You are here
Home > জাতীয় > বিমানের সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি প্রযুক্তি শিক্ষা রপ্ত করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বিমানের সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি প্রযুক্তি শিক্ষা রপ্ত করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সেবার গুনগত মান উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে অন্যের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং নতুন প্রযুক্তি শিক্ষা ও গ্রহণে মনোযোগী হবার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি শেখা এবং সেটাকে নিয়ে আসা এবং কার্যকর করার দিকে আমাদের আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে। যাতে আমাদের আর অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে না হয়। এতে আমাদের অনেক বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হয়।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে আরো বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং দক্ষ জনবল দ্বারা অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ার রিপ্লেসমেন্ট এবং বোয়িং ৭৮৭ এর সি-চেক কার্যক্রম বিমানই সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের বলাকা ভবনে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
অতীতে দুরাবস্থা থাকলেও বর্তমানে একটি দক্ষ এবং অত্যন্ত কার্যকর গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং ইউনিট গড়ে তোলা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সততা এবং দক্ষতার সঙ্গে যেন গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করতে পারে সেদিকে নজর দেওয়ার জন্য বিমান কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন। এ জন্য প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় লোকবল যেমন দরকার তেমনি যত দ্রুত সম্ভব ইউনিটটা তৈরি করা দরকার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সরকার প্রধান বিমান কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে বলেন, ‘গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দিকে আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা চাই আমাদের কার্গো হ্যান্ডেলিং এবং বিমান হ্যান্ডেলিং সবকিছু খুব আন্তর্জাতিক মানের হোক। যাত্রীরা যেন কস্ট না পায় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। তাহলে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করা যাবে।’ 
তিনি বলেন, আমাদের কাস্টমস সিস্টেমটাও সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করতে হবে। কারণ, মানুষ যখন বিদেশ থেকে আসে, হয়তো কিছু পণ্য ক্রয় করে নিয়ে আসতে চায়। কাজেই তারা যেন কোন প্রকার হয়রানির শিকার না হয। যদি পুরো ডিজিটালাইজড হয়ে যায় তাহলে খুব সহজেই যাত্রীসেবা দেয়া সম্ভব হবে। সে বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে।
বিমানের আধুনিকায়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেনও বক্তৃতা করেন। বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ বিমানের অতীত এবং বর্তমান কর্মকান্ড নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারী পরিবেশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রায় এক কোটির মতো প্রবাসী আছে। তারা বিভিন্ন সময়ে ছুটিতে আসেন।তারা এসে যেন বিমান বন্দরে হয়রানির শিকার না হন। তাদের যথাযথ সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে নতুন টার্মিনাল ভবনটি হয়ে গেলে আমাদের বিমানের দক্ষতা আরো বাড়বে। এই করোনা মহামারির মধ্যেও এর কাজ বন্ধ হয়নি, অব্যাহত রয়েছে। তা ছাড়া একেবারে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন নতুন র‌্যাডার স্থাপন করার পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। যেটা আমাদের আকাশ সীমায় চলাচলকারী সকল বিমানের জন্য সুবিধাজনক এবং লাভজনক হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আগামী মার্চ ২০২২-এর প্রথম সপ্তাহ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিশ্বনন্দিত এয়ারলাইন্স সেবা প্রযুক্তি তথা পিএসএস (প্যাসেঞ্জার সার্ভিস সিস্টেম) এর মাধ্যমে অনলাইন টিকেটিং, রিজারভেশন, বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পূর্বে চেক-ইনসহ অত্যাধুনিক সেবা গ্রহণের পথ উন্মোচন করতে যাচ্ছে। এতে আমাদের সুনাম বাড়বে। 
বাংলাদেশ বিমানের রুট আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল রুটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়ায় আমাদের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রক্ষা এবং যোগাযোগ সম্প্রসারণের অনেক সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা বৃদ্ধির বিষয়েও গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিবেশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ আরো বাড়ানো দরকার। ঢাকা-মালদ্বীপ বেসরকারিভাবে ফ্লাইট চালু হয়েছে। বিমানও যেন ফ্লাইট চালু করতে পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। 
সব জায়গার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু এবং কার্গো পরিবহনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বিমানের নিজস্ব কার্গো বোয়িং রাখার প্রয়োজনীয়তারও উল্লেখ করেন তিনি ।
শেখ হাসিনা বলেন, বিমানের নিজস্ব পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা থাকলে বিমানই লাভবান হবে। সে ক্ষেত্রে অন্তত দু’টি কার্গো বিমান ক্রয় করা একান্তভাবে জরুরী বলে আমি মনেকরি।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের সময়ে দেশের পরিবহন বিমান খাতে এক ঝাঁক অত্যাধুনিক বিমান সংযোজন এবং অতীতের সরকারগুলোর সময়কার বিমানের দুরাবস্থার কথাও তুলে ধরেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে জাতীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমানকে পরিণত করে দুর্নীতি আর লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে। তারা নিউইয়র্ক, ব্রাসেলস, প্যারিস, ফ্রাংকফুর্ট, মুম্বাই, নারিতা এবং ইয়াঙ্গুন রুটে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়। চরম লোকসান আর অব্যবস্থাপনায় বিমান মুখ থুবড়ে পড়ে। 
তখন বিমানে উইন্ডো সিটে বসলে উপর দিয়ে এসির পানি পড়তো, ছিলনা কোন বিনোদন ব্যবস্থা। যাকে প্রধানমন্ত্রী ‘জরাজীর্ণ ঝরঝরে বিমান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের যোগাযোগ বৃদ্ধিতে রাস্তাঘাট নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ করাসহ বিশ্বের সঙ্গে আকাশ পথে যোগাযোগ বাড়াতেও জাতির পিতা অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক রুটে বিমান পরিচালনার যে পদক্ষেপ নেন তাঁরই পদাংক অনুসরণ করে তাঁর সরকার প্রথমবার ’৯৬ সালে সরকারে এসেই বিমান বহরে নতুন বিমান সংযোজনের উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে বিমানের ২১টি উড়োজাহাজের মধ্যে ১৮টি উড়োজাহাজই বিমানের নিজস্ব মালিকানাধীন।
সরকার প্রধান বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে বর্তমানে ৪টি বৃহৎ পরিসরের বোয়িং-৭৭৭-৩০০-ইআর, চতুর্থ প্রজন্মের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত ৪টি ৭৮৭-৮ ও ২টি ৭৮৭-৯ সহ মোট ৬টি ড্রীমলাইনার, ৬টি ৭৩৭-৮০০ এবং ৫টি ড্যাশ-৮-৪০০ উড়োজাহাজ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ প্রজন্মের বিমান সংযুক্ত হওয়ায় যাত্রীদেরকে আকাশে ওয়াই-ফাই সুবিধাসহ বিভিন্ন প্রকার ইনফ্লাইট বিনোদন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিমানবন্দরসমূহে পাশর্র্^বর্তী শহরের যাত্রীদের আরামদায়ক গমনাগমনের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মনোরম কোচ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। 
তিনি বলেন, বিমানে উঠে বেকার বসে থাকতে হবে না। ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজও চালাতে পারবেন। সেই সুবিধাটাও আমরা করে দিয়েছি।
করোনা মহামারিতে বিমানকে প্রণোদনা হিসেবে ১ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি। সেটা তারা কাজে লাগিয়েছে, বলেন তিনি।
নতুন কেনা উড়োজাহাজগুলো যেন সুন্দরভাবে রক্ষনাবেক্ষন করা হয় সেই অনুরোধ জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, আমাদের সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট আমরা আরো উন্নত মানের করে দিচ্ছি এই কারণে, যেন আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো অর্থাৎ এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলো যেমন ভুটান, নেপাল বা ভারত আমাদের সৈয়দপুর এয়াপোর্ট, সিলেট ও চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট ব্যবহার করতে পারে। সেই সুযোগ আমাদের সৃষ্টি করে দিতে হবে।
তিনি বলেন, সিলেট বিমানবন্দরের নির্মান কাজও এগিয়ে চলছে, আমাদের চট্টগ্রামরে শাহ আমানত বিমানবন্দরেরও উন্নত করতে হবে। বরিশাল এয়ারপোর্টও চালু করা হয়েছে। সেখানকার সেবাও উন্নত করতে হবে। এটা আমাদের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 
সারাদেশে ১শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে সেখানে বিনিয়োগের জন্য বিদেশীদের আহ্বান জানানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা যদি সুন্দর হয়, দ্রুত হয় বিনিয়োগকারীরা এখানে আসবে, বিনিয়োগ করবে। সে দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।  

Similar Articles

Leave a Reply

Top