আদালত প্রতিবেদক:অভিনেত্রী পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলায় প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন ও অমিকে মাদক মামলায় ৭ দিনের এবং গ্রেফতারকৃত তিন নারীকে তিন দিন করে রিমান্ড মন্জুর করেছে আদালত ।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসি আদালতে নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ৫ জন আসামি হাজির করে মাদক মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।অপর দিকে আসামি পক্ষ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
আদালত উভয় পক্ষের শুনানী শেষে আসামিদের জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়ে নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে সাত দিন করে এছাড়া তিন নারী লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধার ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাষ্ট্র পক্ষে শুনানী করেন মহনগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ্ আবু অপর দিকে আসামি পক্ষে শুনানী করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন, সাধারন সম্পাদক খন্দকার মো. হজরত আলী ও সিনিয়র সহ-সাধারন সম্পাদক সালাউদ্দিন ।
গত সোমবার সাভার থানায় পরীমনি ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলাটি দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর অভিযানে নামে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ১ হাজার ইয়াবা বড়ি, বিদেশি মদসহ আসামিদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। আসামিদের গ্রেপ্তারে নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মশিউর রহমান। পরে রাত ১২টার দিকে ডিবির গুলশান জোনাল টিমের উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক কুমার সিকদার বাদী হয়ে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় আসামিদের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি পুলিশ।
এছাড়া অভিনেত্রী পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাভার থানায় নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারটি গতকাল মঙ্গলবার আদালতে আসে। ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন্নাহার গ্রহণ করে আগামী ৮ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন মামলার তদন্ত কমকর্তাকে । পরীমনির লিখিত এজাহারে যা বলা হয়ছে, গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি, অমি ও বনিসহ দুটি গাড়িতে উত্তরার দিকে যান। ‘পথিমধ্যে অমি বলে বেড়িবাঁধে ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডে তার ২ মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামতো আমরা ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে গাড়ি দাঁড় করাই। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। তখন অমি ভেতরে যায় এবং অমি অনুরোধ করে এখানের পরিবেশ অনেক সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পারো ।এজাহারে আরও বলা হয়ছে, ইতোমধ্যেই আমার ছোট বোন বনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিলে আমরা ঢাকা বোট ক্লাবে প্রবেশ করে বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করি। টয়লেট হতে বের হতেই ১নং বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদেরকে ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ ১নং আসামি মদ্যপান করার জন্য জোর করেন। আমি মদ্যপান করতে না চাইলে ১নং আসামি জোর করে আমার মুখের মধ্যে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এতে আমার সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই। ১নং আসামি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করেন ও আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ১ নং আসামি উত্তেজিত হয়ে টেবিলে রাখা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারেন। তখন আমার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ১নং আসামিকে বাধা দিতে চাইলে তাকেও মারধর করে নীলাফোলা জখম করে। আমি প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিতে গেলে আমার ব্যবহৃত ফোনটি টান মেরে ফেলে দেয়।
পুনরায় ফোনটি উঠিয়ে কল দিতে চাইলে আবারও ফোনটি টেনে ফেলে দেয়। আসামি (অমি) সহ অজ্ঞাতনামা চারজন আসামি ১নং আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহায়তা করে।