![](https://bangla.thenewstimesbd.com/wordpress/wp-content/uploads/2021/12/Student-Dinbodolbd-2112010424.jpg)
এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে কাল বৃহস্পতিবার নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলন কর্মসূচি সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কাল দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সীমিত কর্মসূচি পালন করবেন। এই সময় তাঁরা সড়কের এক পাশে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করবেন, যাতে যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আজ বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বেলা একটার দিকে তাঁরা একটি মিছিল নিয়ে রামপুরা ব্রিজ থেকে রামপুরা বাজার পর্যন্ত গিয়ে ঘুরে আসেন। রামপুরা ব্রিজ এলাকায় ফিরে তাঁরা কালকের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তাঁরা আজকের মতো কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করেন।
গত ১৮ নভেম্বর বাসে অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ২৪ নভেম্বর গাড়িচাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর পর তা রূপ নেয় নিরাপদ সড়কের ৯ দফা দাবির আন্দোলনে। এর মধ্যে সোমবার রাতে রামপুরায় বাসের চাপায় নিহত হয় এসএসসির ফলপ্রত্যাশী মাইনুদ্দিন ইসলাম।
শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীতে বাসে অর্ধেক ভাড়ার দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয় পরিবহন মালিক সমিতি। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, নিরাপদ সড়কের জন্য তাঁদের দাবিগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করা। বাকি দাবিগুলো না মানা পর্যন্ত তাঁরা রাজপথ ছাড়বেন না। আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এ ছাড়া অর্ধেক ভাড়ার যে ঘোষণা, সেটা কেবল রাজধানীর জন্য। সারা দেশে কার্যকর করার দাবিও রয়েছে। শিক্ষার্থীদের নতুন দাবিগুলো হলো—
১.
সড়কে নির্মম কাঠামোগত হত্যার শিকার নাঈম ও মাইনুদ্দিনের হত্যার বিচার করতে হবে। তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুলিস্তান ও রামপুরা ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় পথচারী পারাপারের জন্য পদচারী-সেতু নির্মাণ করতে হবে।
২. সারা দেশে সব গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। হাফ পাসের জন্য কোনো সময় বা দিন নির্ধারণ করে দেওয়া যাবে না। বর্ধিত বাসভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে। সব রুটে বিআরটিসির বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
৩. গণপরিবহনে ছাত্রছাত্রী এবং নারীদের অবাধ যাত্রা ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন চালককে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. সব রাস্তায় ট্রাফিক লাইট, জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করাসহ জনবহুল রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬. বাসগুলোর মধ্যে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বন্ধে এক রুটে এক বাস এবং দৈনিক আয় সব পরিবহনমালিকের মধ্যে তাঁদের অংশ অনুয়ায়ী সমানভাবে বণ্টন করার নিয়ম চালু করতে হবে।
৭. শ্রমিকদের নিয়োগ ও পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। চুক্তি ভিত্তিতে বাস দেওয়ার বদলে টিকিট ও কাউন্টারের ভিত্তিতে গোটা পরিবহনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. গাড়িচালকের কর্মঘণ্টা একনাগাড়ে ছয় ঘণ্টার বেশি হওয়া যাবে না। প্রতিটি বাসে দুজন চালক ও দুজন সহকারী রাখতে হবে। পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। পরিবহনশ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. যাত্রী-পরিবহনশ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংস্কার করতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
১০. ট্রাক, ময়লার গাড়িসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে।
১১. মাদকাসক্তি নিরসনে গোটা সমাজে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চালক-সহকারীদের জন্য নিয়মিত ডোপ টেস্টের ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।