প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠিত হওয়া উচিত। তিনি আজ আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ‘জনগণের সমর্থন নিয়ে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠিত হওয়া উচিত। তবে এরজন্য অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন, যেখানে ভোটাররা নির্বিঘেœ নিজ পছন্দ অনুযায়ী ভোট দিতে পারবেন। আগামী সংসদ নির্বাচন সফল করতে আমরা আপনাদের সবার সহায়তা চাই, একসঙ্গে কাজ করতে চাই।’
সংলাপে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ মুকিতের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। অন্যদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি বলেন, নির্বাচনে সব দলকে অংশ নেয়ার আহ্বান করে যাব, কিন্ত নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়েই অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন হেলাফেলার বিষয় নয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি শাসকদল নির্বাচিত হবে ও তারা সরকার গঠন করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, কোনো রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে আমরা তাদের বাধ্য করতে পারব না। তবে, আমরা বারবার তাদের অনুরোধ করে যাব। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে আমরা আপনাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করছি।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার- এরকম প্রস্তাবনা অন্যান্য দল থেকেও এসেছে। এগুলো আসলে রাজনৈতিক বিষয়। আপনাদের দাবিগুলো সরকারকে জানানো হবে। আপনাদের দাবির যৌক্তিকতা কতটুকু তা সরকারকে বুঝতে দিতে হবে।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, প্রথমবারের মতো কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করেছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ ব্যবস্থা আরও বিস্তৃত হবে। আমরা মনে করি, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের যে প্রস্তাব আপনারা দিয়েছেন, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। তবে, আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব।তিনি বলেন, সংলাপে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বলছে, নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা, অর্থশক্তি, পেশি শক্তি প্রয়োগ করা হয়। এ বিষয়টি নিয়ে আপনাদের সবার বক্তব্যে ঐকমত্য আছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখব। আসলে পেশিশক্তি, অর্থশক্তি গোপনে প্রয়োগ করা হয়। যদি প্রকাশ্যে এ ধরণের আচরণ আমাদের কিংবা আপনাদের চোখে পড়ে, তাহলে তা নিয়ন্ত্রণে আপনারা আমাদের সাহায্য করবেন। সিইসি বলেন, শেষ সময়ে পোলিং স্টেশনগুলোতে নির্বাচন কমিশন একা কাজ করবে না। সে সময় জেলা প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এমনকি সেনাবাহিনীর অংশ নেয়ার দরকার হতে পারে। সিইসি বলেন, ইভিএম নিয়ে আপনাদের মধ্যে সংশয় ও আস্থাহীনতা রয়েছে তা আমরা জানি। আমাদের পক্ষ থেকেও ইভিএম নিয়ে চার মাস ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আলাপ-আলোচনা করা হচ্ছে। এর সুবিধা-অসুবিধাগুলো আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি। আমরা অন্ধভাবে ইভিএম নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।
এরপর গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান মো. জাকির হুসেনের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। এ সময় সিইসি বলেন, ‘কোনো অপশক্তির চাপে মাথা নত না করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। সংসদ নির্বাচন একটি কঠিন ও ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। সবার আন্তরিক ও সমন্বিত প্রয়াস থাকলে এমন কঠিন কর্মযজ্ঞ সাধন অসাধ্য নয়।’
এদিকে আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের-জাসদ এর সাথে আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ইসির সংলাপ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে তরিকত ফেডারেশন ও জাতীয় জাসদ আজকের সংলাপে অংশ নিতে পারবে না বলে ইসিকে জানিয়েছে। দল দুটি ইসির কাছে পরবর্তী সময় চেয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে ইসি তরিকত ফেডারেশনকে ২৮ জুলাই এবং জাসদকে ২৪ জুলাই সময় দিয়েছে।
আগামী ২৪ জুলাই (রোববার) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, দুপুর ১২ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জাতীয় পার্টি- জেপি, আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি, বিকেল ৪টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশকে সংলাপের সময় নির্ধারন করে দিয়েছে ইসি।