বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদ- ও ৫ জনের যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে রায় দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত আজ বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন।
সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মামলার ২২ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার আরো তিন আসামি পলাতক রয়েছে। এরপর বেলা পৌনে ১২টায় তাদের এজলাসে তোলা হয়। বেলা ১২ টায় রায় ঘোষণা শুরু করে ১২ টা ২০ মিনিটে শেষ করেন আদালত। রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়েন আদালত।
রায়ে আদালত আবরার হত্যার ঘটনাটির সূত্রপাত, পরস্পরের যোগসাজশে ও আসামিদের পরিকল্পনায় আবরারের ওপর নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন। আদালত বলেন, বিচার্য বিষয় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে সক্ষম হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এরূপ ঘটনার যেন দেশে আর পুনরাবৃত্তি না হয় এটি প্রত্যাশা করেন আদালত। আদালত বলেন, আবরারকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের অনুকম্পা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পিপি এডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল, বিশেষ পিপি আবু আব্দুল্লাহ ভূইঁয়া।
বিশেষ পিপি আবু আব্দুল্লাহ ভূইঁয়া রায়ের বিষয়ে বাসস’কে বলেন, “মামলার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানে সক্ষম হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। তিনি বলেন, রায়টি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় মাইলফলক ও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
মামলার বাদী আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। এখন দ্রুত এই রায় কার্যকর হবে, এটাই তার প্রত্যাশা।
আসামিপক্ষে আইনজীবীরা বলেন, পুরো রায় দেখে উচ্চ আদালতে তারা আপিল করবেন।
মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল (২৪), মো. অনিক সরকার ওরফে অপু (২২), মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত (২৩), ইফতি মোশাররফ সকাল (২০), মো. মনিরুজ্জামান মনির (২১), মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (২৩), মো. মাজেদুর রহমান ওরফে মাজেদ (২০), মো. মুজাহিদুর রহমান ওরফে মুজাহিদ (২১), খন্দকার তাবাকারুল ইসলাম ওরফে তানভির (২১), হোসেন মোহাম্মদ তোহা (২১), মো. শামীম বিল্লাহ (২১), মো. সাদাত ওরফে এ এস এম নাজমুস সাদাত (২১), মুনতাসির আল জেমী (২০), মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান (২২), এস এম মাহমুদ সেতু (২৪), সামসুল আরেফিন রাফাত (২১), মো. মোর্শেদ ওরফে মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (২০), এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম (২০) (পলাতক), মোহাম্মদ মোর্শেদ উজ্জামান মন্ডল প্রকাশ জিসান (২২) (পলাতক), মুজতবা রাফিদ (২১) (পলাতক)।
যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- অমিত সাহা (২১), ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (২১), মো. আকাশ হোসেন (২১), মুহতাসিম ফুয়াদ (২৩), ও মো. মোয়াজ ওরফে মোয়াজ আবু হোরায়রা (২১)।
মাত্র ৩৭ দিনে তদন্ত শেষ করে একই বছরের ১৩ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। চার্জশিটে ২৫ জনকে আসামি করা হয়।
অভিযোগপত্রে ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। ২১টি আলামত ও আটটি জব্দ তালিকা আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। চার্জশিট দাখিলের পর ২০২০ সালের ১৫ মার্চ মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ স্থানান্তরের আদেশ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়। একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।