আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনায় যাবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, একটা কথাও হবে না যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করবে।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ যে কথা বলে তারা তা রাখে না। এটা হলো তাদের চরিত্র। জনগণের সঙ্গে তারা প্রথম থেকে প্রতারণা করছে। স্বাধীনতার পর থেকেই তারা প্রতারক। বাংলাদেশ শ্মশান কেন পোস্টার লাগিয়ে—চাল-ডালের দাম কমিয়ে স্বর্গরাজ্যের বাস করার ঘোষণা দিয়েছিল। পরে দেখা গেল তারাই সবচেয়ে বেশি নিপীড়নমূলক শাসন চালিয়ে জনগণের সবচেয়ে বড় দুর্বিপাক সৃষ্টি করল। দুর্ভিক্ষ হলো, মানুষ মারা গেল। জনগণের যে অধিকার ৫ বছরে ১ দিন একটা ভোট দিয়ে তার সরকার গঠন করার অধিকার তারা কেড়ে নিলো।
আজকে দেখা যাচ্ছে, একইভাবে আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিচ্ছে। ভোট দিতে যায় না মানুষ, ভোট দিতে পারে না। পরবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের কথা খুব পরিষ্কার। আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। এই সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে আমরা নির্বাচনে যাব না, বলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, এই অনির্বাচিত সরকার আবারও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য এখন থেকেই তারা সন্ত্রাস আরম্ভ করে দিয়েছে। ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন তার বাড়ি দাউদকান্দিতে গিয়েছিলেন। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি তার বাড়িতে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। এরপর তিতাসে দাওয়াতে যাওয়ার উদ্দেশে গেটের বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা লাঠিসোটা-ইটপাটকেল নিয়ে মোশাররফ হোসেন ও নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। বৃষ্টির মতো তারা ইট মারতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
তিনি বলেন, ড. মোশাররফের ওপর হামলার ঘটনাকে আমরা মনে করি দলের ওপর হামলা। এটা কোনোভাবে আমরা খাটো করে দেখতে পারি না। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এই হামলা করে প্রমাণ করেছে তাদের চরিত্রের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি, বিএনপি তথা ভিন্ন মতকে দমন-নির্মূল করার জন্য তারা পুরোপুরি চরম সন্ত্রাস শুরু করেছে। এই সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে তারা স্বৈরাচারী-ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
এ সময় দেশের কোথায় কোথায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে সেই তথ্য তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি আরও বলেন, হামলার ঘটনাগুলো প্রমাণ করছে তাদের চরিত্র বদলায়নি। আগের মতোই তারা সন্ত্রাসী হামলা করে, ভয় দেখিয়ে বিরোধী দলকে তারা রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়। তাদের লক্ষ্য একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারা সন্ত্রাস, ভয়-ভীতির আশ্রয় নিয়ে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। বিভিন্ন আইন যেগুলো তৈরি করছে তারা, সংবাদমাধ্যম-গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য করা আইনের লক্ষ্য এই সংবাদগুলো যেন পরিবেশিত না হয়। সত্য যাতে উদঘাটিত না হয়। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে আন্তর্জাতিক যে সূচক করা হয় সেখানে বাংলাদেশ ১০ ধাপ নেমে গেছে। এর থেকে প্রমাণিত হয় বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে সম্পূর্ণভাবে একটি স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী দেশে পরিণত হতে চলেছে।
ড. মোশাররফের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি দায়ীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান ফখরুল।