You are here
Home > জাতীয় > দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলার সকল আসামী খালাস, তদন্ত কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা

দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলার সকল আসামী খালাস, তদন্ত কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা

রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।  

বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার এ রায় দেন।

মামলার অপর চার আসামি হলেন-  সাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিম, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন।

আদালত তার পর্যবেক্ষণ বলেন  রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের অভিযোগে হওয়া মামলায় ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সেখানে অভিযোগকারীরা স্বেচ্ছায় আসামিদের সঙ্গে মদ্যপান করেন এবং ড্যান্সে অংশ নেন,

অভিযোগকারী দুই তরুণী আসামিদের সঙ্গে স্বেচ্ছায় শয্যাসঙ্গী হন। সেখানে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হলেও জোরপূর্বক ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।  

আদালত পর্যবেক্ষণে আরো বলেন,৭২ ঘণ্টার বেশি সময় অতিবাহিত হলে ধর্ষণ মামলা যেন না নেওয়া হয়। ধর্ষণের অভিযোগে হওয়া মামলায় ধর্ষণের কোনো আলামত না থাকার পরও চার্জশিট দাখিল করে আদালতের সময় নষ্ট করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তাই এমন প্রতিবেদন দেওয়ায় আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা করেছেন।

আদালত বলেন, একটা পার্টিতে অংশ নিয়ে ইচ্ছাকৃত শয্যাসঙ্গী হলেন, তার ৩৪ দিন পর মামলা হলো এবং ৩৮ দিন পর মেডিক্যাল হলো। মেডিক্যাল রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুই তরুণীর বয়স ২২/২৩ বছর, তারা নিয়মিত যৌনসম্পর্ক করতেন।  

সাক্ষী ও জবানবন্দিতেও তারা নিজেদের অবিবাহিত দাবি করলেও তারা নিয়মিত বয়ফেরেন্ডের সাথে শারীরিক সম্পর্কের বিষয় উঠে আসে। ঘটনার কোনো সাক্ষী নেই, আলামত নেই, তরুণীদের কাপড়ে কোনো পুরুষের সিমেন্স পাওয়া যায়নি। তথাপি চার্জশিট দিয়ে মামলাটি বিচারের জন্য পাঠানো হয়েছে। মোট ৯৪ কার্যদিবসের বিচারে আদালতের অনেক সময় নষ্ট হয়েছে।

যে কারণে প্রকৃত ধর্ষণের মামলার বিচার ব্যাহত হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে আদালতের এই সময় নষ্ট করেছেন।

গত ৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ১২ অক্টোবর ধার্য করেন। ওই দিন জামিনে থাকা এ মামলার পাঁচ আসামির জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। রায় প্রস্তুত না হওয়ায় তা পিছিয়ে ২৭ অক্টোবর ধার্য করেন আদালত। কিন্তু প্রবীন আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদারের মৃত্যুতে নিম্ন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তা পিছিয়ে ১১ নভেম্বর ধার্য করা হয়।

এর আগে গত ২৯ আগস্ট আত্মপক্ষ শুনানিতে সাফাতসহ ৫ আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন।

উল্লেখ্য, মামলার অভিযোগ থেকে যানাযায়, ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ জন্মদিনের কথা বলে বাদী ও তার বান্ধবীকে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ডেকে নিয়ে যান, বাদী অন্য কোন অতিথি না দেখে এবং পরিবেশ ভালো না লাগায় তারা চলে যেতে চান। এই সময় আসামিরা বাদীর বন্ধু শাহরিয়ারের কাছ তাদের গাড়ির চাবি  জোর করে নিয়ে নেন। রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী এবং তার বান্ধবী ও বন্ধুকে আটকে রাখে। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে।  বাদী ও তার বান্ধবীকে জোর করে একটি কক্ষে নিয়ে যায় আসামিরা। বাদীকে সাফাত আহমেদ ও তার বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করে।

বাদীকে নাঈম আশরাফ খুব মারধর করেন। ধর্ষণ করার সময় সাফাত এর গাড়ি চালক ভিডিও ধারণ করেন।

লোকলজ্জা এবং মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে উঠে পরে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আলোচনা করে ২০১৭ সালের ৬ মে পাঁচজনের বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করা হয়।

একই বছরের ৭ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটে আসামি সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় সরাসরি ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়।সাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের সহযোগিতার করার অভিযোগ আনা হয়। ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই ট্রাইব্যুনাল আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে অভিযোগ গঠন করেন।  মামলাটিতে ২২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে শেষ গতকাল রায় দেন।

Similar Articles

Leave a Reply

Top