দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নীলা রায় বখাটে মিজানের বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে এমন তথ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা ।
গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর অদূরেই সাভার উপজেলার কিশোরী নীলা রায়কে কথিত প্রেমিক মিজানুর রহমান ছুরি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
সম্প্রতি কিশোরী নীলা রায়কে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি মিজানুর রহমানসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) নির্মল কুমার দাস।।
চার্জশিটভুক্ত অপর দুই আসামিরা হলেন মিজানের সহযোগী সেলিম পাহলান ও সাকিব হোসেন।সেলিম পাহলান ও সাকিব হোসেন দুই আসামি উচ্চ আদালতে থেকে জামিনে রয়েছে।মামলায় মুল আসামি মিজানুর রহমান কারাগারে রয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তার অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন, ভিকটিম (নীলা) সাভার মডেল থানাধীন ব্যাংক কলোনীস্থ এ্যাসেড স্কুলে দশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন, আসামি মিজানুর রহমান নীলাকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে বিভিন্ন সময়ে উত্ত্যক্ত করাসহ প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মিজানুর নীলাকে দেখে নিবে মর্মে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে।
বিষয়টি নীলা পরিবারকে জানায়। নীলার পরিবার বিষয়টি মিজানুরের বাবা, মাকে জানায়। মিজানুরকে তার বাবা, মা নীলার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে নিষেধ করেন। মিজানুর নীলাকে বিয়ে করবে বলে সাকিব ও সেলিমদের সাথে এই বিষয়ে পরিকল্পনা করে সিদ্ধান্ত নেয়, নীলা মিজানুরকে বিয়ে করতে রাজি না হলে তাকে শেষ করে দিবে।পরিকল্পনা অনুযারী সাকিব মিজানুরকে একটা সুইজ গিয়ার চাকু এনে দেয়। এটা সব সময় মিজানুরকে সঙ্গে রাখতে বলে। সুযোগ খুঁজতে থাকে নীলাকে একা পাওয়ার জন্য ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও বলেন, ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে নীলা ও তার ভাই অলক ওষুধ কেনার জন্য বাসা থেকে বের হয়। রিকশায় করে যাওয়ার পথে সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে সাভার থানাধীন দক্ষিণ পাড়াস্থ সাভার গার্লস স্কুলের পূর্ব পাশে গলি রাস্তার সংযোগ স্থলে পৌঁছামাত্র মিজানুর, সাকিব ও সেলিম রিক্সা থামিয়ে নীলা ও অলককে রিকশা থেকে নামায়। মিজানুর অলককে বলে নীলার সঙ্গে তার কথা আছে। তুই একটু সরে দাঁড়া।
তখন অলক একটু দূরে সরে গেলে মিজানুর নীলার হাত ধরে টেনে গলি রাস্তার মিজানুরের মালিকানাধীন বাউন্ডারি করা পরিত্যক্ত বাড়ির একটি টিনের ঘরে নিয়ে যায়। এ সময় মিজানুর নীলাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। মিজান নীলাকে বিয়ে করবেনা জানালে। সঙ্গে সঙ্গে মিজানুর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তার কাঁধে ঝুলানো ব্যাগের ভিতরে থাকা সাকিবের দেয়া চাকু বের করে নীলাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে। মিজানুর নীলার মৃত্যু নিশ্চিতে তার ঘাড়ের বাম পাশে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। নীলার বাঁচাও বাঁচাও চিৎকারসহ গোংরানী শুনে ভাই অলকসহ আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে চলে আসে। অলকসহ অন্যান্যরা মিজানুরকে আটকানোর চেষ্টা করলে তাদের ভয় দেখিয়ে সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এরপর লোকজনের সহায়তায় তাকে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাত ৯টা ৮ মিনিটের দিকে নীলা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
উল্লেখ্য,নীলা মানিকগঞ্জ জেলার বালিরটেক এলাকার নারায়ণ রায়ের মেয়ে। পরিবারের সঙ্গে সাভার পৌর এলাকার কাজী মোকমাপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকত।
নীলার বাবা নারায়ণ রায় জানান, জানতে পেরেছি মামলাটির তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এখন প্রত্যাশা মামলার বিচার যেন দ্রুত শেষ হয়। আসামিদের যেন দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়।
নীলার পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে নীলাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল একই এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান মিজান। আব্দুর রহমান-নাজমুন্নাহার দম্পতির সন্তান মিজান এইচএসসি পরীক্ষার্থী। নীলা তার প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কারণেই তিনি হত্যা করেছেন নীলাকে। এ ঘটনায় নীলার বাবা নারায়ণ রায় গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর রাতে মিজান, তার বাবা আব্দুর রহমান ও মা নাজমুন্নাহার সিদ্দিকাসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে সাভার থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন।
মামলাটিতে ৫ জনকে গ্রেফতর করেছে পুলিশ। যে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে তারা হলেন,মিজানুর রহমান, তার বাবা আব্দুর রহমান ও মা নাজমুন নাহার সিদ্দিকা, মিজানের সহযোগি সেলিম পহলান, সাকিব হোসেন। মিজানুরের বাবা আব্দুর রহমান ও মা নাজমুন নাহারকে মামলা দায় থেকে অব্যাহতির জন্য সুপারিশ করেছেন মামলা তদন্ত কর্মকর্তা । আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর বাবুল বলেন, যেহেতু আদালত সাধারন ছুটি চলছে ।আদালত খুললে মামলাটি যাতে দ্রুত বিচার শেষে হয় তাতে সত্রিুয় ভুমিকা তিনি পালন করবে।