You are here
Home > জাতীয় > পাচঁ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে বছরে ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা আয়

পাচঁ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে বছরে ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা আয়

যুবলীগের বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমানের স্ত্রী সুমি রহমান ২০১৮-১৯ সালে তার হাঁস-মুরগীর খামারে বিনিয়োগ করেন ৫ লাখ টাকা। পরের বছরই ওই হাঁস মুরগীর খামার থেকে এক কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার ৫০০ টাকা আয় করেছেন। যা অবাস্তব ও কল্পনাপ্রসূত বলে উল্লেখ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

সুমি রহমানের বিরুদ্ধে দেওয়া অবৈধ সম্পদের মামলার চার্জশিটে এমনটাই উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান।

চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সুমি রহমান অবৈধ টাকা দিয়ে ঢাকার শুক্রাবাদে যে বাড়ি কিনেছেন, তাও অবৈধ। সুতরাং আয়কর নথিতে তিনি দুই কোটি ৯৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫৭১ টাকা আয় দেখিয়েছেন। এর মধ্যে বিয়ের উপহার দুই লাখ টাকার আয় বৈধ বিবেচনা করলে দুই কোটি ৭৩ লাখ টাকা আয়কর নথিতে প্রদর্শিত আয় যা গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ সুমি রহমান তার স্বামী কাজী আনিছুর রহমানের অবৈধ কার্যক্রমের টাকা তার ব্যক্তিগত হিসেবে স্থানান্তর করে এ সমস্ত সম্পদ কিনেছেন। সুতরাং সুমি রহমানের অবৈধ সম্পদ অর্জনে তার স্বামী কাজী আনিছুর রহমানের সহযোগিতা রয়েছে অর্থাৎ পরোক্ষভাবে কাজী আনিছুর রহমানের অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়েই মূলত সুমি এ সম্পদ অর্জন করেছেন।

চার্জশিটে বলা হয় সুমি রহমানের স্থাবর সম্পদ এক কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও অস্থাবর সম্পদ এক কোটি ২৭ লাখ ৭২ হাজার ২১৮ টাকা।  ৬০ হাজার টাকাসহ মোট নীট সম্পদ দুই কোটি ৬৩ লাখ ৬২ হাজার ২১৮ টাকা। তার গ্রহণযোগ্য আয় ২ লাখ টাকা। অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে দুই কোটি ৬১ লাখ ৬২ হাজার ২১৮ টাকার অবৈধ সম্পদ পাওয়া যায় যা তার আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এবং জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ। 

দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে আনিছুর রহমান ও তার প্রতিষ্ঠানের নামের ২৫ টি ব্যাংক হিসাব বিশ্লেষণ করে তার বিরুদ্ধে দেওয়া চার্জশিটে বলা হয়, ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আনিছুর রহমান ও তার প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট হয়েছে মোট ১২৯ কোটি ৯১ লাখ ১৭ হাজার ২১৩ টাকা। তার ২০১১-১২ করবর্ষ থেকে ২০১৯-২০ করবর্ষের নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনি এ সময় ব্যবসা, শেয়ার, ফার্মসহ নানাবিধ উপায়ে আয় করেছেন ৬ কোটি ৩৬ লাখ ৭১ হাজার ৩৬৫ টাকা। তাহলে ১২৩ কোটি ৫৪ লাখ ৪৫ হাজার ৮৪৮ টাকার সন্দেহজনক ট্রান্সজেকশন অর্থাৎ অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার অসৎ উদ্দেশ্যে তা স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

চার্জশিটে আরও বলা হয়, কাজী আনিছুরের নামে ৬ কোটি ৭৩ লাখ ৫৪ হাজার ৪৬৭ টাকা ও অস্থাবর সম্পদ ১৩ কোটি ৬৮ লাখ ২৪ হাজার ৭৫ টাকা, ব্যাংক ঋণ এক কোটি ৫২ লাখ ৭৭ হাজার ২০৭ টাকাসহ তার মোট নীট সম্পদ ১৮ কোটি ৮৯ লাখ ১৩৩৫ টাকা। কিন্তু তার গ্রহণযোগ্য আয় ৬ কোটি ৮ লাখ ১৭ হাজার ৮৬৭ টাকা এবং ওই আয়ে তার ব্যয় দুই কোটি ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬৮ টাকা। এর বিপরীতে সঞ্চয় বা সম্পদ ৩ কোটি ৯৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৯ টাকা থাকার কথা অর্থাৎ ১৪ কোটি ৯৫ লাখ ২৯ হাজার ৮৩৬ টাকার অবৈধ সম্পদ পাওয়া যায়।

১৪ কোটি ৯৫ লাখ ২৯ হাজার ৮৩৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং  ১২৩ কোটি ৫৪ লাখ ৪৫ হাজার ৮৪৮ টাকার সন্দেহজনক ট্রান্সজেকশনের জন‌্য মানিলন্ডারিংয়ে অভিযোগে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়।

১২ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকার অবৈধ সম্পদ জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলা করেন কমিশনের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। ওই দিন কাজী আনিছের স্ত্রী সুমি রহমানের বিরুদ্ধে এক কোটি ৩১ লাখ ১৬ হাজার ৫০০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগেও মামলা করা হয়।  মামলাটি তদন্ত করে গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুজনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলা দুটি চার্জশিট গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।

আনিছুর রহমান গত ৯ মার্চ ও সুমি রহমান গত বছরের ২৬ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।

Similar Articles

Leave a Reply

Top