চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তাদের জন্য অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আনুপাতিক হারে বাড়ানো হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস আজ সন্ধ্যায় চা বাগান মালিকদের সাথে বৈঠক থেকে বের হয়ে এই তথ্য প্রকাশ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের পক্ষে দৈনিক মজুরি নির্ধারণ করেছেন।
তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের নিজ নিজ কাজে ফিরে যাওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
চা বাগান মালিক সমিতির সভাপতি শাহ আলমের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ১৩টি চা বাগানের মালিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
মূখ্য সচিব বলেন, ‘সব কিছু আলোচনা করে যা হয়েছে সেটা হচ্ছে শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী দৈনিক মজুরি নির্ধারণ করে দিয়েছেন ১৭০ টাকা ।’
তিনি বলেন, শ্রমিকপক্ষের আশা ছিল প্রধানমন্ত্রী তাদের পক্ষ হয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে মজুরি বাড়াবেন, সেটি উনি করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী সবাইকে কাজে যোগদান করতে বলেছেন। আগামীকাল থেকে যেন সবাই কাজে যোগ দেয়।
‘শিগরিই প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করবেন,’ বলেও তিনি জানান।
নতুন দৈনিক মজুরি অনুযায়ী চা শ্রমিকদের অন্যান্য সুবিধা আনুপাতিক হারে বাড়বে জানিয়ে আহমদ কায়কাউস বলেন, এখানে ব্যাখ্যা করা দরকার- চা শিল্পে কিন্তু শ্রমিকদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হয়, যেটা মালিক পক্ষ বহন করে। সেক্ষেত্রে সেটা আনুপাতিক হারে বেড়ে যাবে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যেমন নগদ মজুরী ১৭০ টাকার হয়েছে তার সঙ্গে হবে প্লাকিং বোনাস আর কারাখানা অধিকার কাজের আয় সেটা আনুপাতিক হারে বাড়বে। বার্ষিক ছুটি ভাতা সেটাও কিন্তু আনুপাতিক হারে বাড়বে, বেতনসহ উৎসব ছুটি আনুপাতিক হারে বাড়বে। অসুস্থ জনিত ছুটি সেটাও বাড়বে আনুপাতিক হারে। এর সব কিছুতেই টাকা দেওয়া হয় বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগ কর্তার চাঁদা, কাজে উপস্থিতি অনুযায়ী বার্ষিক উৎসব ভাতা সেটাও আনুপাতিক হারে বাড়বে। এছাড়াও আরও রয়েছে ভর্তুকি মূল্যে রেশন দেয়, যেটা ২৮ টাকা করে কিনে, দুই টাকায় দেয় শ্রমিকদের।
প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব বলেন, চিকিৎসা সুবিধা, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের পেনশন। চা শ্রমিক পোষ্যদের শিক্ষা বাবদ ব্যয়, রক্ষাবেক্ষণ এবং অন্যান্য ব্যয় এই সবকিছু মিলিয়ে যেটা পড়ে সেটার হিসাব এখনো তাৎক্ষনিক করা সম্ভব হয়নি।
‘তবে দেখা যাচ্ছে সেটা হয়তো সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা দৈনিক পড়বে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সূচনা বক্তব্যে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন এবং নাগরিকত্ব নেই এমন শ্রমিকদের নাগরিকত্ব প্রদান করেন।
তিনি চা বাগানের শ্রমিকদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ’৯৬ থেকে ২০০১ শাসনামলে তিনি চা শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাটসহ দেশের অন্যান্য স্থানে চা বাগান সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (চা শ্রমিক) খুব কঠোর পরিশ্রম করে এবং মালিকরা উপার্জন করে, তাদের সুস্থতার দেখাশোনা করা সকলের দায়িত্ব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সবাই ক্ষতিগ্রস্থ, তবে এই অংশের মানুষ যারা খুব পরিশ্রম করে, তাদের সঠিকভাবে যতœ নিতে হবে।
১২০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে দৈনিক মজুরি ৩শ’ টাকা করার দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন চা বাগানের শ্রমিকেরা। সেদিন থেকে চার দিন পর্যন্ত দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এরপর গত ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুরোদমে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন।