প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৩০ সালের আগেই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে আমরা আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হব এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করব।
তিনি বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নে আমরা নীতি সহায়তা এবং অর্থের যোগান অব্যাহত রাখব, তবে অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার ও অপচয় রোধ নিশ্চিত করতে হবে।’
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘এসডিজি বাস্তবায়ন পর্যালোচনা বিষয়ক দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন, ২০২২’ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘খাদ্য সাশ্রয় করা এবং নিজের খাদ্যকে ব্যবহার করা বা আমাদের যা আছে সবগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সবাইকে একটু সাশ্রয়ী হতে হবে। আমাদের পানি ব্যবহারে, আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে, আমাদের খাদ্যশস্য ব্যবহারে, প্রতিটি ক্ষেত্রে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। কারণ আমরা জানি, কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, এর ফলে সারা বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে বা এর একটা ধাক্কা সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, যার ফলে মানুষের অনেক কষ্ট হবে। কাজেই সেটা যেন আমাদের দেশে না হয়, সেজন্য আমাদের দেশের মানুষকে প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি পরিবার, সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।’
‘আর আমাদের যে এসডিজি ইমপ্লিমেন্টেশনে আমরা যে পর্যালোচনা করব, সেখানেও ক্ষেত্রগুলো সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের নিতে হবে কোনোরকম অপচয় যেন না হয়। অপচয় পরিহার করে সুষ্ঠু অর্জন যেন আমরা করতে পারি বা বাস্তবায়ন করতে পারি, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে যে সমস্ত পদক্ষেপগুলো আমাদের আশু করণীয় বা এ মুহূর্তে করতে হবে, সেগুলো যেমন চিহ্নিত করতে হবে বা যেগুলো এখনই প্রয়োজন নেই, একটু দীর্ঘমেয়াদী সেগুলো আমাদের বেছে নিতে হবে এবং সেভাবেই যদি পরিকল্পিতভাবে আমরা এগুতে পারি, তাহলে আমি মনে করি যে, আমরা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব’, যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি, এই সম্মেলনের মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করার এবং বাস্তবায়ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের পন্থা খুঁজে বের করতে সমর্থ হবে। আমাদের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহ, এনজিও এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গ সমানভাবে অংশীদার। এই সম্মেলনে সকলের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে বেসরকারি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমি ১৯৯৬ সালে এসে সকল খাতগুলোকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম এবং বেসরকারি খাত যাতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে, সে সুযোগটা আমি সৃষ্টি করে দিয়েছিলাম। সরকারের পাশাপাশি সেজন্য বেসরকারি খাতেরও বিরাট একটা দায়িত্ব রয়েছে দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যেমন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি, আমরা বিভিন্ন মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি এবং এর সুফলটা কিন্তু দেশের মানুষ পাবে। অনেকেই হয়তো এখন সমালোচনা করেন, এটা করা হচ্ছে কেন বা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র কেন করা হলো, এতো টাকা খরচ হয়েছে, খরচের দিকটা অনেকেই শুধু দেখেন। কিন্তু এই খরচের মধ্যদিয়ে দেশের জনগণ যে কত লাভবান হবে এবং আমাদের অর্থনীতিতে কতটা অবদান রাখবে, আমাদের উন্নয়ন গতিশীল হবে, মানুষের জীবন পরিবর্তন হবে, সেটা বোধহয় তারা বিবেচনা করেন না। এটা হচ্ছে খুব দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা, নদীমাতৃক বাংলাদেশ, সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নটা একান্তভাবে অপরিহার্য। যোগাযোগ যত দ্রুত বৃদ্ধি পাবে, মানুষের পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি পাবে, মানুষের যাতায়াত বৃদ্ধি পাবে, অর্থনীতি সচল হবে, একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে যে উৎপাদিত পণ্য তা বাজারজাত করা সহজ হবে। যেটা আমাদের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করবে। দারিদ্র্য বিমোচনে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের তৃণমূলের মানুষ সব থেকে বেশি লাভবান হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবশ্য ঢাকায় বসে অনেকেই সমালোচনা করেন, তাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে সারা বাংলাদেশটা আপনারা একটু ঘুরে দেখুন, পরিবর্তনটা কোথায় এসেছে, কতটুকু এসেছে, সেটা সবাই গ্রাম পর্যায়ে একটু যোগাযোগ করলে জানতে পারবেন। শুধু এই রাজধানীতে বসে, আর আমি তো টেলিভিশন উন্মুক্ত করে দিয়েছি, আগে তো আমাদের একটা টেলিভিশন ছিল বিটিভি, আমি ৯৬ সালে এসে সমস্ত বেসরকারি খাতে টেলিভিশন, রেডিও সব কিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এখন সবাই কথা বলতে পারেন, টকশো করতে পারেন, অবশ্য আমি জানি অনেক কথা বলার পর বলবেন আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না। কিন্তু যখন টকশোতে কথা বলেন, কেউ তো আপনাদের মুখ চেপেও ধরেনি বা গলা টিপেও ধরেনি। সবাই যার যার ইচ্ছেমতো বলতে পারেন। তো সবাইকে আমি বলব, আগে বাংলাদেশটা একটু ঘুরে আসেন, গ্রাম পর্যায়ে যান, সেখানে মানুষ কী অবস্থায় আছে একটু দেখে এসে তারপর কথা বললে আপনারা হয়তো জানতে পারবেন।’
‘আমাদের দেশের কৃষক, আমাদের দেশের শ্রমিক, আমাদের দেশের খেটে খাওয়া মানুষ, এই খেটে খাওয়া মানুষ, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করাই তো আমার লক্ষ্য। ওই কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষ তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের একটু উন্নত জীবন দেব সেটাই আমাদের লক্ষ্য’, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসডিজিতে যে সমস্ত বিষয়গুলো রয়েছে, যেগুলো আমাদের জন্য প্রযোজ্য, আমরা তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি এবং তা বাস্তবায়ন করে যাব। কাজেই এই সমস্ত প্রকল্পগুলো যখন সম্পন্ন হবে বা মানুষ এর সুফল যখন ভোগ করবে, তখন এ দেশের অর্থনীতির চাকা আরও উন্নত হবে, সচল হবে, দারিদ্র্য বিমোচন হবে, আমরা দেশের মানুষের সার্বিক উন্নতি করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘আমি এই সম্মেলনকে সাধুবাদ জানাই। এটা অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং আমি মনে করি যে, আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারি খাত সকলেই যারা কাজ করবে তাদেরও অনেক সহজ হবে কাজ করা এবং সরকারের পক্ষ থেকেও আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি এবং দিয়ে যাব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নে আমরা নীতি সহায়তা এবং অর্থের যোগান অব্যাহত রাখব, তবে অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার ও অপচয় রোধ নিশ্চিত করতে হবে। সে সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি আমরা সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করলে ২০৩০ সালের আগেই আমরা আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি সেটা বাস্তবায়নের মাধ্যমে। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করব। সেই লক্ষ্য অর্জন করবার জন্যই সবাইকে আমি আহ্বান জানাই। ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব, জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করব।’