করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির তীব্রতার কারণে চলতি বছরের পহেলা বৈশাখ আড়ম্বরহীন ও প্রতীকীভাবে উদযাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন কর্মর্সূচি আর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাভাষাভাষী সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের প্রাণের বাংলা বর্ষবরণ পহেলা বৈশাখ কে আবেগকে রুদ্ধ করে দিয়েছে করোনা ভাইরাস। রমনার বটমূলসহ আয়োজন নেই সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর। সারা দেশে বাংলা বর্ষবরণকে উপলক্ষে করে বৈশাখী বাণিজ্য করা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও বিপনীবিতানগুলোয় ছিল না ভিড়।
গতবছর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ভায়ালি পহেলা বৈশাখকে উদযাপন করলেও এবার তাও করা হচ্ছে না। শিল্পকলা একাডেমিতে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা থাকলেও এ দিনটিকে কেন্দ্র করে যারা মূল কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থাকেন তাদের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সেখানে কোন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। অন্যদিকে, ছায়ানটের শিল্পীবৃন্দ রমনার বটমূলে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে থাকে। করোনা ভাইরাসের দুর্যোগের কারণে এবার কোন আয়োজন করা থেকে বিরত থাকছে সংগঠনটি। বাংলাদেশ টেলিভিশনও (বিটিভি) ছায়ানটের আর্কাইভ থেকে বাংলা বর্ষবরণের গান ও ফুটেজ নিয়ে সকাল আটটায় বর্ষবরণ নিয়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়েছে।
অন্যদিকে, কোভিড-১৯ উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং লকডাউন বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪২৮ সীমিত পরিসরে প্রতীকী কর্মসূচির মাধ্যমে উদ্যাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে চারুকলা অনুষদের শিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন মুখোশ ও প্রতীক নিয়ে অনুষদ প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সংক্ষিপ্তভাবে প্রতীকী মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয়।
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রতীকী এই শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।
এই প্রতীকী মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়াসহ চারুকলা অনুষদের স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করেন।
এ উপলক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সকলকে বাংলা নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন,আবহমান কাল থেকে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেয়ার যে বর্ণিল উৎসব ও ঐতিহ্য, সেটি অসাম্প্রদায়িক, উদার ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন। নানা বিবেচনায় বাংলা-১৪২৮ গুরুত্ববহ একটি বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’র সন্ধিক্ষণে বাংলা নববর্ষের আগমন ঘটল। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে অত্যন্ত সীমিত পরিসরে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে প্রতীকী মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভূক্ত মঙ্গল শোভাযাত্রা। কিন্তু চলমান করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে এবছর পহেলা বৈশাখ উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপন করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করি যে- আগামীতে করোনা উত্তর বাংলাদেশে আগের রূপে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করতে সক্ষম হবো। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সংক্ষিপ্তভাবে প্রতীকী এই মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন করায় প্রতিমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও চারুকলা অনুষদকে ধন্যবাদ জানান।
দিবসটি কে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোন ধরনের মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গণজমায়েত হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ২১ মার্চ আন্ত:মন্ত্রণালয়ের এক সভায় বাংলা নববর্ষ ১৪২৮ উদযাপন সংক্রান্ত গৃহীত কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হয়েছে যে, কোন অবস্থাতেই জনসমাগম করা যাবে না বলে ‘বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে’ মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের জারি করা নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।