You are here
Home > খেলাধুলা > মুশফিকের সেঞ্চুরিতে সিরিজ নিশ্চিত করে সুপার লিগের শীর্ষে বাংলাদেশ

মুশফিকের সেঞ্চুরিতে সিরিজ নিশ্চিত করে সুপার লিগের শীর্ষে বাংলাদেশ

মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিতে এক ম্যাচ বাকী রেখেই শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো স্বাগতিক বাংলাদেশ। আজ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুশফিকের ১২৫ রানের সুবাদে শ্রীলংকাকে বৃষ্টি আইনে ১০৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে সিরিজ জয় নিশ্চিতের পাশাপাশি ২-০ ব্যবধানে এগিয়েও গেল বাংলাদেশ। এই প্রথমবারের মত শ্রীলংকার বিপক্ষে দ্বিপাক্ষীক সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ।
আজকের জয়ে বিশ্বকাপ সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষেও উঠলো বাংলাদেশ। ৮ ম্যাচে ৫ জয় ও ৩ হারে ৫০ পয়েন্ট বাংলাদেশের। সমান ৪০ করে পয়েন্ট ইংল্যান্ডে-পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার। ইংল্যান্ডে ৯ ম্যাচে, পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ৬ ম্যাচে অংশ নিয়েছে।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচে প্রথম ওয়ানডের মত দ্বিতীয়টিতেও টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সতীর্থ লিটন দাসকে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন তিনি। শ্রীলংকার পেসার ইসুরু উদানার করা প্রথম ওভার থেকে ১৫ রান তুলেন তামিম-লিটন।
প্রথম ডেলিভারিতে নো-বলে বাউন্ডারি পান তামিম। পরের বলেও বাউন্ডারি আসে তামিমের ব্যাট থেকে। পরের ডেলিভারি ওয়াইড হলে, পরেরটিতে আবারো চার রান তুলে নেন তামিম। এতে ২ বলে ১৪ রান পায় বাংলাদেশ। পরের চার ডেলিভারিতে মাত্র এক রান পায় বাংলাদেশ। এরমধ্যে একবার জীবনও পান তামিম।
প্রথম ওভার শেষে বাংলাদেশের মুখে হাসি থাকলেও, পরের ওভারে তা মুছে যায়। পেসার দুশমন্থ চামিরার প্রথম বলেই লেগ বিফোর হন তামিম। রিভিউ নিয়ে তামিমকে শিকার করেন চামিরা। ৬ বলে ৩টি চারে ১৩ রান করেন টাইগার অধিনায়ক।
তামিমের বিদায়ের পর উইকেটে গিয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিন নম্বরে নামা সাকিব আল হাসান। রানের খাতা খোলার আগে তিন বল খেলে থামতে হয় তাকে। চামিরার ইনসুইঙ্গারে সাকিবও লেগ বিফোর হন। ১৫ রানেই প্যাভিলিয়নে ফিরেন দুই বন্ধু তামিম-সাকিব।
তৃতীয় উইকেটে ৩৪ রানের জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কা সামালে উঠার চেষ্টা করেন লিটন ও মুশফিক। লিটনকে ব্যক্তিগত ২৫ রানে থামিয়ে জুটি ভাঙ্গেন শ্রীলংকার স্পিনার লক্ষণ সান্দাকান। কিছুক্ষণ বাদে আবারো বাংলাদেশ শিবিরে আঘাত হানেন সান্দাকান। এবার সান্দাকানের শিকার মোসাদ্দেক হোসেন। ১২ বলে ১০ রান করেন মোসাদ্দেক।
১৬তম ওভারে ৭৪ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়ে আবারো চাপে পড়ে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে ২৩ ওভারে ৯৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিলো টাইগাররা। সে ম্যাচে বাংলাদেশকে চাপমুক্ত করেছিলেন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এবারও অতীতের মত নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন মুশফিক-মাহমুুদুল্লাহ।
পরিস্থিতিকে আমলে নিয়ে উইকেট ধরে খেলতে থাকেন মুশফিক-মাহমুুদুল্লাহ। দ্রুতই উইকেটে সেট হয়ে যান তারা। এরপর রানের গতি সচল করে বাংলাদেশের স্কোর দেড়শ পার করেন মুশফিক-মাহমুুদুল্লাহ। এরমধ্যে ৩০তম ওভারে ২২৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪১তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মুশফিক। এজন্য ৭০ বল খেলেছেন তিনি।
জমে যাওয়া মুশফিক-মাহমুুদুল্লাহ’র জুটিতে বড় স্কোরের পথ তৈরি হচ্ছিলো বাংলাদেশের। কিন্তু সেই স্বপ্নে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান আবারো সান্দাকান। তার ঘুর্ণিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মাহমুদুল্লাহ। ৫৮ বলে ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪১ করেন মাহমুদুল্লাহ। মুশফিকের সাথে পঞ্চম উইকেটে ১০৮ বলে ৮৭ রান যোগ করেন টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটের অধিনায়ক।
১৬১ রানে মাহমুদুল্লাহর আউটের পর দ্রুত আরও দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ১৮৪ রানের মধ্যে পতন হয় আফিফ হোসেন ও মেহেদি হাসান মিরাজের। আফিফ ১০ ও মিরাজ শুন্য রানে ফিরেন।
এরপর মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন মুশফিক। দু’দফায় বৃষ্টিতে বন্ধও হয় খেলা। বৃষ্টিতে বন্ধ হবার আগে ৯৬ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। আর বাংলাদেশের রান ছিলো ৪৩ দশমিক ৩ ওভারে ২১৩।
বিকেল ৫টা ১৭ মিনিটে পুনরায় খেলা শুরু হয়। ৪৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শ্রীলংকার পেসার চামিরার বলে বাউন্ডারি মেরে ২২৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। ১১৩ বলে সেঞ্চুরি পুর্ন করেন তিনি।
মুশফিকের সেঞ্চুরির পর সাইফুদ্দিন থামেন ১১ রানে। ৩০ বল খেলেছেন তিনি। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা শরিফুল ইসলাম রানের খাতা খুলতে পারেননি। তবে সেঞ্চুরির পর অন্যপ্রান্ত দিয়ে চারটি বাউন্ডারি ঠিকই আদায় করে নেন মুশফিক।
আর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে আউট হন মুশফিক। চামিরার তৃতীয় শিকার হবার আগে ১২৫ রান করেন তিনি। ১২৭ বলে ১০টি চার হাকাান তিনি। ৪৮ দশমিক ১ ওভারে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রান করে বাংলাদেশ । শ্রীলংকার চামিরা-সান্দাকান ৩টি করে উইকেট নেন।
সিরিজে সমতা আনতে ২৪৭ রানের টার্গেট পায় শ্রীলংকা। সেই লক্ষ্যে দেখেশুনে খেলতে শুরু করেন শ্রীলংকার দুই ওপেনার দানুশকা গুনাতিলকা ও অধিনায়ক কুশল পেরেরা। বেশি দূর একত্রে যেতে পারেননি তারা। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম প্রতিপক্ষের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন। ১৪ রান করে থামেন পেরেরা।
এরপর বড় জুটির চেষ্টায় ছিলেন গুনাতিলকা ও পাথুম নিশাংকা। দ্বিতীয় উইকেটে ৫১ বলে ২৯ রান তুলতে পারেন তারা। গুনাতিলকাকে ২৪ রানে শিকার করে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় উইকেট এনে দেন আরেক বাঁ-হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান।
নিশাংকাকে ২০ রানের বেশি করতে দেননি সাকিব। দলীয় ৭১ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর শ্রীলংকাকে আরও চেপে ধরে বাংলাদেশের বোলাররা। এতে নিয়মিত বিরতি দিয়ে উইকেট হারায় তারা। এতে ৩৮ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ১২৬ রানে ম্যাচ হারের পথে ছিটকে পড়ে শ্রীলংকা।
এরপর বৃষ্টির কারনে খেলা বন্ধ থাকায়, ৪০ ওভারে ২৪৫ রানের নতুন টার্গেট পায় শ্রীলংকা। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৪১ রান করে তারা। পরের দিকে ইসুরু উদানা অপরাজিত ১৮, কুশল মেন্ডিস-আসেন বান্দারা ১৫ রান করে করেন।
বল হাতে বাংলাদেশের মিরাজ-মুস্তাফিজুর ৩টি করে উইকেট নেন। সাকিব নেন ২ উইকেট। ম্যাচ সেরা হয়েছেন মুশফিক। ৮৪ রান করার সুবাদে প্রথম ম্যাচেও সেরা হয়েছিলেন মুশফিক।
আগামী ২৮ মে একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।
স্কোর কার্ড (টস- বাংলাদেশ) :
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল এলবিডব্লু ব চামিরা ১৩
লিটন দাস ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ব সান্দাকান ২৫
সাকিব আল হাসান এলবিডব্লু ব চামিরা ০
মুশফিকুর রহিম ক বান্দারা ব চামিরা ১২৫
মোসাদ্দেক হোসেন ক পেরেরা ব সান্দাকান ১০
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ক পেরেরা ব সান্দাকান ৪১
আফিফ হোসেন ক নিশাঙ্কা ব উদানা ১০
মেহেদি হাসান মিরাজ বোল্ড ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ০
মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন রান আউট (মেন্ডিস) ১১
করিফুল ইসলাম ক পেরেরা ব উদানা ০
মুস্তাফিজুর রহমান অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-৪, নো-৩, ও-২) ১০
মোট (৪৮.১ ওভার, অলআউট) ২৪৬
উইকেট পতন : ১/১৫ (তামিম), ২/১৫ (সাকিব), ৩/৪৯ (লিটন), ৪/৭৪ (মোসাদ্দেক), ৫/১৬১ (মাহমুদুল্লাহ), ৬/১৭৮ (আফিফ), ৭/১৮৪ (মিরাজ), ৮/২৩২ (সাইফুদ্দিন), ৯/২৪৬ (শরিফুল) ১০/২৪৬ (মুশফিক)।
শ্রীলংকা বোলিং :
উদানা : ৯-০-৪৯-২ (ও-২, নো-১),
চামিরা : ৯.১-২-৪৪-৩ (ও-১),
হাসারাঙ্গা ডি সিলভা : ১০-১-৩৩-১,
দাসুন শানাকা : ৭-০-৩৮-০,
লক্ষণ সান্দাকান : ১০-০-৫৪-৩ (নো-২)।
ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা : ৩-০-২৩-০।
শ্রীলংকা ইনিংস (৪০ ওভারে টার্গেট ২৪৫ রান) :
দানুশকা গুনাতিলকা ক সাকিব ব মুস্তাফিজ ২৪
কুশল পেরেরা ক তামিম ব শরিফুল ১৪
পাথুম নিশাংকা ক তামিম ব সাকিব ২০
কুশল মেন্ডিস এলবিডব্লু ব মিরাজ ১৫
ধনঞ্জয় ডি সিলভা এলবিডব্লু ব সাকিব ১০
আসেন বান্দারা ক মাহমুদুল্লাহ ব মুস্তাফিজ ১৫
দাসুন শানাকা ক মাহমুদুল্লাহ ব মিরাজ ১১
হাসারাঙ্গা ডি সিলভা বোল্ড ব মিরাজ ৬
ইসুরু উদানা অপরাজিত ১৮
লক্ষ্মণ সান্দাকান ক তামিম ব মুস্তাফিজ ৪
দুশমন্থ চামিরা অপরাজিত ৪
অতিরিক্ত ০
মোট (৪০ ওভার, ৯ উইকেট) ১৪১
উইকেট পতন : ১/২৪ (পেরেরা), ২/৫৩ (গুনাতিলকা), ৩/৭১ (নিশাংকা), ৪/৭৭ (মেন্ডিস), ৫/৮৯ (ধনঞ্জয়), ৬/১০৪ (শানাকা), ৭/১১৪ (হাসারাঙ্গা), ৮/১১৬ (বান্দারা), ৯/১২২ (সান্দাকান)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মিরাজ : ১০-২-২৮-৩,
শরিফুল ইসলাম : ৬-০-৩০-১,
তাসকিন আহমেদ : ৮-০-২৭-০,
মুস্তাফিজুর রহমান : ৬-১-১৬-৩,
সাকিব আল হাসান : ৯-০-৩৮-২,
মোসাদ্দেক হোসেন : ১-০-২-০।
ফল : বাংলাদেশ বৃষ্টি আইনে ১০৩ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ।

Similar Articles

Leave a Reply

Top