You are here
Home > জাতীয় > নতুন রূপে গ্রামীণ অর্থনীতি

নতুন রূপে গ্রামীণ অর্থনীতি

ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জের বাসিন্দা মোঃ শাহনেওয়াজ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) থেকে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের মাধ্যমে তার ওমান প্রবাসী বন্ধুর চাহিদামত ১লাখ ১৫ হাজার টাকা পাঠাতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে, শাহনেওয়াজ বলেন “করোনা মহামারির মধ্যে এত দ্রুত টাকা পাঠাতে পেরেছি, যা এখনও আমার কাছে অবিশ্বাস্য।”   

তিনি বলেন, ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে টাকা পাঠানোর জন্য আমার গ্রাম থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে যেতে হতো। কোভিড -১৯ মহামারির মধ্যে তা ছিল অত্যন্ত কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু ইউডিসিতে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা প্রদান করার কারণে আমি অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে আমার বন্ধুর পরিবারকে টাকা পাঠাতে  পেরেছি।

মতিগঞ্জ ইউডিসি’র উদ্যেক্তা মোঃ সালেহ উদ্দিন ফয়সাল এর সহযোগিতা আমার কাজকে অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছে। আমার মত এই ইউনিয়নের অনেক মানুষই এখন ইউডিসি’র মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করছে।
মোঃ সালেহ উদ্দিন ফয়সাল বলেন, “এ অঞ্চলের জনগণের মধ্যে এজেন্ট ব্যাংকিং ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।”
তিনি জানান, তার সেন্টারে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবাই প্রদান করা হয় এবং এই সেন্টারের এখন প্রতিদিনের লেনদেন প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা।

এটুআই-এর ডিজিটাল এক্সেস এ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস-এর কনসালটেন্ট ইকবাল হোসেন সোহেল জানান, ইউডিসি’র নেটওয়ার্ক-এর আওতায় এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রামীণ অর্থনীতির মূল কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অর্থনীতির মূলধারায় সম্পৃক্ত হচ্ছে।

এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর আমানত সংগ্রহে এক ধরনের গতি সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের উপার্জিত টাকা দেশে পাঠাতে ধীরে ধীরে এজেন্ট ব্যাংকিং এর উপর নির্ভরশীল হচ্ছে। এতে করে তাদের পরিবার কোন ব্যাংকের শাখায় না গিয়ে সহজেই টাকা তুলতে পারছে।

তিনি জানান,  চলতি বছরের জুলাই মাসের হিসেব অনুযায়ী  সারাদেশে ৪ হাজার ৪৭০টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছে। একই সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলোতে এ সেবার মাধ্যমে প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন টাকা জমা পড়েছে এবং এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে প্রায় ১৯.৬ বিলিয়ন টাকা রেমিট্যান্স বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৩০ লাখ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এজেন্ট আউটলেটগুলোর মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছে।

ইকবাল হোসেন বলেন, গ্রামীণ এবং নি¤œবিত্ত জনগোষ্ঠী আর্থিক সেবাগুলোর জন্য বেশ অসুবিধার সম্মূখীন হতো।    ব্যাংকের নিকটবর্তী শাখাটিও গ্রাম থেকে অনেক দূরে হওয়ায় আর্থিক সেবা গ্রহণ তাদের জন্য ছিলো সময়সাপেক্ষ, কষ্টকর ও ব্যয়বহুল।
তিনি বলেন, এই সমস্য দূর করার জন্য এটুআই ডিজিটাল সেন্টার ভিত্তিক এজেন্ট ব্যাংকিং মডেল গ্রহণ করেছে। যেখানে উদ্যোক্তা একজন ব্যাংক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবা প্রদান করে। এজেন্ট নেটওয়ার্ক ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে ইউডিসি’র উদ্যেক্তারা এখন গ্রামীণ অঞ্চলের প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবা প্রদানে সক্ষম বলে তিনি উল্লেখ করেন।  

ইকবাল হোসেন জানান, এজেন্ট ব্যাংকিং এর উদ্দেশ্য হলো ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসা এবং ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন আর্থিক সেবা প্রদান করা। এটুআই এই সেবার প্রচলন করেছে নাগরিকদের সময় ও টাকা বাচাঁনোর জন্য, যাতে তারা নিকটবর্তী এজেন্ট পয়েন্ট থেকে আর্থিক সেবা পেতে পারে।

ইউডিসি বর্তমানে ১২টি ব্যাংকের সেবা প্রদান করছে। ব্যাংকগুলো হলো মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, মধুমতি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইউসিবি, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ইস্ট্রার্ন ব্যাংক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয় থেকে এবং নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং ইউএনডিপির গ্লোবাল আ্যাডমিনিস্ট্রেটর হেলেন ক্লার্ক চর কুকরি মুকরি থেকে যৌথভাবে একটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন ইনফরমেশন এবং সার্ভিস সেন্টার (ডিজিটাল সেন্টার) উদ্বোধন করেন।

ডিজিটাল সেন্টারের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে পৌরসভা ও সিটিকর্পোরেশনগুলোর সব ওয়ার্ডে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিতি ডিজিটাল সেন্টারগুলোকে বর্তমানে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) নামকরণ করা হয়। এর মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী প্রায় ২৯৪ টি সেবা পায়।

এই সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে, অনলাইন ব্যাংকিং, বিদেশে চাকুরীর জন্য আবেদন, ভ্যাকসিন রেজিট্রেশন, ইন্টারভিউ কার্ড ডাউনলোড এবং প্রিন্ট করা, সরকারি চাকুরির ফলাফল, বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি, পাসপোর্টের আবেদন, ভিসা যাচাই এবং ট্র্যাকিং, অনলাইন ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন, জন্ম সনদ, স্বাস্থ্য তথ্য, কৃষি তথ্য, বাজার তথ্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তথ্য, সকল পর্যায়ে ভর্তির তথ্য (স্কুল, বিশ^বিদ্যালয় ইত্যাদি), সরকারি চাকুরীর তথ্য, আবহাওয়ার পূর্ভাবাস/প্রাকৃতিক দুর্যোগের তথ্য, জমি সংক্রান্ত তথ্য  (রেজিট্রেশন, মিউটেশন, রেকর্ড, সার্ভে), পরিবার পরিকল্পনার তথ্য, মোবাইল ব্যাংকিং, ভোটার আইডি কার্ড এবং নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য এবং সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ডের তথ্য।

এছাড়াও জনগণ কম্পিউটার কম্পোজ, প্রিন্টিং, স্ক্যানিং এবং লেমিনেটিং, ছবি তোলা, ফটোকপি করা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং এবং ই-মেইল সেবা, ভিডিও কনফারেন্সিং, মোবাইল টেলিফোন সেবা, কর সংক্রান্ত তথ্য, আয়কর, ভ্যাট, ব্যাবসায় ও বিনোদন সংক্রান্ত তথ্য এবং সরকারি বিভিন্ন বিষয়ে সেবা পাচ্ছে।

Similar Articles

Leave a Reply

Top