সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড এবং মোহাম্মদ নাইমের ব্যাটিং নৈপুন্যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বে খেলার আশা বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এ জুটির সাথে মুস্তাফিজুর রহমান বোলিংয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ওমানকে আজ ২৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
বাছাই পর্বে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ১৫৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ওপেনার মোহাম্মদ নাইম দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন। জবাবে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৭ রান করে হারের স্বাদ নেয় ওমান। এই গ্রুপে ২ ম্যাচে ১ জয় ও ১ হারে ২ করে পয়েন্ট আছে বাংলাদেশ ও ওমানের। ২ ম্যাচে ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে স্কটল্যান্ড।
ওমানের আল আমেরাতে ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আজ টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। সুপার টুয়েলভে খেলতে হলে এ ম্যাচে জয় ছাড়া বাংলাদেশের সামনে কোন বিকল্প নেই। বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ওপেনার সৌম্য সরকারকে বাদ দিয়ে মোহাম্মদ নাইমকে নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ।
নাইমের সাথে ইনিংসের শুরুটা জমাতে পারেননি আরেক ওপেনার ৬ রান করা লিটন দাস। তৃতীয় ওভারে দলীয় ১১ রানে থামেন তিনি।
পিঞ্চ হিটার হিসেবে নেমেছিলেন মাহেদি হাসান। ৪ বল খেলে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন মাহেদিও। এমন অবস্থায় ২১ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে মহা চাপে বাংলাদেশ।
সেই চাপকে দূর করার গুরু দায়িত্ব কাঁধে চাপে নাইম ও চার নম্বরে নামা সাকিব আল হাসানের। চার মেরে রানের খাতা খুলেন সাকিব। সপ্তম ওভারে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে বেঁেচ যান নাইম। একই সাথে সেটি ছক্কায় পরিণত হয়। অষ্টম ওভারে আবারো জীবন পান নাইম। তাই নাইম-সাকিবের সতর্ক ব্যাটিংয়ে ১০ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৬৩ রান পায় বাংলাদেশ।
ক্রিজে টিকে থাকতে গিয়ে প্রথম ১০ ওভারে রানের গতি কমই ছিলো বাংলাদেশের। ১২তম ওভারে মারমুখী রুপে দেখা যায় নাইম-সাাকিবকে। ১৭ রান তুলেন তারা। এরমধ্যে সাকিবের দু’টি চার ও নাইমের ১টি ছক্কা ছিলো। ১৪তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর তিন অংকে পৌঁছায়। দুর্ভাগ্য এ ওভারেই নাইম-সাকিবের জুটিতে ভাঙ্গন ধরে।
পয়েন্ট থেকে ওমানের আকিব ইলিয়াসের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ২৯ বলে ৬টি চারে ৪২ রান করা সাকিব। সাকিব। ৫৩ বলে ৮০ রানের জুটি গড়েন নাইম-সাকিব।
সাকিবের বিদায়ের পরের ওভারে বাউন্ডারি দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ২৩তম ম্যাচে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান নাইম।
দলীয় ১০১ রানে সাকিবের বিদায়ের পর দ্রুতই ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ১২২ রানের মধ্যে আউট হন নুরুল হাসান, আফিফ হোসেন ও নাইম। নুরুল ৩ ও আফিফ ১ রান করেন। এক প্রান্ত আগলে রাখা নাইম ৬৪ রানে থামেন। ৫০ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস সাজান নাইম।
নাইম যখন ফিরেন, তখন ইনিংসে ২০ বল বাকী ছিলো। এ অবস্থায় বাংলাদেশের স্কোর কত দূর নিয়ে যেতে পারেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম। সেটিই দেখার ছিলো। মুশফিককে নিয়ে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন মাহমুদুল্লাহ। ৯ বলে ১৬ রান যোগ করে এ জুটি ।
তবে ১৯তম ওভারের প্রথম দুই বলে বাংলাদেশ শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন ওমানের পেসার ফাইয়াজ বাট। মুশফিক-মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে তুলে নেন তিনি। মুশফিক ৬ রান করতে পারলেও সাইফুদ্দিন খাতাই খুলতে পারেননি।
১৯তম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে দলের স্কোর দেড়শর কাছে নিয়ে যান মাহমুুদুল্লাহ। তাই আশা করা হয়েছিলো শেষ ওভারে মাহমুদুল্লাহ ঝড় দেখা যাবে। কিন্তু ঐ ওভারের তৃতীয় বলে আউট হন অধিনায়ক। ১টি করে চার-ছক্কায় ১০ বলে ১৭ রান করেন তিনি। আর শেষ ওভারের শেষ বলে মুস্তাফিজুরের আউটে, ১৫৩ রানেই অলআউট হয় বাংলাদেশ।
মুস্তাফিজ ২ রান করেন। ১ রানে অপরাজিত থাকেন তাসকিন। ওমানের বিলাল-ফায়াজ ৩টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৫৪ রানের টার্গেট দিয়ে দ্বিতীয় ওভারেই ওমানের প্রথম উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। ওপেনার আকিব ইলিয়াসকে ৬ রানে শিকার করেন টাইগার পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। এরপর ওমানের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন জতিন্দার সিং ও ক্যাশপ প্রজাপতি। এ জুটি ২৭ বলে ৩৪ রান যোগ করে।এই জুটি বিচ্ছিন্ন করেন ফিজ। ২১ রান করে আউট হন প্রজাপতি।
৪৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর লড়াইয়ে টিকে থাকার মত জুটি গড়েন জিতান্দার ও অধিনায়ক জিমাস মাকসুদ। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তোলেন তারা। এই জুটিতে ৩৪ বলে ৩৪ রান আসে। মাকসুদকে ১২ মাহেদি ফিরিয়ে দিলে জুটি ভাঙ্গে।
এরপর ওমানের ব্যাটিং অর্ডারে ধস নামান সাকিব-মুস্তাফিজ ও সাইফুদ্দিন। ২২ রানে ৬ উইকেট তুলে নেন তারা। ফলে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৭ রানের বেশি করতে পারেনি ওমান।
উইকেটে সেট ব্যাটসম্যান জতিন্দারকে শিকার করে ওমানকে ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলার শুরুটা করেছিলেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী সাকিব। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৩ বলে ৪০ রান করেন জতিন্দার। পরের দিকে ওমানের ব্যাটাররা ব্যর্থ হলে, জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। নাদিমের অপরাজিত ১৪ রান ওমানের হারের ব্যবধান কমায়।
বল হাতে ৩৬ রানে ৪ উইকেট নেন মুস্তাফিজ। ২৮ রানে ৩ উইকেট নেন সাকিব। ১টি করে শিকার ছিলো সাইফুদ্দিন ও মাহেদির।
আগামী ২১ অক্টোবর গ্রুপ পর্বে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউ গিনির মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
স্কোর কার্ড : (টস- বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ ইনিংস :
লিটন এলবিডব্লু ব ব বিলাল খান ৬
নাইম ক আয়ান খান ব কলিমুল্লাহ ৬৪
মাহেদি ক এন্ড ব বাট ০
সাকিব রান আউট (ইলিয়াস) ৪২
নুরুল ক সন্দ্বীপ ব মাকসুদ ৩
আফিফ ক জতিন্দার ব কলিমুল্লাহ ১
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বোল্ড ব বিলাল ১৭
মুশফিকুর ক নাসিম ব বাট ৬
সাইফুদ্দিন ক জতিন্দার ব বাট ০
তাসকিন অপরাজিত ১
মুস্তাফিজুর ক জিসান ব বিলাল
অতিরিক্ত (বা-২, লে বা-৫, ও-৪) ১১
মোট (অলআউট, ২০ ওভার) ১৫৩
উইকেট পতন : ১/১১ (লিটন), ২/২১ (মাহেদি), ৩/১০১ (সাকিব), ৪/১১২ (নুরুল), ৫/১২০ (আফিফ), ৬/১২২ (নাইম), ৭/১৩৮ (মুশফিক), ৮/১৩৮ (সাইফুদ্দিন), ৯/১৫১ (মাহমুদুল্লাহ), ১০/১৫৩ (মুস্তাফিজ)।
ওমান বোলিং :
বিলাল : ৪-০-১৮-৩ (ও-২),
কলিমুল্লাহ : ৪-০-৩০-২,
বাট : ৪-০-৩০-৩ (ও-১),
নাদিম : ৪-০-৩৫-০ (ও-১),
ইলিয়াস : ২-০-১৬-০,
মাকসুদ : ২-০-১৭-১।
ওমান ইনিংস :
আকিব এলবিডব্লু ব মুস্তাফিজ ৬
জতিন্দার ক লিটন ব সাকিব ৪০
প্রজাপতি ক নুরুল ব মুস্তাফিজ ২১
মাকসুদ ক মুশফিক ব মাহেদি ১২
আয়ান ক মাহমুদুল্লাহ ব সাকিব ৯
সন্দীপ ক মুশফিক ব সাইফুদ্দিন ৪
নাসিম ক মাহমুদুল্লাহ ব সাকিব ৪
কলিমুল্লাহ ক নুরুল ব মুস্তাফিজ ৫
নাদিম অপরাজিত ১৪
বাট ক মুশফিক ব মুস্তাফিজ ০
বিলাল অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (লে বা-২, ও-১০) ১২
মোট (৯ উইকেট, ২০ ওভার) ১২৭
উইকেট পতন : ১/১৩ (আকিব), ২/৪৭ (প্রজাপতি), ৩/৮১ (মাকসুদ), ৪/৯০ (জিতান্দার), ৫/১০১ (সন্দ্বীপ), ৬/১০৫ (আয়ান), ৭/১০৫ (নাসিম), ৮/১১২ (কলিমুল্লাহ), ৯/১১২ (বাট)।
১০/১৫৩ (মুস্তাফিজ)।
বাংলাদেশ বোলিং :
তাসকিন : ৪-০-৩১-০ (নো-১),
মুস্তাফিজ : ৪-০-৩৬-৪ (ও-৮),
সাইফুদ্দিন : ৪-০-১৬-১,
সাকিব : ৪-০-২৮-৩,
মাহেদি : ৪-০-১৪-১।
ফল : বাংলাদেশ ২৬ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : সাকিব আল হাসান(বাংলাদেশ)