You are here
Home > জাতীয় > এশিয়া-প্যাসিফিক দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহযোগিতা জোরদারে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

এশিয়া-প্যাসিফিক দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহযোগিতা জোরদারে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা এবং উচ্চ প্রযুক্তির হস্তান্তর ও বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তিনি বলেন. ‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে কৃষি গবেষণা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩৬ তম আঞ্চলিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর পেশকৃত তিনটি সুপারিশের মধ্যে প্রথম সুপারিশে এ কথা বলেন।
তিনি তাঁর দ্বিতীয় পয়েন্টে বলেছেন, জৈব-প্রযুক্তি, ন্যানো প্রযুক্তি, এবং রোবোটিক্সের মতো প্রযুক্তি কৃষি খাতে উচ্চ প্রযুক্তির হস্তান্তর ও বিনিময়ের মাধ্যমে এ অঞ্চলের ফাওর’ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে জোরদার করতে হবে।
চূড়ান্ত পয়েন্টে তিনি আরো বলেন: ‘যেহেতু আধুনিক কৃষির জন্য প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন সেজন্য কৃষি খাতে অর্থায়ন ও সহায়তার জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা যেতে পারে।’
বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো আঞ্চলিক ভার্চুয়াল হাই-ব্রিড ইভেন্ট আয়োজন করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাসভবন থেকে ভাচ্যুয়ালি এতে যোগ দেন।
তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারি অন্যান্য খাতের মতো কৃষি খাতেও প্রভাব ফেলেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০২০ সালে মহামারির প্রাথমিক পর্যায়ে উৎপাদক এবং ভোক্তা উভয়ের মধ্যে সরবরাহের শৃঙ্খলা ব্যাহত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তবে, আমাদের সময়োপযোগী এবং কার্যকর পদক্ষেপ দ্রুত এ খাতকে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করেছে। আমরা খাদ্য উৎপাদন ও কৃষি উপকরণ সরবরাহ যাতে বাধাগ্রস্থ না হয় সেজন্য যান্ত্রিকীকরণসহ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, কভিড-১৯ মহামারির উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মানুষ যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে ছিল এবং কীভাবে মানব জাতি একসাথে কাজ করে এই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে তাও এই মহামারি শিখিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা অবশ্যই মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৩০৫ দশমিক ৭ মিলিয়ন মানুষ এখনও ক্ষুধায় ভুগছেন। আমরা সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে তাদের জন্য সহজে খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি।’
কৃষিমন্ত্রী ড.মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে সম্মেলনে ফাও মহাপরিচালক কিউ দংইউ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম  রেজাউল করিম বক্তৃতা করেন।

বাংলাদেশের কৃষি খাতের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও দেশে জিডিপিতে কৃষি খাতের আপেক্ষিক গুরুত্ব হ্রাস পাচ্ছে, কিন্তু নিরঙ্কুশ অবদান কমেনি, বরং বেড়েছে। ২০০৫-০৬ থেকে কৃষি জিডিপি ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, এর ভাগ কমে যাওয়া সত্ত্বেও কৃষি এখনও কর্মসংস্থান এর প্রধান উৎস, শ্রম শক্তির ৪০ শতাংশের জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে এই খাতে।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, বর্তমানে প্রায় ২২ দশমিক ৭ মিলিয়ন মানুষ যার মধ্যে ৪৫ শতাংশ নারী সরাসরি কৃষি খাতে নিযুক্ত।
তিনি বলেন, এখন অনেক কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প মৌলিক কাঁচামালের জন্য সম্পূর্ণরুপে কৃষির উপর নির্ভরশীল। যেমন রাইস মিলিং চিনি, চা, ফলের রস, মশলা, ভোজ্যতেল, তামাক, পাটের বস্ত্র, সুতি বস্ত্র, স্টার্চ এবং আরো অন্যান্য।
শেখ হাসিনা বলেন, এইভাবে কৃষি এখনও বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড।
বাংলাদেশ গত ১৩ বছরে চাল, শাকসবজি, ফল, মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর দেশ ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে এবং বছরে প্রায় ৩৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে পাট ও স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ২য়, ধান ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয় এবং চা উৎপাদনে চতুর্থ স্থানের পাশাপাশি ১১টি ইলিশ মাছ উৎপাদনকারি দেশের মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সরকার প্রদত্ত প্রণোদনা এবং ধারাবাহিক নীতি সহায়তার কারণে এই অর্জনগুলো সম্ভব হয়েছে। সেই সাথে রয়েছে আমাদের কর্মরত কৃষকদের কঠোর প্রচেষ্টা।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, উদ্যোক্তারাও একটি সমৃদ্ধ বেসরকারি খাত তৈরি করেছে যেখানে কৃষি ক্রমবর্ধমান এবং প্রসারিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ সব সাফল্য সত্ত্বেও আমরা বুঝতে পারি যে, আমাদের প্রকৃত অর্থে খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তার জন্য আরও কিছু করতে হবে। এর কারণ, এসব খাত গুলোতে প্রকৃতি এবং জলবায়ু সম্পর্কিত অস্বাভাবিকতা বিদ্যমান ।’
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম উল্লেখ করে
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন টেকসই কৃষির জন্যও বড় হুমকি।
সরকার প্রধান বলেন, ‘তারপরও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো প্রতিরোধের জন্য আমরা আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে বিভিন্ন অভিযোজন এবং প্রশমন বাস্তবায়ন করছি।’
বাংলাদেশও জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ এবং ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানীরা বন্যা, খরা-প্রতিরোধী এবং লবণাক্ত সহনশীল প্রযুক্তি তৈরি করেছেন, যাতে বিভিন্ন শস্যের জাত গুলো সেই কঠিন পরিবেশে জন্মানো যেতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অস্তিত্ব কৃষি, বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তাই আমাদের উচ্চ-মূল্যের খাদ্য এবং নি¤œ-মূল্যের খাবারে মূল্য সংযোজন প্রক্রিয়াকরনের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য আমরা আধুনিক কৃষি প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করছি। যেমন যান্ত্রিকীকরণ, ভাসমান কৃষি, ছাদবাগান, হাইড্রোপনিক এবং এরোপনিক চাষ এবং সমন্বিত চাষ।’
বাংলাদেশের সমাজে কৃষকরা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমনকি দশক আগেও ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তাদের সহজ প্রবেশাধিকার ছিলনা।

তিনি বলেন, প্রথম মেয়াদে তাঁর সরকার কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণ করেছে এবং সহজে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন প্রায় ২০ মিলিয়ন কৃষক এই ধরনের কার্ডের মাধ্যমে কৃষি উপকরণের জন্য আর্থিক প্রণোদনা পাচ্ছে এবং কৃষি ঋণ সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হচ্ছে। এমনকি বর্গাচাষীরাও জামানত বিহীন কৃষি ঋণ পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, তাঁর সরকার কৃষকদের সক্ষম করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে।
কৃষকরা এখন ‘কৃষি বাতায়ন- এগ্রিকালচারাল উইন্ডোজ’ সম্পর্কিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে কৃষি সম্পর্কিত তথ্যাদি পেতে পারেন। সারাদেশে এখন ৪৯৯টি কৃষি তথ্য এবং যোগাযোগ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার কৃষির উন্নয়ন, এবং কৃষকদের কল্যাণের জন্য দূরদর্শী নীতি ও আইন প্রণয়ন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৮, জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতি ২০২০ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ২০৩০ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। 
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষকদের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষে ‘সবুজ বিপ্লবের’ ডাক দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালনকালে বঙ্গবন্ধু খাদ্যে স্বয়ংক্রিয়তা অর্জন এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুর্ণগঠনে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
‘আসুন আমরা বিশ্বশান্তি নিরাপত্তা এবং মানবতার কল্যাণের জন্য একসাথে এমন একটি বিশ্ব গড়ে তুলি যা দারিদ্র্য, ক্ষুধা, যুদ্ধ এবং মানুষের দুর্ভোগ নির্মূল করতে পারে।’ ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের ২৯ তম অধিবেশনে জাতির পিতার দেয়া ভাষণের এই উদ্ধৃতি তুলে ধরেন তিনি। 
প্রধানমন্ত্রী ফাও’র এশিয়া এবং প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩৬ তম আঞ্চলিক সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

Similar Articles

Leave a Reply

Top