বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বর্তমানে নতুন রক্তনালী তৈরি করে অস্ত্রোপচার ছাড়াই রোগীদের পঙ্গুত্ব বরণ করা থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হচ্ছে।
আজ বিএসএমএমইউয়ের এ ব্লক মিলনায়তনে ভাসকুলার বিভাগে আয়োজিত ‘আপডেট অফ ভাসকুলার সার্জারি’ বিষয়ক প্রবন্ধে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে জানানো হয়, রক্তনালী ব্লকের কারণে পায়ের গ্যাংরিন হয়। রক্তনালীসমূহের রোগের কারণে মানুষের অঙ্গহানি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এর কারণে হাত, পা এবং আঙ্গুল আর কেটে ফেলতে হবে না। অস্ত্রোপচার ছাড়াই চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীদের অঙ্গহানি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান।
সভাপতিত্ব করেন বিশ্বদ্যালয়ের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফ উল্লাহ খান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাকিবুল হাসান। স্বাগত বক্তৃতা করেন ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের রেসিডেন্ট শিক্ষার্থী ডা. সমরেশ চন্দ্র সাহা।
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান প্রশাসন জনসাধারণের জন্য আধুনিক চিকিৎসা দিচ্ছে, যাতে রোগীদের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে না হয়।
উপাচার্য বলেন, ভাসকুলার সার্জারি বিশেষজ্ঞ সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হবে। চিকিৎসাসেবার সম্প্রসারণে স্থান বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান প্রশাসনের আমলে গবেষণাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গবেষণার জন্য সরকারের যে একশত কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে সেখান থেকে চার ভাগের এক ভাগ অর্থ পঁচিশ শতাংশ তার মানে পঁচিশ কোটি টাকা বিএসএমএমইউয়ের গবেষকরা পাবেন।
সেমিনারে জানানো হয়, রক্তনালীসমূহের রোগের কারণে মানুষের অঙ্গহানি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যে রোগীদের অপারেশন সম্ভব নয় বর্তমানে চিকিৎসার মাধ্যমে অপারেশন ছাড়াই তাদের অঙ্গ রক্ষা করা সম্ভব। রক্তনালীর ব্লকের কারণে পায়ের গ্যাংরিন হয়। বর্তমানে নতুন রক্তনালী তৈরি করে বিনা অপারেশনে চিকিৎসা করে রোগীদের পঙ্গুত্ব বরণ করা থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হচ্ছে।
এতে জানানো হয়, ভ্যারিকোস ভেইন বা আঁকাবাঁকা শিরার চিকিৎসায় লেজার থেকে শুরু করে সব ধরনের আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে এই বিভাগে। তাছাড়া আঁকাবাঁকা শিরা না কেটে আরএফএ এর মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা শিগগিরই চালু হবে। এছাড়া রক্তনালী ব্লক, এনিউরিজম, ডিভিটি, টিউমার, ম্যালফরমেশন ইত্যাদি চিকিৎসাসেবা চালু আছে। কিডনী রোগীদের ডায়ালাইসিসের জন্য ফিস্টুলা নিয়মিতভাবে করা হচ্ছে। ভেনাসজনিত পায়ের আলসার ফোর লেয়ার ব্যান্ডেজ মাধ্যমে এই ক্ষত দূর করা সম্ভব হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের আধুনিক ডুপ্লেক্স স্ক্যান ল্যাবে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১০ জন রোগীর পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়াও বহির্বিভাগে ৫০-৬০ জন রোগী নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। ছাত্রদের নিয়মিত শিক্ষাদান ছাড়াও গত ২ বছরে ৬ জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ভাসকুলার সার্জন তৈরি এই বিভাগটির সাফল্যের মধ্যে অন্যতম। দেশে একমাত্র বিএসএমএমইউতে চালু আছে ভাসকুলার সার্জারিতে বিশেষায়িত এম এস কোর্স। ভাসকুলার সার্জারি রোগীদের অপারেশন করার জন্য বিভাগটিতে আছে সুসজ্জিত ওটি। নানা সময়ে গাইনী ও সার্জারি বিভাগের বিভিন্ন অপারেশনেও ভাসকুলার সার্জনদের অংশগ্রহণ করতে হয়।