবসানের পর কোনো কমিশনার প্রজাতন্ত্রের লাভজনক কোনো পদে নিয়োগ লাভে যোগ্য হবেন না। এটা আছে। এটার আলোকে বিষয়টি বিবেচ্য। এতে করে অনেকে বলতে চেয়েছেন যে, রাষ্ট্রপতির পদটি একটি লাভজনক পদ।
আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচনী কর্তা হিসেবে ওই রায়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত ছিলাম। কারণ পরীক্ষা করার সময় যেটাকে বাছাই বলে, সেটা কিন্তু একটা দায়সারা গোছের দায়িত্ব নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে, প্রার্থী যাই বলুক, কমিশনারেরও দায়িত্ব আছে বাছাই করে দেখার যে, প্রার্থীর কোনো সাংবিধানিক বা আইনগত অযোগ্যতা রয়েছে কি-না। আমরা দেখলাম প্রথমত স্পষ্টত কোনো আইনগত অযোগ্যতা নেই।