রাজধানীর গুলশানের ৫৯ নম্বর সড়কের ১৬ নম্বর বাসার দ্বিতীয় তলার ২০৩ নম্বর ফ্ল্যাটে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মদ রয়েছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেই ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়েছিল গুলশানা থানা পুলিশের একটি দল। উদ্ধার করা হয় প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা মূল্যমানের মাদকদ্রব্য। কিন্তু বাসা থেকে মদ উদ্ধার করা হলেও এজাহারে বলা হয়েছে ছাদের কথা। অথচ এজাহারে যাকে সাক্ষী করা হয়েছে তিনিও স্বীকার করেছেন ২০৩ নম্বর ফ্ল্যাট থেকেউ মদ উদ্ধার করা হয়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৬ নভেম্বর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুলশানের ৫৯ নম্বর সড়কের ১৬ নম্বর বাসার ২০৩ নম্বর ফ্ল্যাটটি একজন শ্রীলঙ্কান নাগরিকের ভাড়া নেওয়া। তার নাম দিশান করুনারতে। তিনি বেস্ট সেলার নামে একটি ডেনিশ প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ। চাকরীর আড়ালে তিনি অবৈধ মদের ব্যবসাও করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ নভেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক এসআই আরিফুজ্জামান অফিসারদের নিয়ে ওই বাসায় অভিযান চালান। এসময় ২৩ বোতল বিদেশী মদ ও সাত ক্যান বিয়ার উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে তিনি গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৯। মামলায় তিনি ঘটনাস্থল পরিবর্তন করে বাসার ছাদ থেকে অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধারের কথা উল্লেখ করেন। মামলার আসামীও করা হয় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে। ওই মামলার এজাহারে একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিন জনকে স্বাক্ষী করা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখিত একজন সাক্ষী শ্রীলঙ্কান নাগরিকের বাবুর্চি হিসেবে কাজ করেন। তার নাম সঙ্গীত কামাখ। তিনি জানান, পুলিশ তার বসের বাসায় অভিযান চালিয়েছিল। তার বস বিদেশী অতিথিদের জন্য মদ এনেছিলেন। তাদের অফিসে প্রায়ই বিদেশী ক্রেতারা আসেন। তাদেরকে মদের যোগান দেন তার বস। পুলিশের অভিযান চালিয়ে মদগুলো নিয়ে যায়। তাদের অফিসের লোকজন পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির সুরাহা করে।
তবে অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধারে নেতৃত্ব দেওয়া গুলশান থানার এসআই আরিফুজ্জামান বলেন, সাক্ষী কেন বাসার কথা বললো তা তার জানা নেই। বাসার ছাদ থেকে মদ উদ্ধার করা হয়েছে। মদগুলো কে রেখেছে তা সনাক্ত করতে না পারার কারণে অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে হেফাজত থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও দুরের কোনও জায়গা থেকে উদ্ধারজনিত ফাঁক-ফোঁকর রয়েছে। কারো হেফাজত বা শরীরের কোনও স্থান বা ব্যক্তির নিয়ন্ত্রতাধীন জায়গা থেকে মাদক উদ্ধার করা হলে ওই ব্যক্তি আইনতভাবে দন্ডনীয় হবেন। কিন্তু দুরবর্তী স্থান বা অন্য কোথাও থেকে কোনও ব্যক্তির মালিকানাধীন মাদক উদ্ধার করা হলে আদালত থেকে তিনি ‘নিজের নয়’ বলে আইনী সুবিধা নিতে পারবেন। একারণে অনেক সময় অবৈধ অর্থের বিনিময়ে এজাহারে ঘটনাস্থল ভিন্ন দেখানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুলশানের শ্রীলঙ্কান ওই নাগরিকের বাসায় অভিযান চালিয়ে মাদক উদ্ধার করা হলেও পরে মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে তাকে মামলার আসামী করা হয়নি। এমনকি মামলা থেকে তাকে বাঁচাতে ঘটনাস্থলও ভিন্ন দেখানো হয়েছে। বিদেশী নাগরিক হওয়ার সুযোগে তিনি শুল্কমূক্ত মদ ক্রয়ের সুবিধা নেন। সেই মদ বিদেশী নাগরিকদের কাছে বিক্রি করেন। অবৈধভাবে এই মাদক কেনাবেচা করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দন্ডনীয় অপরাধ।
আলোচিত এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাকির হাসান সৌরভ জানান, মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। অবৈধ মদগুলোর মালিক কে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। বাসার ছাদ না বাসার ভেতর থেকে উদ্ধার হয়েছে সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। তবে সাক্ষীরা তার কাছে বাসার ছাদ থেকে উদ্ধারের কথা বলেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এদিকে অবৈধ মাদক কারবারের অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে একাধিকবার শ্রীলঙ্কান নাগরিক দিশান করুণারতের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ করে প্রশ্ন পাঠানো হলেও তিনি কোনও উত্তর দেননি।