প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দৃঢ়ভাবে বলেছেন, বাংলাদেশ কখনো কোনো চাপের কাছে মাথানত করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না, বরং জনগণের শক্তিতে দেশ এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনো কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার করেনি, করবেও না। আমাদের যে আত্মবিশ্বাস আছে তা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব এবং জনগণের শক্তি নিয়েই দেশ এগিয়ে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ তাঁর কার্যালয়ের শাপলা হলে চলমান বন্যা পরিস্থিতি এবং আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন।
মানবাধিকার সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানবাধিকার আমাদের শিখাতে আসবে কারা যারা খুনীদের আশ্রয় দেয়, স্কুলে গুলি হয়, ছাত্র-ছাত্রী মারা যায়, রাস্তা ঘাটে পুলিশ মানুষকে গলায় পারিয়ে মেরে ফেলে তারা কি মানবাধিকার শেখাবে?’
তাদের উস্কানিতে আমাদের দেশের কিছু মানুষের আষ্ফালন (নাচানাচি) হবে এটা ঠিক কিন্তু আমরা আমাদের আত্মবিশ্বাস নিয়েই চলবো, জনগণের শক্তি নিয়েই চলবো, বলেন তিনি।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ সংক্রান্ত অপর একটি প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, যখন একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, জনগণের তাদের উপর এই আস্থা থাকতে হয়। নির্বাচনে তারা জয়লাভ করলে কে তাদের সরকারের প্রধান হবে-সেটা জনগণ আগে থেকেই জানতে চায়।
তিনি আরো বলেন, ‘জনগণ প্রথম থেকেই এটা বিবেচনা করে। এটা শুধু আমাদের দেশেই ঘটে না, বরং বিশ্বব্যাপীই এমনটা হয়ে থাকে। তাদের (বিএনপি) নেতা হিসেবে কে নির্বাচনে অংশ নেবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘তারা কি তাদের নেতা হিসেবে জনগণকে পলাতক (তারেক রহমান)-কে দেখাবে? তিনি তো দেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।’
তিনি বলেন, সহজেই ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেতে কত টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে!
কিভাবে একজন দ-াদেশপ্রাপ্ত আসামী ব্রিটিশ নাগরিক হল- তা বের করতে সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদি আপনারা এটা বের করতে পারেন, তবে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তাই, তারা (বিএনপি) কিভাবে নির্বাচনে অংশ নিবে এবং এক্ষেত্রে গণতন্ত্রের ভুলটা কোথায়? তাদের দল এখনো বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে- যাদের এখন আর কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়া, অবশিষ্ট রইল বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো-যেগুলো অব্যহতভাবে বিভক্ত হতে হতে ছোট থেকে আরো ছোট হয়ে গেছে এবং এখন দলগুলো কখনো ডান দিকে কখনো বা বাম দিকে ঝুঁকে যায়।
তিনি প্রশ্ন করেন, ‘তাই, আমাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কে আছে?’
তিনি একটি শক্তিশালী দল গঠন করে নির্বাচনের মাঠে নামার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আসুন নির্বাচনের ময়দানে নামি এবং জনগণকে বেছে নিতে দেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কথা স্পষ্ট। এখানে আপনারাই দেখতে পাচ্ছেন যে-আমার জন্য সেখানে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমি কখনোই এভাবে প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না।’
তিনি আরো বলেন, তিনি ১৯৯১ সালেও প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। কারণ, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ তাঁকে জাতীয় পার্টি ও জামাতের সাথে জোট বেঁধে সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার তার সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমি সেভাবে ক্ষমতায় যেতে চাই নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘তখন আমি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ক্ষমতায় যেতে পারিনি। যখন আমার কাছে সম্পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে, তখনই আমি সরকার গঠন করব। আমার দেশের উন্নয়নে একটি সরকার গঠন করার ইচ্ছে।’
তিনি ১৩ বছরের আগে দেশের দৃশ্যপট স্মরণ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে দেশের উন্নয়নের ভিত গড়ে তোলেন এবং পরে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপির আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন হয় এবং লুটপাট, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, বাংলাভাইয়ের উত্থান ঘটে। তখন জরুরি পরিস্থিতিতে (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) আসে।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, জাতির জীবন থেকে মূল্যবান আটটি বছর নষ্ট হয়।’